Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সুন্নতি লেবাস-১

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সুন্নতি লেবাস তথা পোশাক-আশাক বলতে কি বুঝায়, তা বিশ্লেষণযোগ্য। সাধারণত মহানবী (সা.), তাঁর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তবয়ে তাবেঈন এবং পরবর্তীকালে যুগে যুগে তাদের অনুসারী উলামায়ে হাক্কানী তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ইমাম, ফকীহ ও মোহাদ্দেসগণ এবং মাশায়েখ-আউলিয়ায় কেরাম যে পোশাক পরিধান করতেন এবং বর্তমানে মসজিদের ইমাম, খতিব, দ্বীনি আরবী মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষক ছাত্রবৃন্দ এবং উলামা-মাশায়েখ যে লেবাস পরিধান করে থাকেন, তাই সুন্নতি লেবাস নামে পরিচিত। আরও জানা থাকা দরকার যে, মাশায়েখ ও সুফিয়ায়ে কেরামের মধ্যে এক শ্রেণীর সাধকের বিশেষ পোশাক প্রচলিত তা সুন্নতি লেবাস নয়, যার বিষদ বিবরণ ‘কাশফুল মাহজুব’ ও অন্যান্য গ্রন্থে রয়েছে। তাদের এ পোশাকের স্বরূপ একজন বিখ্যাত সাধকের একটি ঘটনা হতে জানা যায়। খলিফার দরবারে সমকালীন ওলামায়ে-কেরামের সমাবেশে তাকে যোগদান করার আহ্বান জানানো হয়, যেখানে ‘আনাল হক’ এর দাবিদার ‘মনুসর হাল্লাজ’ সম্পর্কে উলামায়ে-কেরাম তাদের রায় ব্যক্ত করবেন।
সাধক সাহেব সে সম্মেলনে যোগদান করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং তার পরিধানে সুফিদের যে বিশেষ ‘গুডড়ি’ ছিল তা তিনি বদলে নিচ্ছিলেন। এ পোশাক পরিবর্তনের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে জবাবে তিনি বললেন: মনসুর হাল্লাজের মতবাদ সম্পর্কে শরিয়তের দৃষ্টিতে ফতোয়া প্রদান করা হবে, সে মজলিসে এ গুডড়ি পড়ে অংশগ্রহণ করা যাবে না, সেখানে শরীয়তী পোশাক পরিধান করে শরিক হতে হবে। যা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের পোশাক হিসেবে পরিচিত। এটি ইতিহাসের ঘটনা। সুফী-সাধকদের এই শ্রেণির বিশেষ পোশাক এখানে আমাদের আলোচনা বহির্ভূত।
কেউ যদি ঘরোয়া পরিবেশে উল্লেখিত পোশাক পরিধান করতে (লোক দেখানো বা অহঙ্কার প্রদর্শনের জন্য নয়) অভ্যস্ত হয়, তা ভিন্ন কথা। তবে সাধারণভাবে ঘরোয়া পোশাক সুন্নতি পোশাক হতে হবে এমনটি জরুরি নয়, তবে শরীর ঢাকা জরুরি। সাধারণ কাজকর্মে অর্থাৎ ব্যবহারিক জীবনে সুন্নতি পোশাক পরাও জরুরি নয়।
মসজিদে গমন, ধর্মীয় মাহফিল মজলিসে যোগদান এবং জুমা ঈদের জামাতে শরিক হওয়ার জন্য সুন্নতি পোশাক পরিধান করা উত্তম, তবে মসজিদের ইমাম, খতিব, মুফতী এবং ওলামা-মাশায়েখের ক্ষেত্রে ইসলামের সৌন্দর্য ও গর্ব-গৌরব প্রদর্শনের জন্য সুন্নতি পোশাক পরিধান করার গুরুত্ব অপরিসীম।
তাত্তি¡ক আলোচনা করতে গেলে সাধারণত লেবাস তথা পোশাককে দুই প্রকারে ভাগ করা যায়, জাহেরী (প্রকাশ্য) ও বাতেনী (অপ্রকাশ্য) দুই প্রকারের। জাহেরী পোশাক দ্বারা শরীর ঢাকা হয়। এ পোশাক সম্পর্কে বলা হয় যে, পুরুষ রেশমী পোশাক পরিধান করবে না এবং আচল দীর্ঘ করবে না (যা নিষিদ্ধ) এবং নারী খুব পাতলা পোশাক পরিধান করবে না, যাতে লোকেরা দেহ দেখতে না পায় এবং নিজ সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না। বাতেনী পোশাক সম্পর্কে সূফিয়ায়ে কেরামের নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ রয়েছে যা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।
বিভিন্ন হাদীস হতে জানা যায় যে, রসূল (সা.) সাধারণত সাদা পোশাক পছন্দ করতেন এবং মৃত ব্যক্তিকে সাদা কাফনে দাফন করার নির্দেশ দিতেন। তিনি কোর্তা বা কামিজ পছন্দ করতেন। হুজুর (সা.) সামর্থবানদের উত্তম পোশাক পরিধানের পরামর্শ দিতেন। তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধানের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করতেন।
তিনি অহঙ্কার ও লৌকিকতা প্রদর্শনের (লোক দেখানো) পোশাক পরিধান করতে নিষেধ করতেন এবং পোশাক আশাকের অপচয় করতে নিষেধ করতেন। সাহাবায়ে কেরামও টুপি-পাগড়ি এবং জামা-কাপড় পরিধানে তাঁর অনুসরণ করতেন। বস্তুত তারাই ছিলেন সুন্নতি লেবাসের প্রবর্তক।



 

Show all comments
  • Ameen Munshi ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৩ এএম says : 0
    মেয়েদের বোরকা পরা নিয়ে সামপ্রতিক একটি ঘটনা দ্বীনদার মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। বোরকা হিজাব ও পর্দার একটি অংশ এবং তা ইসলামের লেবাস-পোষাক সংক্রান্ত নির্দেশাবলির অন্তর্ভুক্ত। লেবাস-পোষাক সম্পর্কে ইসলামে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে, যা মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। শরীয়তসম্মত লেবাস গ্রহণে বাধ্যবাধকতা মূলত শরীয়তের পক্ষ হতেই আরোপিত। তাই অতিরঞ্জিত ফ্যাশনের ফলে যাতে শরিয়ত লঙ্ঘন নয় সেদিকে নারীদের খেয়াল রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mosharraf ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৪ এএম says : 0
    পোশাক মানুষের মৌলিক চাহিদা। লজ্জাস্থান আবৃত রাখা এবং সুন্দর ও পরিপাটি থাকার চাহিদা মানুষের স্বভাবজাত। তদ্রূপ শীত-গ্রীষেমর প্রকোপ ও বাইরের ধুলোবালি থেকে শরীরকে রক্ষার জন্য তা একটি প্রয়োজনীয় আবরণ। তাই পোশাক আল্লাহ তাআলার নেয়ামত।
    Total Reply(0) Reply
  • রিপন ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৫ এএম says : 0
    হে আদমের সন্তান্তসন্ততি! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দুষণীয় তা ঢাকার জন্য এবং তা সৌন্দর্য্যেরও উপকরণ। বস'ত তাকওয়ার যে পোষাক সেটাই সর্বোত্তম। এসব আল্লাহর নির্দেশনাবলির অন্যতম। যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে।-সূরা আরাফ : ২৬
    Total Reply(0) Reply
  • কবির ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৬ এএম says : 0
    নারী-পুরুষ একে অন্যের সাদৃশ্য গ্রহণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে অত্যন্ত কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর বেশধারণকারী পুরুষের উপর আর পুরুষের বেশধারণকারিনী নারীর উপর লানত করেছেন।-বুখারী, হাদীস : ৩৮৮৫
    Total Reply(0) Reply
  • Mosharraf jahid ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৭ এএম says : 0
    আজকাল অনেক নারীকে তো প্যান্ট ও টি-শার্টও পরতে দেখা যায়। এসব যে কেবল পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণের কারণেই হারাম তা নয়, নির্লজ্জতা, পর্দাহীনতা আর বিজাতির সামঞ্জস্যগ্রহণ ইত্যাদি বহু কারণেই তা হারাম ও কবীরা গুনাহ। কোনো কোনো সময় পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন মুসলিমদেশের নারীদের ছবি দেখা যায়, যাদের মাথায় ওড়না, কিন্তু শরীরে ইউরোপীয় সাজ। বলাবাহুল্য, এটা ইসলামী আদর্শের প্রতিনিধিত্ব নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Sarfaraz Ahmed ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৭ এএম says : 0
    অহংকার ও লোকদেখানোর মানসিকতা সর্বাবস্থায় ও সকল কাজেই পরিত্যাজ্য। লেবাস-পোষাকের মাধ্যমেও যেন এই ব্যাধি মানুষের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়েও হাদীস শরীফে সতর্ক করা হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অহংকারবশত মাটিতে কাপড় টেনে টেনে চলে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না (রাগান্বিত থাকবেন)।-বুখারী, হাদীস : ৫৭৯১; মুসলিম, হাদীস : ২০৮৫/৪৪
    Total Reply(0) Reply
  • Hasnine Shishir ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৮ এএম says : 0
    পোষাক শুধু বাইরের খোলস নয়, রুচি ও মানসিকতারও বার্তাবাহক। উপরন্তু আত্মিক উন্নতি বা অবনতির মাধ্যম। তাই এ বিষয়ে অবহেলা নয়, নয় গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসানো। সচেতনভাবে সেই লেবাসই গ্রহণ করা উচিত যা মুত্তাকী ও আল্লাহভীরু হতে সাহায্য করে। নিঃসন্দেহে সেটিই উত্তম লেবাস।
    Total Reply(0) Reply
  • Farooq Farooq ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৮ এএম says : 0
    লেবাস-পোশাকের ক্ষেত্রে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ বিষয় হলো, লেবাস-পোশাকের যে উদ্দেশ্য লেবাস-পোশাক দ্বারা সে উদ্দেশ্য পূরণ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • aminul islam ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:৩৫ পিএম says : 0
    Every thing is ok .
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন