বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বদান্যতা ও দানশীলতার মতো পরাম্মুখতা ও আত্মতুষ্টিও মানুষের উচ্চতর সম্ভ্রান্ত চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। বরং বলা যায়, এ দু’টি বিষয় মানব চরিত্রের একই পবিত্র বৈশিষ্ট্যের দু’টি দিক।
এস্তেগানা তথা পরাম্মুখতা ও কানা’আত তথা আত্মতুষ্টি অর্থ মানুষ নিজের বৈধ উপায় এবং নিজের পরিশ্রমের ফলে আল্লাহর তরফ থেকে যা কিছু পাবে, তাকেই নিজের প্রাপ্য অংশ এবং যথেষ্ট বলে মনে করবে। অপরের জিনিসের প্রতি লালসার দৃষ্টি ফেলবে না। কিংবা সৃষ্টির কারো কাছে মুখাপেক্ষিতার হাত প্রসারিত করবে না। কুরআনের হেদায়াত হলো, প্রত্যেকটি মানুষই আল্লাহ তায়ালার বান্দা এবং আল্লাহ তায়ালাই তার করুণাময়-দয়ালু পালনকর্তা। কাজেই তার কর্তব্য হলো, নিজের অভাব-অনটনের জন্য তাকে ছাড়া কারো সামনে নিজের হাত প্রসারিত না করা। আল্লাহর ভান্ডারে সবকিছুই রয়েছে। আর তার করুণা ও রহমতই বান্দার জন্য যথেষ্ট। এ বিষয়ে বিভিন্ন আয়াত কুরআনে কারিমে বর্ণিত হয়েছে।
এখানে কয়েকটি আয়াত উদ্ধৃত করা হলো। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহই কি তার বান্দাদের জন্য যথেষ্ট নন? (তা হলে কেন তারা অন্যের সামনে হাত পাতবে?)।’ (সূরা যুমার : আয়াত ৩৬)। আল্লাহ তায়ালা অন্যদের পৃথিবীতে যা কিছু দিয়ে রেখেছেন, তার প্রতি লোভ না করতে এবং সেগুলোর প্রতি লোভাতুর দৃষ্টিতে না তাকাতে সরাসরি নির্দেশ দান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আর কখনো চোখ তুলে তাকাবে না সেসব বস্তু-সামগ্রীর প্রতি, যার মাধ্যমে আমি তাদের মাঝে বিভিন্ন লোককে সমৃদ্ধ করে রেখেছি।’ (সূরা তোয়াহা : আয়াত ১৩১)।
অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আর সে বস্তুর প্রতি লোভ করো না, যাতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মধ্যে কাউকে কারো ওপর বাড় ও অগ্রাধিকার দান করেছেন।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৩২)। অর্থাৎ যে বস্তু আল্লাহ তায়ালা কাউকে দিয়েছেন আর তোমাদেরকে দেননি, তোমরা তার লোভ করো না। এমন কি তার প্রতি চোখ তুলেও তাকিও না। এরই নাম তুষ্টি।
তাওয়াক্কুল হলো আত্মতুষ্টি ও পরাম্মুখতার মৌল ভিত্তি। আল্লাহ তায়ালার যে বান্দার তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহ তায়ালার রহমত ও পালন কর্তৃত্বের ওপর বিশ্বাস ও ভরসা নসিব হয়েছে, তার অন্তর এ ব্যাপারে আশ্বস্ত থাকবে যে, আমার যাবতীয় প্রয়োজনের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই আমার করুণাময় দয়ালু পালনকর্তা ও কার্যনির্বাহী।
এ ধরনের লোকের মাঝে পরাম্মুখতা ও তাওয়াক্কুল পরিপূর্ণ মাত্রায় সৃষ্টি হওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তা ছাড়া তাওয়াক্কুল নিজস্বভাবে ও যথাস্থানে বলিষ্ঠতর একটি ঈমানী বৈশিষ্ট্য। যে বান্দার ভাগ্যে তাওয়াক্কুল জুটেছে, সে আল্লাহ, তার কুদরত, তার যাবতীয় ভান্ডার ও বাহিনীকে সর্বক্ষণ নিজের সাথে অনুভব করে এবং প্রত্যক্ষ করে।
সুতরাং কুরআন তার মান্যকারীদেরকে নিজেদের ভেতরে তাওয়াক্কুলের গুণ সৃষ্টি করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করে। এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন, তা হলে কেউই তোমাদের ওপর জয়ী হতে পারে না। আর যদি তিনি সাহায্যের হাত তুলে নেন, অতঃপর কে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর ঈমানদারদের আল্লাহর ওপরই তাওয়াক্কুল ও ভরসা করা উচিত।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৬০)।
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আল্লাহকে ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই (শুধুমাত্র তিনিই মালিক ও উপাস্য)। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা শুধুমাত্র আল্লাহর ওপরই তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে।’ (সূরা তাগাবুন : আয়াত ১৩)।
অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা ভরসা কর সেই চির জীবন্ত সত্তার ওপর, যার লয় ও মৃত্যু নেই (এবং তাকে ছাড়া সবই নশ্বর)’। (সূরা ফুরকান : আয়াত ৫৮)। আরেক জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে বান্দা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নিঃসন্দেহে আল্লাহ নিজ কাজ সম্পন্নকারী।’ (সূরা তালাক : আয়াত ৩)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।