বিজয় দিবসের কবিতা
তুমি বাংলা ছাড়ো আবদুল হাই শিকদাররক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলোআজকে যখন হাতের মুঠোয়কণ্ঠনালীর খুনপিয়াসী
বিজয়ের নানামাত্রিক দিক আছে। প্রকৃত বিজয় আসে আল্লাহর রহমতে, আল্লাহর অনুগ্রহে। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে : ‘ওয়া উখরা তুহিব্বুনাহা, নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারিব’ আর তোমাদের পছন্দনীয় আরো একটি অনুগ্রহ হচ্ছে আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়। (সুরা সাফ : আয়াত-১৩)।
আমরা জানি, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য বেশ কয়েকটি যুদ্ধের মোকাবেলা করতে হয়। সব যুদ্ধেই বিজয় অর্জিত হয়েছে। একমাত্র ওহুদের যুদ্ধে সাময়িক সঙ্কট সৃষ্টি হলেও শেষমেশ সে যুদ্ধেও বিজয় এসেছে।
কুরআন মজিদের ৪৮ নম্বর সুরার নাম ফাতহ। ফাতহ শব্দের অর্থ বিজয়। এই সুরা ফাতহ বা বিজয় সুরাটি নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপট বা শানেনুযুল থেকে জানা যায়, এই সুরাটি নাজিল হয় ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধি সম্পাদনের পরপরই।
ষষ্ঠ হিজরি মোতাবেক ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দের শাওয়াল মাসে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে দেখলেন, তিনি সাহাবায়ে কেরামের একটি কাফেলা নিয়ে মক্কা মুকাররমায় তাশরিফ নিয়ে এসেছেন এবং বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করছেন, বায়তুল্লাহ শরিফের অভ্যন্তরেও প্রবেশ করেছেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের রবিউল আওয়াল মাসে জন্মভ‚মি মক্কা মুকাররমা থেকে মদিনা মনওয়ারায় হিজরত করে আসেন। মক্কায় যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তাঁরাও হিজরত করেন।
দেখতে দেখতে ছয়টি বছর মদিনা মনওয়ারায় অতিবাহিত হয়েছে। জন্মভ‚মি ছেড়ে আসার সময় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদছিলেন আর বলছিলেন : হে আমার জন্মভ‚মি মক্কা! আল্লাহর জমিনে তুমি আমার কাছে প্রিয়তম স্থান।
ছয় বছর জন্মভ‚মি থেকে বহু দূরে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই তাঁর অন্তরে মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠল এবং বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করার ইচ্ছাও জাগ্রত হলো। তাই তিনি সেই শাওয়াল মাসের পরের মাসে জিলকদে তিন হাজার চার শ’ সাহাবার এক কাফেলা নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। যুলহুলায়ফা নামক স্থানে এসে উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধলেন, সাহাবায়ে কেরামও ইহ্রাম বাঁধলেন।
ওদিকে মক্কার কাফির-মুশরিকদের কাছে খবর পৌঁছল যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার দিকে আসছেন। তাঁর সঙ্গে কয়েক হাজার সহচর রয়েছে। তারা এই কাফেলার গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি অশ্বারোহী বাহিনী মোতায়েন করল।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার নিকটবর্তী হুদায়বিয়া নামক স্থানে এসে একটি ক‚পের নিকট অবস্থান গ্রহণ করলেন। ক‚পটিতে সামান্য পানি ছিল, যে কারণে তিন হাজার চার শ’ সাহাবীর জন্য তা নেহায়েত কম ছিল। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর তীরের খাপের (ত‚ণী) মধ্য থেকে একটি তীর বের করে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত বারাআ ইবনে আযিব রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর হাতে দিয়ে বললেন, এই তীরটি ওই ক‚পের ভেতরে নিক্ষেপ করো। সাহাবী নির্দেশ অনুযায়ী তীরটি ক‚পের ভেতর নিক্ষেপ করার সঙ্গে সঙ্গে ক‚পটি কানায় কানায় পানিতে ভরপুর হয়ে গেল। এটা ছিল প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক অনন্য মুজিযা।
মক্কার কাফির-মুশরিকদের পক্ষ থেকে বুদায়ল ইবনে ওয়ারাকা খুযায়ী প্রিয় নবী সা.-এর সামনে এসে মুসলিমদের আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে প্রিয় নবী সা. ইহরাম পরিহিত সাহাবীগণকে এবং কোরবানির জন্য সঙ্গে আনা উটগুলো দেখিয়ে বলেন : এগুলো দেখে কি তোমরা বুঝতে পারছ না আমরা কেন এসেছি? বুদায়ল নগরীতে ফিরে গিয়ে সব জানালে কুরাইশ কাফির-মুশরিক নেতারা অনুধাবন করল- এই কাফেলার আগমনের উদ্দেশ্য কেবল বায়তুল্লাহ শরিফ জিয়ারত করা। তবুও তাদের কেউ কেউ মুসলিমগণকে মক্কায় প্রবেশ করতে দিতে রাজি হলো না। তারা একদল তরুণকে কাফেলাটি আক্রমণ করতে পাঠাল। তাদের আটকানো হলো। কিন্তু প্রিয় নবী সা. তাদের ছেড়ে দিতে বললেন। একপর্যায়ে বিষয়টি বুঝিয়ে বলার জন্য হযরত উসমান রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে নগরীতে পাঠানো হলো। তিনি মক্কা নগরীতে গিয়ে সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে, আমরা কেবল বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে এসেছি। কিন্তু তাঁর কথায় কেউ কর্ণপাত না করে সাময়িকভাবে তাঁকে আটকিয়ে রাখল।
হযরত উসমান রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু ফিরছেন না দেখে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনও গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে, কুরাইশ মুশরিকরা হযরত উসমানকে (রাদি.) হত্যা করেছে! এমন অবস্থায় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাছের নিচে কাফেলার সকল সাহাবায়ে কেরামকে সমবেত করে প্রত্যেকের কাছ থেকে জান কোরবান করার অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন। ওই অঙ্গীকার বায়াতুর রিদওয়ান নামে অভিহিত হয়েছে। কুরআন মজিদে ওই অঙ্গীকার সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : লাকাদ রাদিয়াআল্লাহু আনিল মুমিনিনা ইয্ ইউবায়ি উনুনাকা তাহতাশজারাতি ফায়ালিমা মা ফি কুলুবিহিম ফানআনযালাস সাকিনাতা আলাইহিম ওয়া আছাবাহুম ফাতহানু কারিবা- (হে রাসূল), আল্লাহ তো মুমিনদের ওপর সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা বৃক্ষতলে আপনার নিকট বায়াত গ্রহণ করল, তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি অবগত ছিলেন, তাদের তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদের পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়। (সুরা ফাতহ : আয়াত ১৮)।
বৃক্ষতলে সেই বায়াতুর রিদওয়ান সম্পন্ন হওয়ার পরপরই হযরত উসমান রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু হুদায়বিয়ায় ফিরে এসে ওই বায়াত গ্রহণ করলেন।
ওদিকে মক্কা নগরীর কুরাইশ-মুশরিক নেতারা প্রতিনিধি পাঠিয়ে একটি সন্ধির প্রস্তাব পাঠাল। মূলত তারা সাহাবায়ে কেরামের বৃক্ষতলে শপথ গ্রহণের খবর পেয়ে রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিল, যে কারণে সন্ধি করার প্রস্তাব করা ছাড়া তারা ভয় থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না। রাহমাতুল্লিল আলামিন সন্ধি প্রস্তাব মেনে নিলেন। অনেক কথা কাটাকাটি এবং মুশরিকদের অন্যায় আবদার ইত্যাদি সবকিছুর পর ১০ বছর মেয়াদি সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হলো। সন্ধির একটি শর্ত মুসলিমদের জন্য আপত্তিকর হলেও প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তির বৃহত্তর স্বার্থে সেটাও মেনে নিলেন। সন্ধির শর্তানুযায়ী, সে বছর মক্কা মুকাররমা যাওয়া হয়ে উঠল না। কারণ সন্ধির প্রথম শর্ত ছিল : মুসলিমগণ এ বছর উমরাহ করবে না। আগামী বছর এসে উমরাহ করতে পারবে। তবে মক্কায় প্রবেশকালে কোষবদ্ধ তরবারি ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্র তাদের কাছে থাকতে পারবে না। ওই সময় মক্কায় তারা তিন দিনের বেশি অবস্থান করতে পারবে না।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরের বছর অর্থাৎ ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে সাহাবায়ে কেরামসহ মক্কা মুকাররমা গিয়ে উমরাহ পালন করেন। হুদায়বিয়ার এই সন্ধিকে আল্লাহ জাল্লা শানুহু ফাতহুম মুবিন অর্থাৎ প্রকাশ্য বিজয় হিসেবে অভিহিত করেন। নাযিল হয় সুরা ফাতহ। এই সুরার শুরুতেই ইরশাদ হয়েছে : ইন্না ফাতাহানা লাকা ফাতহাম মুবিনা- (হে রাসূল), নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়। (সুরা ফাতহ : আয়াত ১)।
মূলত হুদায়রিয়ার সন্ধিই ইসলামের চ‚ড়ান্ত বিজয়ের পথ উন্মোচিত করে দেয়। ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ রমাদান সেই চ‚ড়ান্ত বিজয় সাধিত হয় ১০ হাজার সাহাবায়ে কেরামসহ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কা মুকাররমায় উপস্থিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। সেদিন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কালাম মজিদের যে আয়াতে কারিমা বারবার বলছিলেন তা হচ্ছে : ওয়া কুল জাআল হাক্কু ওয়া জাহাকাল বাতিল, ইন্নাল বাতিলা কানা যাহুকা- আর বলো, সত্য সমাগত, মিথ্যা দূরীভূত, নিশ্চয়ই মিথ্যা দূর হয়। (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৮১)।
আল্লাহ জাল্লা শানুহুর অনুগ্রহ এলেই সত্যের বিজয় অবশ্যই হয়। সুরা নাসরে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর সাহায্য এলে বিজয় আসে।
আমরা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব বাংলাদেশের মানুষ যখনই বঞ্চনা, শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তখনই আল্লাহর অনুগ্রহ তারা লাভ করেছে। এ দেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় ১২০১ খ্রিষ্টাব্দে ইখতিয়ারর উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বিজয় পতাকা উড্ডীন করার মধ্য দিয়ে। এর আগে এ দেশে যাঁরা শাসক ছিলেন তাঁরা বর্ণবাদের স্টিমরোলার চালিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর নির্মমভাবে অত্যাচার করত। অব্রাহ্মণদের শিক্ষার অধিকার ছিল না, নিজের ভাষায় জ্ঞানচর্চার অধিকার ছিল না, এমনকি ধর্মগ্রন্থ পাঠ করার অধিকারও ছিল না। বাংলা ভাষাকে তারা বলত ইতরজনের ভাষা, চাষাভ‚ষার ভাষা, পক্ষীর ভাষা। এ সম্পর্কে ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন বলেন : ‘মুসলমান আগমনের পূর্বে বঙ্গভাষা কোনো কৃষক রমণীর ন্যায় দ্বীনহীনবেশে পল্লী কুটিরে বাস করিতেছিল। ইতরের ভাষা বলিয়া বঙ্গভাষাকে পন্ডিতমন্ডলী দুর দুর করিয়া তাড়াইয়া দিতেন। হাঁড়ি-ডোমের স্পর্শ হইতে ব্রাহ্মণেরা যেরূপ দূরে থাকেন, বঙ্গভাষা তেমনি সুধীসমাজে অপাঙ্ক্তেয় ছিল- তেমনি ঘৃণা, অনাদর ও উপেক্ষার পাত্র ছিল। কিন্তু হীরা-কয়লার খনির মধ্যে থাকিয়া যেমন জহুরির আগমনের প্রতীক্ষা করে, শুক্তির ভেতর মুক্তা লুকাইয়া থাকিয়া যেরূপ ডুবুরির অপেক্ষা করিয়া থাকে, বঙ্গভাষা তেমনই কোনো শুভদিন, শুভক্ষণের জন্য প্রতীক্ষা করিতেছিল। মুসলমান বিজয় বাঙ্গলা ভাষাই সেই শুভদিন, শুভক্ষণের সুযোগ আনয়ন করিল’।
মুসলিম বিজয় শুধু বাংলা ভাষাকেই শাহী মর্যাদা দান করল না, এই বিজয়ের মাধ্যমে এ দেশের মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করল। কিন্তু ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন মীরজাফর আর জগতশেঠদের সঙ্গে আঁতাত করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশী প্রান্তরে সেই স্বাধীনতা সূর্য লুট করে নিলো। সেই স্বাধীনতাকে উদ্ধার করার জন্য সংগ্রামের দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়েছে এ দেশের মানুষকে। তারা লড়াই করেছে কখনো ফকির মজনু শাহের নেতৃত্বে, কখনো হাজী শরীয়তুল্লাহর নেতৃত্বে, কখনো সৈয়দ নিসার আলী তিতুমীরের নেতৃত্বে। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সিপাহি-জনতার মহান বিপ্লবী আন্দোলন হয়েছে। এমনিভাবে আন্দোলনের বাঁকে বাঁকে নতুন নতুন সংগ্রামী অধ্যায় সূচিত হয়েছে। একপর্যায়ে ব্রিটিশ এ দেশ থেকে পালিয়ে গেছে বটে, কিন্তু বাংলায় প্রকৃত স্বাধীনতা আসেনি, বাংলা ভাষার ওপর চরম আঘাত এসেছে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই দাবি উঠেছে, ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে, ভাষার জন্য শহীদের রক্তে রাজপথ লাল হয়েছে, স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন সূচিত হয়েছে। স্বাধিকারের জোরদার দাবি উঠেছে, চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে স্বাধীনতার দাবি উঠেছে। শেষমেশ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছে, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে দীর্ঘ ৯ মাস হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরদের সঙ্গে যুদ্ধ করে, অনেক রক্ত ঝরানোর মাধ্যমে আল্লাহর রহমতে স্বাধীনতা এসেছে বিজয়ের উত্তাল আনন্দ নিয়ে ১৬ ডিসেম্বর তারিখে।
এ দেশের মানুষ ইনশাআল্লাহ দৃঢ় প্রত্যয় বুকে ধারণ করে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে, যে কারণে আল্লাহর রহমতে স্বাধীনতা আসে পলাশীতে লুট হয়ে যাওয়ার প্রায় ২১৪ বছর পর। মানুষ সত্যের জন্য, ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করলে, লড়াই করলে সেখানে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে : ইন্নাল্লাহা লা ইউগায়য়িরু মা বি কাওমিন হাত্তা ইউগায়য়িরু মা বি আনুফুসিহিম- নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে। (সুরা রাদ : আয়াত ১১)।
আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাস থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যে সমস্ত প্রচারপত্র ইশতেহার কিংবা জরুরি নির্দেশপত্র প্রকাশ করেছিল সেগুলো পর্যালোচনা করলে দেখতে পাব, তাতে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে দুর্বার গতিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়া হয়েছে এবং অধিকাংশ ইশতেহার বা প্রচারপত্র সমাপ্ত করা হয়েছে এই বলে : আল্লাহ আমাদের সহায়, নাসরুম মিনাল্লাহি ফাতহুন কারিব।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত এক ইশতেহারের শীর্ষে ছাপানো ছিল : আল্লাহু আকবার এবং শেষ করা হয়েছিল এই বলে : আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী।
বিজয় আল্লাহর দান। হানাদার ও তাদের দোসরদের সঙ্গে যুদ্ধ করে অনেক রক্তের বিনিময়ে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরিফ
গবেষক, সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।