রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই সাতক্ষীরার চারটি আসনে জমে উঠছে ভোটে আমেজ। ভোটারা নানামুখী কর্মব্যস্ততার মধ্যেও চালিয়ে যাচ্ছেন ভোটের আলাপ। এমনকি পথ চলতেও বইছে ভোটের হাওয়া। প্রার্থীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন সচেতন ভোটাররা।
চারটি সংসদীয় আসনে গত সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর ২১ জন প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। কুশল বিনিময় করছেন ভোটারদের সাথে। জয়ী হতে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা। কেউ বলছেন উন্নয়ণ হয়েছে অনেক। কোনো প্রার্থী বলছেন, নির্বাচিত হলে আরো উন্নয়ন করব। আবার কোনো প্রার্থী বলছেন, নির্বাচিত হলে উন্নয়নের পাশাপাশি সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো, ফিরিয়ে দেবো বাক-স্বাধীনতা। সকল প্রকার অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম থেকে মানুষদের রক্ষা করে । এ ছাড়াও ভোটারদের কাছে রয়েছে প্রার্থীদের নানান রকমের কথার ফুলঝুরি।
জানা যায়, সাতটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৫ লাখ, ৬০ হাজার, ৪২৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন সাত লাখ ৮১ হাজার ৫৯৭ জন। মহিলা ভোটার রয়েছেন ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮২৬ জন। জেলায় মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৯৭ টি। ভোট কক্ষ তিন হাজার ৫০ টি। একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসনে ভোটার সংখ্যা চার লাখ ২৩ হাজার ৭৩ জন। একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-২ আসন। এখানে মোট ভোটার রয়েছেন তিন লাখ ৫৬ হাজার ২৪৬ জন। ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৩ আসন। এখানে মোট ভোটার তিন লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৭ জন। ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসন। এখানে মোট ভোটার রয়েছেন তিন লাখ ৯৩ হাজার ৭৬৭ জন।
সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে ছয়জন প্রার্থী থাকলেও জোর প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে। এরা হলেন ধানের শীষের হাবিবুল ইসলাম হাবিব, নৌকার অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ও লাঙ্গলের প্রার্থী সৈয়দ দিদার বখত।
সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে জোর প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে তিন জনের মধ্যে। এরা হলেন- বাংলাদেশ আ.লীগের প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবি নৌকা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রার্থী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক ধানের শীষ ও জাতীয় পার্টির শেখ মাতলুব হোসেন লিয়ন লাঙ্গল প্রতীক।
সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটা ও কালিগঞ্জের একাংশ) আসনে তিনজন প্রার্থী থাকলেও ভোটের জোর লড়াই হবে মূলত দু’জন প্রার্থীর মধ্যে। এরা হলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রার্থী ডা. মো. শহিদুল আলম ধানের শীষ ও আ.লীগের ডা. আ ফ ম রুহুল হক নৌকা।
সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জের একাংশ ও শ্যামনগর) আসনে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে মূলত দু’জন প্রার্থীর মধ্যে জোর প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। এরা হলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) গাজী নজরুল ইসলাম ধানের শীষ, বাংলাদেশ আ.লীগের এস এম জগলুল হায়দার নৌকা।
সাতক্ষীরা-১ আসনের ভোটার শিক্ষক লিয়াকত হোসেন বলেন, একাধিক প্রার্থী থাকায় ইতোমধ্যে ভোটের মাঠ গরম হতে শুরু করেছে। আশা করছি, ভোট নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হবে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। একই আসনের কলারোয়ার ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম বলেন, ভোট যতোই এগিয়ে আসছে, মনের মধ্যে ততোই বেশি ভয় হচ্ছে, কারণ এর আগে অনুষ্ঠিত পৌর, উপজেলা ও ইউপি নির্বাচনে কলারোয়ার অনেক ভোট কেন্দ্র দখল, জোর করে ব্যালটে সিল মারাসহ মারপিট এবং বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাই ভোট আসলে ভয় হয়।
একই আসনের ইজিবাইক চালক আকবর আলী বলেন, কদিন আগে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কলারোয়ায় এসে বলেছেন, নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ভোট হবে। এই ঘোষনার পর মনে হচ্ছে এবারের ভোট ভালো হবে। নিজের পছন্দের পার্থীকে ভোট দিতে পারবো।
সাতক্ষীরা ২ আসনের শিক্ষক আব্দুর রউফ বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন আর এবারের নির্বাচনে অনেক ব্যবধান রয়েছে। আগের নির্বাচন এককভাবে হওয়ায় ভোটের মাঠে তেমন কোনো লোকজন দেখা যায়নি। এবার অনেক দল, বিশেষ করে বিএনপি ভোটের মাঠে থাকায় নির্বাচন জমে উঠেছে। মাঠে-ঘাঠে, দোকান পাটে এমনকি অফিসে বসেও নির্বাচনী আলোচনা চলছে। গৃহবধু ছালমা বেগম বলেন, ভোট নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। পরিবেশ ভালো দেখলে কেন্দ্রে যাবো, ভোট দিবো। খারাপ হলে আমি নেই।
ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম বলেন, এবার এই আসনে মেশিনে ভোট দিতে হবে। কিভাবে ভোট দিতে হবে জানি না। তিনি বলেন, ভোটের আগে সরকারের উচিৎ এই মেশিন সর্ম্পকে জনগণকে জানানো। তানা হলে ভোটের মেশিনে সব জগা খিঁচুড়ি পাকিয়ে ফেলবে ভোটাররা।
সাতক্ষীরা ৩ আসনের ভোটার কৃষক মোশাররফ হোসেন বলেন, এই আসনে দুই ডাক্তার ভোটে দাঁড়িয়েছে। একজন টাকা নিয়ে চিকিৎসা করে আর একজন বিনা টাকায় চিকিৎসা দেয়। তাই ভাবছি টাকা না নিয়ে যে ডাক্তার মানুষের চিকিৎসা করেন আমার ভোটটি তাকেই দেবো। অবশ্য যদি ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ ভালো থাকে তাহলেই যাবো ভোট দিতে।
ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ বলেন, ভোটের রাজনীতি নোংরা হয়ে গেছে। এলাকার কুখ্যাত চোরাকারবারী যখন তার দলবল নিয়ে কোনো প্রার্থীর হয়ে ভোট চাইতে আসে। তখন মনে হয় না যে, কেন্দ্রে যাই ভোট দিতে। তারপরও ভাবছি কি করা যায়।
এলাকার তরুণ ভোটার ছালাউদ্দিন বলেন, সৎ এবং যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবো। তিনি আশা করেন, এবারের ভোট হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ।
একজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছি। তাই অবাধে আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই। শীতের ঠান্ডা হাওয়া উপেক্ষা করে মানুষ যেনো কেন্দ্রে যেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারেন প্রশাসনের কাছে এমনটিই আশা করেন এই বীর মুক্তযোদ্ধাসহ সকল ভোটাররা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।