Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অহঙ্কার আল্লাহর চাদর

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৫ এএম

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ইজ্জত-সম্মান হচ্ছে আমারই পোশাক এবং গর্ব-অহঙ্কার হচ্ছে আমারই চাদর। তাই যে ব্যক্তি এ দুয়ের কোনোটি নিয়ে টানাটানি করবে, তাকে আমি কঠোর শাস্তি দেবো।’ (সহিহ মুসলিম)।
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযিম। আমরা যেন ইচ্ছাকৃতভাবে এমনকি নিজেদের অজান্তে ভুল করেও আল্লাহর চাদর নিয়ে টানাটানি না করি। এ হাদিসে সুস্পষ্ট যে, তিল পরিমাণ অহঙ্কারী হওয়ারও অনুমতি বা অধিকার আল্লাহ কোনো বান্দাকে দেননি। অথচ আমরা কত প্রকারের কত পরিমাণ অহঙ্কারে যে জড়িয়ে যাই, তা ভেবেও দেখি না। একটু-আধটু সম্মান ও সম্পদের কারণে তো বটেই, এমনকি আল্লাহর ইবাদত, ইলম, আমল নিয়েও অহঙ্কার করি।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাহ্যিক কিছু সুন্নতের ওপর আমল করেও আমরা কম-বেশি অহঙ্কারী হয়ে পড়ি। নিজেকে খুব আমলদার, পরহেজগার এবং সুন্নত পালনকারী ভেবে মনে মনে অন্যের ওপর শ্রেষ্ঠত্ববোধ করি। সেই আমিত্বের ভাব ও আচরণ নিয়ে সমাজে চলি। অথচ এই দম্ভ ও অহঙ্কারের ভাবটুকুই আমাদের যতটুকু ইলম, আমল বা সুন্নতের অন্তত বাহ্যিক পাবন্দি ছিল, সেগুলোকেও বেকার ও বরবাদ করে দেয় প্রতিনিয়ত।
হযরত সালামা ইবনে আকওয়া রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মানুষ যখন নিজেকে নিয়েই কেবল ব্যস্ত থাকে, তখন একপর্যায়ে তাকে দাম্ভিকের কাতারে লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়। তারপর দাম্ভিকের প্রাপ্ত সাজা-শাস্তি সেও পেয়ে থাকে।’ (সুনানে তিরমিজি)।
এখান থেকে একটি মহামূল্যবান পথনির্দেশ পাওয়া যায়। সেটি হলো, মানুষের একাকিত্ব যেমন আস্তে আস্তে মানুষকে হতাশা এবং মানসিক অসুস্থতার দিকে নিয়ে যায়; অনেকটা এ রকমভাবেই কোনো মানুষের একক স্বার্থচিন্তা, আত্মম্ভরিতা ও এককেন্দ্রিক উন্নতির প্রচেষ্টাও তাকে একসময় চরম দাম্ভিক ও অহঙ্কারী বানিয়ে ফেলে বা ফেলতে পারে।
কাজেই সর্বপ্রকার সাফল্য কামনা, হিতাকাক্সক্ষা ও কল্যাণচিন্তা আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে সবার জন্য ও সবার সঙ্গে হওয়া উচিত। এতে মহব্বত বাড়বে এবং দম্ভ-অহঙ্কার হৃদয়ে স্থান করতে পারবে না। হাদিসের এই শিক্ষা ও সতর্কতা বুঝতে পারা এবং মেনে চলাই হবে প্রকৃত অর্থে সুন্নতের অনুসরণ করা।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির প্রতি কিয়ামতের দিন আল্লাহ রহমতের নজরে তাকাবেন না। তাদের পবিত্রও (পাপমুক্ত) করবেন না। এমনকি তাদের সঙ্গে কোনো কথাই বলবেন না এবং তাদের কষ্টদায়ক শাস্তিতে নিমজ্জিত করবেন। এরা হচ্ছে- বৃদ্ধ যিনাকারী, মিথ্যুক শাসক ও দাম্ভিক ফকির।’ (সহিহ মুসলিম)।
আস্তাগফিরুল্লাহ, এই হাদিসের উল্লিখিত প্রথম ও দ্বিতীয় প্রকারের লোকদের আলোচনায় না গেলেও তৃতীয় প্রকারের আলোচনাটুকু না করলেই নয়। এখানে দাম্ভিক ফকির বলতে যদি আমরা প্রকৃত অর্থেই দরিদ্র ভিক্ষুকদের বুঝি, তা হলে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, দম্ভ ও অহঙ্কার কেবল ধন-দৌলত, ইজ্জত-শুহরতের সঙ্গেই শর্তবদ্ধ নয়। বরং এসব যার নেই, সেই প্রকারের বা সেই স্তরের মানুষও আত্মম্ভরিতা বা অজ্ঞতাবশত মিথ্যে অহঙ্কার অন্তরে, আচরণে ধারণ করতে পারে। মূলত অহঙ্কার একটি রোগ, আর রোগ তো ধনী-দরিদ্র যে কারো হতে পারে। এই অহঙ্কারকে বলা হয় ‘উম্মুল আমরায’ অর্থাৎ ‘রোগের মা’। কারণ, অহঙ্কার থেকেই নানাবিধ পাপ-অবাধ্যতার জন্ম হয়ে থাকে।
আরেক অর্থে, এখানে কেবল ফকিরদের দম্ভকে দোষারোপ করার বা দাম্ভিক ফকিরের প্রতি আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলার কারণ বা ব্যাখ্যা এমনটিও গ্রহণ করা যেতে পারে যে, সমস্ত মাখলুক, বিশেষ করে সমস্ত মানুষই আল্লাহর মোকাবেলায় চরম দরিদ্র, অসহায়, মুখাপেক্ষী। কাজেই মানুষমাত্রই আল্লাহর দৃষ্টিতে নগণ্য ফকির।
এ মানুষই যখন দম্ভ দেখায় তখন তা আল্লাহর চরম বিরক্তি ও রাগের কারণ হয়। এতটাই রাগ যে, আল্লাহর এসব লোকদের প্রতি তাকাতে বা কথা বলতেও রুচি হবে না। দুনিয়াতে আমরাও যার প্রতি অধিক বা চরম বিরক্ত হয়ে উঠি, তাকে বকাঝকা পর্যন্ত করতে মন চায় না। দেখলেও রাগ ওঠে। বস্তুত সেদিন এমনই হবে আল্লাহর মেজাজ, যা দাম্ভিক-অহঙ্কারীর মর্মন্তুদ বিপদ ডেকে আনবে। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।



 

Show all comments
  • Ameen Munshi ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২০ এএম says : 0
    অহংকার এমন এক মারাত্মক আচরণ। যা একজন বিনয়ী ও সফল ব্যক্তিকে তার সফলতার উচ্চস্থান থেকে মুহূর্তের মধ্যে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কোনো বক্তিকে গরিব বলে ছোট বললে অহংকার হবে না বরং তাকে হেয় করলেই তা অহংকার হিসেবে পরিগণিত হবে। এই ধরনের আচরণ থেকে বেচে থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২১ এএম says : 0
    লেখককে ধন্যবাদ। পৃথিবীর প্রথম পাপ কাজ হলো অহংকার। এ অহংকারের কারণেই ইবলিস আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করে নজির স্থাপন করেছিল। আরবিতে এ অহংকারকে উম্মুল আমরাজ বা সব রোগের জননী বলা হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mosharraf ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২১ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পর সব ফেরেশতাদেরকে সেজদার নির্দেশ দিলেন, সব ফেরেশতা সেজদা করলেও ইবলিস হজরত আদমকে সেজদা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। কুরআনের ভাষায় আল্লাহ বলেন- ‘সে অস্বীকৃতি জানাল এবং অহংকার করল। আর সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৩৪) এটাই হলো পৃথিবীর প্রথম অহংকারের সূচনা। শুধু তাই নয়, বরং পৃথিবীর প্রথম পাপের সূচনাও এটি। যে কারণে ইবলিসকে জান্নাত থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২২ এএম says : 0
    অহংকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। তিনি অহংকারী ব্যক্তিকে অনেক নেয়ামত থেকে বঞ্চিত রাখবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘দুনিয়াতে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার প্রকাশ করে, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার নিদর্শনাবলী থেকে বিমুখ রাখবো।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৪৬)
    Total Reply(0) Reply
  • কবির ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২৩ এএম says : 0
    লেখাটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আসলে অহংকারের ফলেই যুগে যুগে বড় বড় নেতা তথা ফেরাউন, নমরুদ, আবু লাহাব, উতবা, শায়বা এবং আবু জাহেলরা সত্যকে মেনে নিতে পারেনি। ইসলাম গ্রহণ করতে পারেনি। তারা নিক্ষেপিত হয়েছে ধ্বংসের অতল গহ্বরে। আবার যুগে যুগে সব নবি রাসুলই আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও বিনয়ের কারণেই লাভ করেছে সফলতা।
    Total Reply(0) Reply
  • তমিজ উদ্দিন ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২৪ এএম says : 0
    আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালের পতনের মুল অহংকার থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। তার ভয় এবং ভালোবাসার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালে সম্মানিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২৪ এএম says : 0
    আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে হাঁটবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। আবু বকর (রাঃ) বললেন: আমার কাপড়ের একটা অংশ ঝুলে পড়ে যায়; আমি বারবার সেটাকে টেনে নেই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি তো অহংকারবশতঃ সেটা কর না।” [সহিহ বুখারি (৩৪৬৫)]
    Total Reply(0) Reply
  • আমিন গাজী ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২৫ এএম says : 0
    আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে অহংকার থেকে মুক্তি দেন এবং আমাদেরকে বিনয় দান করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • mawlana shofiullah belali ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১১:৫৯ এএম says : 0
    onak dami kotha allah amadar k amol korar tawfiq dan koran..... amin
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Yousuf ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:৪১ পিএম says : 0
    আল হামদুলিল্লাহ। লিখাটি যেন আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের চলার দিক নির্দেশক হয়। লেখক কে অসংখ মুবারক বাদ। উত্তম প্রতিদানের মালিক একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।
    Total Reply(0) Reply
  • jamin Sarker ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৬:১৯ পিএম says : 0
    Very important & very deep thinking topics.
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম ১৮ মে, ২০১৯, ১১:২৭ এএম says : 0
    অহংকার সকল পাপের মূল
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন