Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ : শেষ অধ্যায়ের কথা

হো সে ন মা হ মু দ | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

প্রায় দুশ’ বছরের পরাধীনতার পর উপমহাদেশের মুসলমানদের একটি অংশ পৃথক আবাসভ‚মির যে রঙিন স্বপ্ন দেখেছিল, তারই পরিণতি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সে স্বপ্নের রং ফিকে হতে শুরু করেছিল। এর সূচনা ঘটেছিল পাকিস্তানের স্রষ্টার হাতেই। শুরুতেই উর্দুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে ও বাংলা ভাষার ব্যাপারে অদূরদর্শিতার পরিচয় দেয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের ভবিষ্যত বিপদের বীজ রোপিত হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের স্রষ্টা নিজেও এর অনাগত ভয়ঙ্কর পরিণতির বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেননি। তবে সহজাত রাষ্ট্রনায়কোচিত বিচক্ষণতায় তিনি সে সময় বিষয়টিতে নীরবতা অবলম্বন করেন। তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। পরবর্তীকালে তার সমতুল্য ব্যক্তিত্ব ও মেধাসম্পন্ন আর কোনো নেতা পাকিস্তানের মাটিতে আবির্ভূত হননি। যে ভাষা সমস্যা হতে পারত বিশাল ভারতকে টুকরো টুকরো করে ফেলার প্রধান কারণ, সে দেশের দূরদর্শী ও বিচক্ষণ রাষ্ট্র পরিচালকদের ক্যারিশমায় তা সেখানে সমস্যার কারণ হলো না, অথচ ছোট দেশ পাকিস্তানের অদূরদর্শী নেতৃত্ব নতুন রাষ্ট্রের সেই প্রভাত লগ্নেই এক সর্বনাশা মাকড়সার জালে নিজেদের জড়িয়ে ফেলতে যেন পা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই জিন্নাহর উত্তরসূরিরা পাকিস্তানকে অখন্ড রাখতে ক্ষমার অযোগ্য ব্যর্থতার পরিচয় দেন।
ইতিহাস ঘটনা মানে, নিয়তিকে নয়। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে দুর্ভাগ্যক্রমে নিয়তি ও ঘটনা এ দেশটিতে হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে। আর পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ সে যুগলবন্দি পরিণতির কাছে প্রতিরোধহীনভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন। কেউ মানুক বা মানুক, অনিবার্য সত্য যে মানুষ হয়ত দৃশ্যমান ঘটনার মোকাবেলা করতে পারে, কিন্তু অদৃশ্য অমোঘ নিয়তিকে নয়। তাই উপমহাদেশ বিভক্তির মাত্র চব্বিশ বছরের মধ্যেই আরেকটি ভাঙন আসে, সৃষ্টি হয় নতুন ইতিহাস, আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাকর ও বেদনাদায়ক অধ্যায় হচ্ছে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় ৯০ হাজার (কোনো কোনো ভাষ্যে ৯৩ হাজার) সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত-বাংলাদেশ যৌথবাহিনী, দৃশ্যত ভারতীয় বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের আত্মসমর্পণ। ১৯৭০-এর জানুয়ারি থেকে ১৯৭১-এর ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থান করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সকল কর্মকান্ড ও পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত ও আত্মসমর্পণের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন মেজর সিদ্দিক সালিক। তিনি ছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা। এ ভূখন্ডে আগমন থেকে বিদায়কালিন সময়ের মধ্যে তার সেনা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে এই আত্মসমর্পণ। মূলত তার উপর ভিত্তি করেই তিনি ভারতে দু’বছর বন্দি থাকাকালিন সময়ে (১৯৭২-৭৩) ইংরেজি ভাষায় রচনা করেন ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থটি। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে। পাকিস্তান খন্ডিত হওয়ার পর সে বিষয়ে সে দেশের কোনো সেনা কর্মকর্তার লেখা এটিই প্রথম বই। তাই প্রকাশের পর পরই গ্রন্থটি ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করে। বাংলাদেশেও তখন বইটি বিষয়ে কিছু আলোচনা হয়েছিল। এ গ্রন্থে দৃষ্টিভঙ্গি, পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও মতামত ইত্যাদি বিষয়ে ভিন্নমত ও বিতর্ক সত্তে¡ও বহু বিষয়েই তার বক্তব্যে অনেক সত্য যেমন উঠে এসেছে তেমনি পূর্ব পাকিস্তানে মোতায়েন পাকিস্তানি শীর্ষ সেনা কমান্ডার লে. জেনারেল নিয়াজি এবং তার সহযোগিদের দুর্বলতা ও ত্রুটির দিকও চিহ্নিত ও প্রকাশিত হয়েছে। তাই বইটি শুধু মিথ্যাচার বা এক তরফা সমর্থনমূলক বয়ানমাত্র নয়। বইটির গুরুত্ব সেখানেই।
মেজর সিদ্দিক সালিক পাকিস্তানে ফিরে পরে ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের সাথে বাহাওয়ালপুরে এক বিমান দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। তিনি জীবিত নেই, তাই ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইটিতে তার বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এখন তর্ক-বিতর্ক অপ্রয়োজনীয়। তাছাড়া এত বছর পর বইটির আবেদনও অনেকটাই ক্ষীয়মাণ। তবে এখনো কেউ কেউ কোনো কোনো লেখায় বইটি থেকে তথ্য ব্যবহার করে থাকেন।
সিদ্দিক সালিক ২৫শে মার্চের অব্যবহিত পূর্ব থেকে ’৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনির কর্মকান্ড সম্পর্কে তার জানা তথ্য ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ২৩টি অধ্যায়ে ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ রচনা করেছেন। বইটির শেষ অধ্যায় হচ্ছে ‘আত্মসমর্পণ’। ব্যর্থতা, দুঃখ, বেদনা মিলিয়ে এ অধ্যায়টি গুরুত্ব বহন করে।
এ অধ্যায়ে তিনি জানিয়েছেন, নিয়াজি বিদ্যমান হতাশাজনক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ১২ই ডিসেম্বর যুদ্ধ বিরতির ব্যাপারে তার সম্মতি দেন। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের খসড়া করেন মুখ্য সচিব মুজাফফর হোসেন। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি তা দেখে দেন। সেটা গভর্নর ডা. এ এম মালিকের কাছে পাঠানো হয়। তিনি তা অনুমোদন করার পর পাঠানো হয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে। সিদ্দিক সালিকের ভাষায়, বার্তায় ইয়াহিয়া খানের কাছে আকুল আবেদন জানানো হয় যেন নিরপরাধ জীবন বাঁচাতে যা কিছু করা সম্ভব, তিনি সব করেন। জানা যায়, ১৩ই ডিসেম্বরেও এ বিষয়ে কোনো জবাব আসেনি।
সিদ্দিক সালিক জানান, ১৪ই ডিসেম্বর গভর্নমেন্ট হাউসে (বর্তমানে বঙ্গভবন) উচ্চ পর্যায়ের সভা ডেকেছিলেন গভর্নর মালিক। কিন্তু সকাল সোয়া ১১টায় ৩টি ভারতীয় মিগ হামলা চালায়। এতে উড়ে যায় প্রধান হলরুমের বিশাল ছাদ। গভর্নর দৌড়ে এয়ার রেইড শেল্টারে গিয়ে তাড়াহুড়া করে কাঁপা হাতে তার পদত্যাগপত্র লিখলেন। সিদ্দিক সালিক নিজেও বোধ হয় সে সময় বঙ্গভবনে ছিলেন। তাই মজা করে লিখেছেন, এ হামলায় প্রায় সবাই রক্ষা পেল, শুধু অ্যাকুইরিয়ামের কিছু মাছ ছাড়া। তারা গরম নুড়ি পাথরের উপর অস্থির হয়ে লাফাতে লাফাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল।
‘উইটনেস টু সারেন্ডার’-এর লেখক বলেছেন, ১৪ই ডিসেম্বর ছিল পূর্ব পাকিস্তান সরকারের শেষ দিন। সরকার ও গভর্নমেন্ট হাউজের ধ্বংসাবশেষগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। বাংলাদেশের সিজারিয়ান জন্মদান সম্পূর্ণ করতে শত্রুকে শুধুমাত্র জেনারেল নিয়াজী ও তার বিশৃঙ্খল বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করতে হত। এতদিনে জেনারেল নিয়াজিও বিদেশী সাহায্যের সব আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন।
নিয়াজি ১৩ই ডিসেম্বর দিবাগত রাত ও ১৪ই ডিসেম্বরের প্রথম লগ্নে সিদ্দিক সালিকের উপস্থিতিতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল হামিদকে ফোনে বলেন যে তিনি প্রেসিডেন্টকে কিছু প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। সেগুলোর ব্যাপারে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয় তা দেখার জন্য তিনি তাকে অনুরোধ করেন। ১৪ই ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় নিয়াজির কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সেই ঐতিহাসিক টেলিগ্রাম আসে। তাতে তিনি গভর্নর মালিক ও জেনারেল নিয়াজিকে যুদ্ধ থামিয়ে জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এই টেলিগ্রামে ইয়াহিয়ার ভাষ্য ছিল এরূপ: ‘আমার কাছে পাঠানো গভর্নরের বার্তা প্রসঙ্গে। আপনারা চরম পরিস্থিতির মধ্যে বীরের মত লড়াই করেছেন। জাতি আপনাদের নিয়ে গর্বিত ও বিশ^ প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে আমি মানবিকভাবে সম্ভব সব কিছু করেছি। আপনারা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছেন যেখান থেকে আরও প্রতিরোধ করা মানুষের পক্ষে আর সম্ভব না বা করলেও তাতে কোনো লাভ হবে না। তাতে শুধু আরও প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতিই হবে। আপনাদের এখন উচিত যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া আর সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জীবন বাঁচানো, যারা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে গিয়েছে এবং বিশ্বস্ত সেনা সবাই।’...
সিদ্দিক সালিক প্রশ্ন করেছেন যে এ টেলিগ্রামে প্রেসিডেন্ট কী বুঝিয়েছিলেন? নিয়াজির আত্মসমর্পণে তার সম্মতি? তবে তিনি নিজে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে তার ভার পাঠকের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। এদিকে টেলিগ্রামটি পাবার পর ১৪ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায়ই নিয়াজি যুদ্ধ বিরতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য তিনি প্রথমে চীন ও সোভিয়েত ক‚টনীতিকদের কথা ভাবলেও পরে ঢাকায় মার্কিন কন্সাল জেনারেল হারবার্ট স্পিভাককে বেছে নেন। এ সময় নিয়াজির সাথে ছিলেন মে. জে. রাও ফরমান আলি। স্পিভাক যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করার নিয়াজির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। তবে তারা ভারতীয় বাহিনীকে কোনো বার্তা পাঠাতে চাইলে তিনি তা পাঠিয়ে দেবেন বলে জানান।
ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশ’র জন্য কয়েকটি শর্তযুক্ত একটি বার্তা তাৎক্ষণিকভাবে দেয়া হয়। স্পিভাক জানান যে, ২০ মিনিটের মধ্যে তিনি তা তাকে পৌঁছে দেবেন। নিয়াজি ও ফরমান ফিরে গিয়ে তার জবাবের অপেক্ষায় রইলেন। কিন্তু সে রাতে বার্তার জবাব আসেনি। কারণ, স্পিভাক সে বার্তাটি মানেকশ’র কাছে পাঠাননি, পাঠিয়েছিলেন ওয়াশিংটনে।
এদিকে নিয়াজির ১৪ই ডিসেম্বরের বার্তার জবাব জেনারেল মানেকশ’ দেন ১৫ই ডিসেম্বর। তিনি জানান যে, যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়া হবে ও শর্তে উল্লেখিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হবে যদি পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। তার সে বার্তা নিয়াজি রাওয়ালপিন্ডিতে পাঠালে জেনারেল হামিদ তাকে যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়ার পরামর্শ মেনে নেন। এ প্রেক্ষিতে ১৫ই ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত সাময়িক যুদ্ধবিরতি অনুমোদিত হয় ও পরে তা ১৬ই ডিসেম্বর বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর পাশাপাশি নিয়াজি বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদলগুলোর কাছে যুদ্ধবিরতির বার্তা পাঠানোর নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, এ নির্দেশে স্থানীয় কমান্ডারদের ভারতীয় বাহিনীর সাথে যুদ্ধ বিরতির জন্য যোগাযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু তাতে আত্মসমর্পণ করার কথা না বলে কায়দা করে বলা হয় যে ‘দুর্ভাগ্যক্রমে এর সাথে অস্ত্র নামিয়ে রাখাও জড়িত আছে।’
সিদ্দিক সালিক জানান, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৩রা ডিসেম্বর থেকেই যুদ্ধের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। এ দিনের পর তিনি আর অফিসে আসেননি। তার সামরিক সচিব সাধারণত যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি চিহ্নিত একটি মানচিত্র তার কাছে নিয়ে যেতেন। তিনি একেক সময় সে মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। একবার শুধু বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আমি কীইবা করতে পারি?’
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রাক্কালে একটি ঘটনার কথা বলেছেন তিনি। ১৫ই ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে ৪ এভিয়েশন স্কোয়াড্রনের অফিসার কমান্ডিং লে.ক. লিয়াকত বোখারীকে ৮ জন পাকিস্তানি নার্স ও ২৮টি পরিবারকে বার্মা পৌঁছে দিতে বলা হয়। বোখারীর হাতে তখন ছিল ৩টি হেলিকপ্টার যেগুলো ছিল যুদ্ধের পুরোটা সময় সবচেয়ে খারাপভাবে আক্রান্ত এলাকায় মানুষ, গোলাবারুদ আর অস্ত্রশস্ত্র পরিবহনের জন্য ইস্টার্ন কমান্ডের কাছে থাকা একমাত্র বাহন। গভীর রাতে দুটি হেলিকপ্টার উড়ল। আর তৃতীয়টি উড়ল পরদিন প্রকাশ্য দিবালোকে, আর তাতে মে. জে. রহিম খান ও অল্প কয়েকজন বার্মায় চলে যান। তারা শেষ পর্যন্ত করাচি পৌঁছে যান। তবে নার্সরা যেতে পারেনি।
সালিক জানান, ১৫ ডিসেম্বর ভারতের মেজর জেনারেল নাগরা মিরপুর সেতুর ওপারে পৌঁছে নিয়াজির কাছে চিরকুট পাঠান। এতে তিনি লেখেন: ‘প্রিয় আবদুল্লাহ, আমি মিরপুর সেতুতে আছি। আপনার প্রতিনিধি পাঠান।’ নিয়াজি মে.জে. জামশেদকে পাঠান। সিদ্দিক সালিকের ভাষায়: ‘ভারতীয় জেনারেল হাতে গোনা কয়েকজন সৈন্য নিয়ে অত্যন্ত গৌরবের সাথে ঢাকায় প্রবেশ করলেন। এটিই ছিল কার্যত ঢাকার পতন। হৃদরোগীর মতই এটি চুপচাপ পড়ে গেল।’
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের কিছু কথা বলা হয়েছে এ বইতে। এর একটি অংশ এরূপঃ ‘প্রায় দশ লক্ষ বাঙালি ও প্রচুর সংখ্যক বিদেশী সাংবাদিকের চোখের সামনে লে.জে. অরোরা ও লে.জে. নিয়াজি আত্মসমর্পণের চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করলেন। তারপর তারা দু’জনেই উঠে দাঁড়ালেন। ঢাকার আত্মসমর্পণের নিদর্শন হিসেবে জেনারেল নিয়াজি তার রিভলবার বের করে অরোরার কাছে হস্তান্তর করলেন। এর সাথেই তিনি পূর্ব পাকিস্তানকে হস্তান্তর করলেন।’
সিদ্দিক সালিক এ বইয়ের শেষে জানিয়েছেন, যুদ্ধবন্দি হয়ে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে পৌঁছে তিনি নিয়াজির সাথে যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছিলেন। নিয়াজি কোনো রকম বিবেকের দংশন বা অনুশোচনা বোধ করেননি। পাকিস্তান ভাঙ্গার দায়ভার নিতে তিনি অস্বীকার করেন ও এর জন্য ইয়াহিয়া খানকে দোষারোপ করেন।
লেখক : সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিজয় দিবস

১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১৭ ডিসেম্বর, ২০২২
১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন