বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কুরআন কারীম যেভাবে বিনয়, নম্রতা, ক্ষমা, অনুকম্পা ও উপেক্ষণের শিক্ষা দান করে, তেমনিভাবে যথাস্থানে বীরত্ব, বাহাদুরি ও সাহসিকতা প্রদর্শনেরও দীক্ষা দেয়। উদাহরণত সত্য ও মিথ্যা এবং ন্যায় ও অন্যায়ের সংগ্রামের ক্ষেত্রে কুরআন মাজিদ তার অনুসারী ও মান্যকারীদের লৌহপুরুষের মতো পরিপূর্ণ বীরত্ব ও দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দান করে। এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তার সে সমস্ত বান্দাকে ভালোবাসেন, যার তার পথে কাতারবন্দী হয়ে এমনভাবে যুদ্ধ করে, যেন তার একটি সীসাঢালা প্রাচীর।’ (সূরা সফ : আয়াত ৪)। অন্য আরেক জায়গায় রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবায়ে কেরামের সে ঈমানি শক্তি ও বীরত্বের আলোচনা বিশেষ প্রীতি ও প্রশংসার ভঙ্গিতে করা হয়েছে। যখন তাদেরকে প্রভাবিত ও ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলার জন্য এ সংবাদ পৌঁছানো হলো যে, তোমাদের শত্রুপক্ষ তোমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার উদ্দেশে বিপুল আয়োজন করেছে এবং বিরাট সমরোপকরণ সংগ্রহ করেছে, তখন তারা আদৌ প্রভাবিত ও সন্ত্রস্ত হয়নি। বরং তারা তাতে করে তাদের ঈমানি শক্তি অধিকতর শাণিত হয়ে উঠে।
তারা বলে, আমাদের জন্য আমাদের আল্লাহই যথেষ্ট। এসব কিছু আমরা দেখে নেবো। সূরা আল ইমরানে ইরশাদ হয়েছে : ‘আমার সে সমস্ত ঈমানদার বান্দা যাদেরকে লোকেরা বলল, (তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য) সমস্ত লোক সমবেত হয়েছে এবং তারা বিপুল উপকরণ সংগ্রহ করে নিয়েছে। তাদের প্রতি তোমাদের ভীত হওয়া প্রয়োজন। তখন এ বিষয়টি ঈমানি অবস্থা অধিকতর দৃঢ় করে দেয় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট ও উত্তম কর্ম সম্পাদক।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৭৩)।
এ প্রসঙ্গে আরো একটি বিষয় উপলক্ষণীয় যে, মৃত্যুর ভয় কিংবা কোনো কষ্ট বা ক্ষতির আশঙ্কা এমন বিষয়, যা সাহসিকতা ও সৌর্য বীরত্বের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং মানুষকে ভীরু বানিয়ে দেয়। কুরআন মাজিদ ভীরুতার এ মূলটিকেও উপড়ে ফেলেছে। বিভিন্ন স্থানে বলে দেয়া হয়েছে যে, মৃত্যুর জন্য সময় নির্ধারিত রয়েছে। সে সময় উপস্থিত হয়ে গেলে কেউ বাঁচাতে পারে না। আর যদি সে সময় তখনো না আসে, তা হলে কেউ মারতেও পারে না।
এমনিভাবে নানা জায়গায় বলা হয়েছে, কোনো কষ্ট বা ক্ষতিসাধন করা না করা একান্তভাবেই আল্লাহর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। যতক্ষণ পর্যন্ত তার ইচ্ছা ও হুকুম না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ আমাদেরকে কষ্ট দিতে ও ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আর যখন তার পক্ষ থেকে হুকুম হবে, তখন কেউ আমাদেরকে কষ্ট ও ক্ষতি থেকে রক্ষাও করতে পারে না।
এ প্রসঙ্গেও এখানে দু’চারটি আয়াত পাঠ করে নিন। সূরা আল ইমরানে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কারো মৃত্যু আসতে পারে না আল্লাহর হুকুম ব্যতীত। (মৃত্যুর জন্য) নির্ধারিত সময় লেখা হয়ে গেছে।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৪৫)। অন্য আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘যখন তাদের মৃত্যুকাল উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন না এক মুহূর্ত পেছনে থাকতে পারবে, না এগিয়ে যেতে পারবে (ঠিক নির্ধারিত সময়ে তুলে নেয়া হবে)। (সূরা ইউনুস : আয়াত ৪৯)।
এমনিভাবে অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘কোনো বিপদই আসতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া।’ (সূরা তাগাবুন : আয়াত ১১)। সূরা তওবায় ইরশাদ হয়েছে, ‘হে রাসূল বলে দিন, কখনো আমাদের কোনো বিপদ আসতে পারে না, তা ছাড়া যা আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তিনি আমাদের মালিক। আর যারা ঈমানদার তাদের সব কাজই আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করা উচিত। (সূরা তওবাহ : আয়াত ৫১)।
লক্ষ করার বিষয় যে, যাদের অন্তরে এ শিক্ষা বদ্ধমূল হয়ে যাবে, তাদের ভীরুতার অবকাশ কোথায় থাকতে পারে এবং শৌর্য ও সাহসিকতার পথেই বা তাদের জন্য কি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।