বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
তা এমন একটি হাকিকত যার আওয়াজ বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি দেয়াল ও দরজা হতে উত্থিত হচ্ছে যে, ধর্মে জবরদস্তি থাকতে পারে না। কিন্তু হয়তো মানুষ এ কথা জানে না যে, এ হাকিকতের ঘোষণা সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সা. জবান মোবাররক হতে উত্থিত হয়েছিল এবং এ কথাও সুস্পষ্ট যে, যে ধর্ম নিজের প্রচার ও প্রসারের জন্য শুধু কেবল দাওয়াত ও তাবলীগের পথ খোলা রেখেছে যার মাঝে তাবলীগের নিয়ম-নীতি বলে হয়েছে। যে ধর্ম জ্ঞান, পথ নির্দেশনা, দূরদৃষ্টি এবং বুদ্ধিমত্তা ও গবেষণাধর্মী বস্তুসমূহ মানুষের মাঝে ফুটিয়ে তুলতে চায় এবং প্রতিটি কদমে বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা এবং হেকমত ও মুসলিহাতের বিকাশ চায়, তা কিভাবে নিবর্তণমূলক জুলুম, অত্যাচার, নিগ্রহ ও জবরদস্তির তরিকা অবলম্বন করতে পারে? ইসলামী দর্শনে জবরদস্তির কোনো নাম-গন্ধও পরিদৃষ্ট হয় না। ইসলাম ধর্মের প্রাথমিক ধর্মীয় ভিত্তি হচ্ছে ঈমান। ঈমান হচ্ছে বিশ্বাসের নাম। দুনিয়ার কোনো শক্তি কাহারো অন্তরে জবরদস্তি দ্বারা বিশ্বাসের একটি অণু-পরমাণুও সৃষ্টি করতে পারে না। এমনকি তরবারীর তী² ধার কারো অন্তরের পর্দায় বিশ্বাসের একটি অক্ষর অঙ্কন করতে পারে না। এ কারণে আল কুরআন ঘোষণা করেছে, ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই। অবশ্যই হেদায়েত গোমরাহি থেকে পৃথক হয়ে গেছে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৩৪)। এ হলো এমন মর্যাদাপূর্ণ হাকিকত যার শিক্ষা মানুষ রাসূলুল্লাহ সা. দ্বারা লাভ করেছে। অপর এক স্থানে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘বলে দাও, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতেই আগমন করেছে। সুতরাং যে ইচ্ছা করে সে বিশ্বাস স্থাপন করুক, আর যে ইচ্ছা করে সে অস্বীকার করুক।’ (সূরা কাহাফ : রুকু ৪)।
ঈমান এবং কুফর ও দু’য়ের মাঝে কোনো একটিকে ইখতিয়ার করার ওপর কোনোরকম জবরদস্তি নেই। জ্ঞান ও দূরদৃষ্টির অধিকারী ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবেই তা গ্রহণ করবে এবং বুদ্ধিহীন লোকেরা তা হতে বঞ্চিত থাকবে। এ জন্য বারবার এ কথাটি সুস্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, রাসূলের সা. কাজ হলো আল্লাহর পয়গাম মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়া। জবরদস্তি প্রদর্শন করা নয়। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমাদের রাসূলের ওপর দায়িত্ব হলো পয়গামকে সুস্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।’ (সূরা মায়িদা : রুকু-১২)। রাসূলুল্লাহ সা. কোরাইশদের বিরুদ্ধবাদিতা অস্বীকৃতির দরুণ খুবই চিন্তান্বিত হয়ে পড়েছিলেন। আল্লাহপাক সান্তুনা দান করে ইরশাদ করলেন, ‘হে রাসূল, আপনার দায়িত্ব হচ্ছে পয়গাম পৌঁছে দেয়া’ (সূরা শো’বা : রুক-৫) কোনো জবরদস্তিমূলক প্রচার ও প্রসার করাকে ইসলামের দৃষ্টিতে একটি ঘৃণ্য হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাসূলের শাণ ও মর্যাদা এ থেকে বহু ঊর্ধ্বে অবস্থিত। ইরশাদ হচ্ছে, ‘যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করেন যে, জবরদস্তিমূলক সকল মানুষকে ঈমান আনয়নে বাধ্য করবেন, তা হলে তারা সকলেই ঈমান আনয়ন করত। তবে কি হে রাসূল, আপনিও জবরদস্তি করবেন যেন তারা ঈমান আনয়ন করে। (সূরা ইউনুস : রুকু-১০)। ইসলামে সত্যের সহযোগিতা করা এবং বাতিলকে পরাস্ত করার জন্য যুদ্ধ করা বৈধ। রাসূলুল্লাহ সা.কে বাধ্য হয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এর ফলে বিরুদ্ধাবাদীরা এই পরিণাম উপলব্ধি করেছিল যে, এই যুদ্ধ-বিগ্রহ কেবলমাত্র এ জন্য সংঘটিত হয়েছিল যে, ইসলামকে তরবারীর জোরে মানুষের মাঝে সম্প্রসারিত করা। অথচ কুরআনুল কারীমে একটি আয়াতও নেই যার মাঝে কোনো কাফিরকে জবরদস্তি মুসলমান বানানোর হুকুম দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. পবিত্র জীবনাদর্শের কোথাও এমন কোনো ঘটনা যেখানে কোনো লোককে তরবারীর জোর-জবরদস্তি করে মুসলমান বানানো হয়েছে। বরং এ সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘সে আল্লাহর কালাম শুনতে পাবে। তারপর তাকে ওই স্থানে পৌঁছে দাও যেখানে সে একান্ত নির্ভয় হবে। তা এ জন্য যে, তারা একটি মূর্খ সম্প্রদায় মাত্র।’ (সূরা তাওবাহ : রুকু-১)। একথা বলা হয়নি যে, যতক্ষণ তারা মুসলমান না হবে তাদেরকে আশ্রয় দিও না। বরং বলা হয়েছে যে, তাকে আশ্রয় দেবে, তাকে নিরাপদ স্থান পর্যন্ত পৌঁছে দেবে এবং আল্লাহ কালাম তাকে শোনাতে থাকবে, যাতে করে সে চিন্তা ও গবেষণা করার সুযোগ লাভ করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।