পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তৈরি পোশাক খাতে নতুন ঘোষিত মজুরি কাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে টানা আন্দোলনে নেমেছে শ্রমিকরা। শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনড়। গতকাল শুক্রবারও কারখানার কাজে যোগ দেয়নি শ্রমিকরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (শুক্রবার রাত ৭টা) আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে কমপক্ষে ৮০টির অধিক পোশাক কারখানার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে না আসলে এ সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে যেতে পাওে বলে আশঙ্কা করছেন মালিকরা।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ শনিবার ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। এছাড়া আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক কারখানা সাধারন ছুঁটি ঘোষণা করেছে বলে জানা গেছে।
শ্রমিকদের টানা কর্মবিরতি প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আশুলিয়া ও গাজীপুরের একটি অংশ ঘিরে একই পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই কারখানা ছুটি হয়ে যাচ্ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। নতুন কোনো সিদ্ধান্তের প্রয়োজন পড়লে সেখানে নেয়া হবে।
শিল্প অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন মজুরি কাঠামোয় অসন্তোষ প্রকাশ করে গতকাল টানা ৬ষ্ঠ দিনের মতো অনেক শ্রমিক কারখানায় এসেও কাজ না করে ফিরে যান। একপর্যায়ে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়। কর্মবিরতির ঘটনা আশুলিয়ায়ই বেশি ঘটেছে। এ এলাকায় পোশাক কারখানা আছে প্রায় ২০০টি। এর মধ্যে ৪৩টি কারখানা শ্রমিকদের কর্মবিরতির ঘটনায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকলেও নিজস্ব উদ্যোগে কোনো কোনো শিল্প মালিক ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন।
শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ৯ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিনই কর্মবিরতি ও কারখানা বন্ধের ঘটনা বাড়ছে। ৯ ডিসেম্বর কর্মবিরতি ও বন্ধ হয় সাত-আটটি কারখানা। পরদিন সংখ্যাটি বেড়ে হয় প্রায় ১২। ১১ ডিসেম্বর বন্ধ হয় প্রায় ২৩টি, ১২ ডিসেম্বর ৩৬টি ও সর্বশেষ গতকাল বন্ধ হয় ৪৩টি কারখানা। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০টি কারখানায় কর্মবিরতি ও উৎপাদন বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যাটি ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, অনেক শ্রমিক কারখানায় প্রবেশ করেও কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি পালন করে। কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে শ্রমিক ও কারখানার মালিকপক্ষের মাঝে নতুন মজুরি কাঠামোর বৈষম্যে এবং বর্ধিত বেতনের দাবি সমাধান না হওয়ায় টানা ৬ষ্ঠ দিনের মতো এ অচলাবস্থা চলছে। এর মধ্যে আশুলিয়ার সাধুপাড়ায় টর্ক ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় এক নারী শ্রমিকের স্বামীকে নির্যাতন করায় অপমান সহ্য করতে না পেরে ওই স্বামীর আত্মহত্যার ঘটনায় শ্রমিকদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এদিকে কারখানা সূত্র জানায়, শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে হাজিরা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করে। দুপুরের খাবারের সময় হলে তারা কারখানা থেকে বের হয়ে যায়। শ্রমিকদের মাঝে এ অসন্তোষের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
নির্বাচন সামনে রেখে উৎপাদন বন্ধ করে দাবি আদায়ের পেছনে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের বা শ্রমিক সংগঠনের ইন্ধন রয়েছে কি না সে ব্যাপারটি খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিজেএমইএ নের্তৃবৃন্দদের মধ্যে কেউ কেউ এ ঘটনার ইন্ধন দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান জানান, নতুন বেতন কাঠামোতে বৈষম্যের গুজব রটিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ আশুলিয়ার সব পোশাক কারখানার দিকে সতর্ক নজর রাখছে। যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে। তিনি জানান, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বৈঠক হয়েছে। নতুন মজুরি কাঠামো নিয়ে কেউ যেন বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সে জন্য শ্রমিক নেতারা বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করছেন।
শ্রমিকরা জানায়, তাদের যৌক্তিক দাবি না মানলে তারা কাজে যোগ দেবে না। কেউ কেউ বলে, হেলপারের বেতন বেড়েছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। সেখানে অপারেটরের বেতন বেড়েছে মাত্র ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা। এ বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না। অন্যদিকে তাদের বর্ধিত বেতন বাড়ানোর টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এ মাস থেকে থাকলেও কারখানা মালিকপক্ষ তা দিতে গড়িমসি করছেন। তাঁরা জানুয়ারি থেকে বর্ধিত বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁদের এ দাবি তখন মালিকপক্ষ রাখবে কি না সে ব্যাপারে শ্রমিকদের মাঝে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তারা অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে কারখানার উৎপাদনমুখী পরিবেশ বজায় রাখার আহবান জানায়।
শিল্প পুলিশ-১-এর পরিচালক পুলিশ সুপার সানা শামিনুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্ট কারখানা এলাকাসহ শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক নজর রয়েছে। যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ও পরিস্থিতি এড়াতে তারা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রেখেছেন।
জানা গেছে, আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকদের উত্তেজনা মূলত নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নকে ঘিরে। তারা নিশ্চিন্ত হয়ে জানতে চাইছেন, নতুন কাঠামোয় মজুরি ঠিক কত হবে। এ বিষয়ে তাদের নিজস্ব প্রত্যাশার হিসাবও আছে, যার সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণও করছেন তারা। তাদের দাবি, সব গ্রেডেই মজুরি ন্যূনতম ২ হাজার ৭০০ টাকা বাড়াতে হবে। যদিও শিল্প মালিকদের অনেকেই জানুয়ারিতে কোন গ্রেডের কোন শ্রমিক কত মজুরি প্রাপ্য হবেন, তা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। শ্রমিকরা জানতে চাইলে তারা বলছেন, আইনি কাঠামো অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি যা হবে, তা-ই তারা পাবেন। কিন্ত কোনো শিল্প মালিকই স্পষ্ট করে বলছেন না, শ্রমিকদের প্রাপ্য কত হবে। এমন প্রেক্ষাপটেই শ্রমিকদের কর্মবিরতি।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী, দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় আট হাজার টাকা। এর মধ্যে বেসিক চার হাজার ১০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ২০৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৩৫০ টাকা, খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা। এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছিল সরকার। সেই হারেই এখন বেতন পাচ্ছেন শ্রমিকরা।
তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি করে আসছে শ্রমিকরা। এর বিপরীতে পোশাক শিল্প মালিকরা প্রস্তাব করেন ৬ হাজার ৩৬০ টাকা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা করার পক্ষে মতামত দিয়েছিল।
বিজিএমই সূত্র জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আট বছরে পোশাক শিল্পে মজুরি ৩৮১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ হারে মজুরি বাড়ছে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।