Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মনোনয়ন বাণিজ্যে আ.লীগের তৃণমূলে ক্ষোভের আগুন সুবিধাজনক অবস্থানে বিদ্রোহীরা মেঘনার ৮ ইউনিয়ন

প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কুমিল্লা উত্তর সংবাদদাতা
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। মনোনীত ওই প্রতি প্রার্থী থেকে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে এলাকার কুখ্যাত দাগি সন্ত্রাসী, ভূমি দখলকারী, বালু মহাল দখলকারী, মামলাবাজ, খুনি, যুদ্ধাপরাধীর ছেলে, যুবদলের নেতা, দাঙ্গাÑহাঙ্গামাসহ একাধিক মামলার আসামি এবং জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ তালিকায় চিত্র নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামিও রয়েছে। এ নিয়ে মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থক ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। স্থানীয় আ.লীগ ঘরারনায় চলছে তোলপাড়। চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সর্বত্র। এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী জননেন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ দিকে তৃণমূল নেতাকর্মী, সমর্থক ভোটাররা এসব জনবিচ্ছিন্ন এবং কুখ্যাত সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক বোদ্ধারা আওয়ামী ঘরানার ভোটার সমর্থকরা ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন এসব ব্যক্তি লাখ লাখ টাকা দিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হলে এলাকার তো উন্নয়ন হবেই না বরং এলাকায় অশান্তির সৃষ্টি হবে। কারণ তারা বিজয়ী হয়ে তাদের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তোলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। তারা বেপরোয়া হয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়বে। তাতে করে এলাকার এক অরাজক পরিস্থিতির জন্ম দেবে। সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, নৌকা মার্কার প্রার্থীরা এলাকার মানুষের চোখে অপরাধী। তাদের ভোট দিয়ে পবিত্র ভোটকে কলঙ্কিত না করার জন্য সর্বস্তরের ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মেঘনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সালাম ইনকিলাবকে বলেছেন, মেঘনায় যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছে তারা বিগত দিনগুলোতে দলের বিরুদ্ধেই তাদের অবস্থান ছিল। তারা গত দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে। এমনকি আমার বিরুদ্ধের প্রার্থীর পক্ষেও তারা নির্বাচন করেছে। তারা সমাজবিরোধী সন্ত্রাসী। তারা সমাজের শত্রু দলের শত্রু। আওয়ামী লীগ থেকে যাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে এবং যারা বিদ্রোহী প্রার্থী তারা হলো- রাধানগর ইউনিয়ন থেকে আবদুল বাতেন (আওয়ামী লীগ), এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী মজিবুর বহমান। বড়কান্দা মো. মাজহারুল হক (আ.লীগ) আর বিদ্রোহী শাহ আলম। চালিভাংগা আব্দুল লতিফ (আ.লীগ), হুমায়ুন কবির বিদ্রোহী। চন্দনাপুরে আহসানউল্লাহ মাস্টার (আ.লীগ), মিলন সরকার বিদ্রোহী। গোবিন্দপুরে মাইনুদ্দিন মুন্সি তপন (আ.লীগ), আবদুল্লাহ আল বাকি শামীম বিদ্রোহী। লুটেরচর সানাউল্লাহ সিকদার (আওয়ামী লীগ), আলমগীর রহমান বিদ্রোহী। মানিকারচর মো. দনু মিয়া (আওয়ামী লীগ), হারুন-অর-রশিদ বিদ্রোহী। ভাওরখোলা ফারুক আব্বাসী (আওয়ামী লীগ), সিরাজুল ইসলাম বিদ্রোহী। বড়কান্দা ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী শাহ আলম বলেছেন, এখানে টাকার বিনিময়ে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সে এলাকার একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী এবং কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী পিচ কমিটির চেয়ারম্যান জাহের আলীর ছেলে। তার বিরুদ্ধে মেঘনা থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বহু মামলা রয়েছে। তাকে মনোনয়ন দেয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা ফুঁসে উঠেছে। রাধানগর ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রাথী মজিবুর রহমান বলেন, যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় খুন, রাহাজানিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাদেরকে মানুষ কখনই ভোট দিবে না। লুটেরচর ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী আলমগীর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী সানাউল্লাহ সিকদার এলাকার জমিদখলকারী, বালুমহাল দখলকারী এবং এলাকার কুখ্যাত একজন মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত। তাকে ভোট দিলে এলাকায় অশান্তির সৃষ্টি হবে। চন্দনপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী মিলন সরকার বলেন, মেঘনায় যে সকল প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছে তারা গত সংসদ নির্বাচনে এবং গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা কি করে দলীয় মনোনয়ন পায় তা আমার বোধগম্য নয়। গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল আল বাকি শামিম বলেছেন, ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন না দিয়ে সমাজবিরোধীদের দলীয় মনোনয়ন দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। চালিভাংগা ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রাথী হুমায়ুন কবির বলেছেন, যারা টাকার বিনিময়ে এলাকার কুখ্যাত খুনীদের দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন তারা সমাজের শত্রু ও দেশের শত্রু। মেঘনার মানুষ তাদের কোনদিন ক্ষমা করবে না। তিনি মেঘনার সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব সন্ত্রাসী প্রার্থীদের রুখে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মনোনয়ন বাণিজ্যে আ.লীগের তৃণমূলে ক্ষোভের আগুন সুবিধাজনক অবস্থানে বিদ্রোহীরা মেঘনার ৮ ইউনিয়ন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ