পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
নতুন ঘোষিত মজুরি কাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে কয়েকটি এলাকায় শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনড় থেকে আজ শুক্রবারও কারখানার কাজে যোগ দেয়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকাল সাড়ে ৩টা) আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে কমপক্ষে ৭০টি পোশাক কারখানার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
অনেক শ্রমিক কারখানায় প্রবেশ করেও কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি পালন করে। কয়েকটি কারখানায় ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে শ্রমিক ও কারখানার মালিকপক্ষের মাঝে নতুন মজুরি কাঠামোর বৈষম্যে এবং বর্ধিত বেতনের দাবি সমাধান না হওয়ায় টানা ৫ম দিনের মতো এ অচলাবস্থা চলছে।
এর মধ্যে আশুলিয়ার সাধুপাড়ায় টর্ক ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় এক নারী শ্রমিকের স্বামীকে নির্যাতন করায় অপমান সহ্য করতে না পেরে ওই স্বামীর আত্মহত্যার ঘটনায় শ্রমিকদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এদিকে কারখানা সূত্র জানায়, শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে হাজিরা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করে। প্রতিদিন দুপুরের খাবারের সময় হলে তারা কারখানা থেকে বের হয়ে যায়। শ্রমিকদের মাঝে এ অসন্তোষের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
নির্বাচন সামনে রেখে উৎপাদন বন্ধ করে দাবি আদায়ের পেছনে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের বা শ্রমিক সংগঠনের ইন্ধন রয়েছে কি না সে ব্যাপারটি খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে। যদিও অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিজেএমইএ নের্তৃবৃন্দের ইন্ধনেই শ্রমিকরা আন্দোলন করছে।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান জানান, নতুন বেতন কাঠামোতে বৈষম্যের গুজব রটিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ আশুলিয়ার সব পোশাক কারখানার দিকে সতর্ক নজর রাখছে। যাতে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে। তিনি আরো জানান, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বৈঠক হয়েছে। নতুন মজুরি কাঠামো নিয়ে কেউ যেন বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সে জন্য শ্রমিক নেতারা বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার এবং আজ শুক্রবারও আশুলিয়ার নরসিংহপুর, জিরাবো, পুকুরপাড়, কাঠগড়, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে এলাকার প্রায় ৭০টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়নি। ফলে ওই কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ রেখে অঘোষিত ছুটি ঘোষণা চলছে।
শ্রমিকরা জানায়, তাদের যৌক্তিক দাবি না মানলে তারা কাজে যোগ দেবে না। কেউ কেউ বলেন, হেলপারের বেতন বেড়েছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। সেখানে অপারেটরের বেতন বেড়েছে মাত্র ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা। এ বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না। অন্যদিকে তাদের বর্ধিত বেতন বাড়ানোর টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এ মাস থেকে থাকলেও কারখানা মালিকপক্ষ তা দিতে গড়িমসি করছেন। তাঁরা জানুয়ারি থেকে বর্ধিত বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁদের এ দাবি তখন মালিকপক্ষ রাখবে কি না সে ব্যাপারে শ্রমিকদের মাঝে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তারা অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে কারখানার উৎপাদনমুখী পরিবেশ বজায় রাখার আহবান জানায়।
শিল্প পুলিশ-১-এর পরিচালক পুলিশ সুপার সানা শামিনুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্ট কারখানা এলাকাসহ শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক নজর রয়েছে। যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ও পরিস্থিতি এড়াতে তারা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রেখেছেন।
অন্যদিকে এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে শিল্প মালিকদের মধ্যে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে।
শিল্প অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন মজুরি কাঠামোয় অসন্তোষ প্রকাশ করে আজ ৬ষ্ঠ দিনের মতো অনেক শ্রমিক কারখানায় এসেও কাজ না করে ফিরে যান। একপর্যায়ে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়। বৃহষ্পতিবার ও শুক্রবার কর্মবিরতির ঘটনা আশুলিয়ায়ই বেশি ঘটেছে। এ এলাকায় পোশাক কারখানা আছে প্রায় ২০০টি। এর মধ্যে ৪৩টি কারখানা শ্রমিকদের কর্মবিরতির ঘটনায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকলেও নিজস্ব উদ্যোগে কোনো কোনো শিল্প মালিক ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন।
আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকদের উত্তেজনা মূলত নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নকে ঘিরে। তারা নিশ্চিন্ত হয়ে জানতে চাইছেন, নতুন কাঠামোয় মজুরি ঠিক কত হবে। এ বিষয়ে তাদের নিজস্ব প্রত্যাশার হিসাবও আছে, যার সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণও করছেন তারা। তাদের দাবি, সব গ্রেডেই মজুরি ন্যূনতম ২ হাজার ৭০০ টাকা বাড়াতে হবে।
যদিও শিল্প মালিকদের অনেকেই জানুয়ারিতে কোন গ্রেডের কোন শ্রমিক কত মজুরি প্রাপ্য হবেন, তা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। শ্রমিকরা জানতে চাইলে তারা বলছেন, আইনি কাঠামো অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি যা হবে, তা-ই তারা পাবেন। কিন্ত কোনো শিল্প মালিকই স্পষ্ট করে বলছেন না, শ্রমিকদের প্রাপ্য কত হবে। এমন প্রেক্ষাপটেই শ্রমিকদের কর্মবিরতি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তায় স্টাইলিশ গার্মেন্টস কারখানার স্বত্বাধিকারী মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ধরা হয়েছে ৮ হাজার টাকা, আগামী মাস থেকে যা কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্ত শ্রমিকরা এখনই তা কার্যকরের দাবি জানাচ্ছেন। আবার কোনো কোনো এলাকায় শ্রমিকরা সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকা বেতনও মানতে চাইছেন না। বিভিন্ন মহল থেকে শ্রমিকদের মধ্যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তাদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শ্রমিকদের বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সর্বনিম্ন যে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে, যথাসময়েই তা কার্যকর করা হবে।
শ্রমিকদের টানা কর্মবিরতি প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, আশুলিয়া ও গাজীপুরের একটি অংশ ঘিরে একই পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই কারখানা ছুটি হয়ে যাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৫ ডিসেম্বর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। নতুন কোনো সিদ্ধান্তের প্রয়োজন পড়লে সেখানে নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।