Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সৎভাবে জীবিকা অর্জনের সহজতর পথ

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

মহান রাব্বুল আলামিন বৈধ ও পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করা এবং সৎপথে জীবিকা অর্জন করার প্রতি কুরআনুল কারিমে বারবার তাকিদ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে, তোমরা তা আহার করো এবং কোনোক্রমেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ১৬৮)।
এই আয়াতে কারিমায় বৈধ ও পবিত্র বস্তুসমূহকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে। সৎপথে ও ন্যায়ানুগ পন্থায় সে সকল জীবিকা অর্জন করা হয়, তা বৈধ ও হালাল। কিন্তু অসৎ পথে ও অবৈধভাবে অর্জিত বস্তু নিশ্চয়ই হারাম। অসৎ পথে জীবিকা অর্জন করা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করার শামিল। তাই মহান আল্লাহপাক শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং এর মাধ্যমে অসৎ পন্থায় জীবিকা অর্জনের পথও নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হয়েছে।
সৎভাবে জীবিকা অর্জনের গুরুত্বকে তুলে ধরে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই দুনিয়া শ্যামল সুন্দর, যে তাতে সৎপথে সম্পদ অর্জন করে এবং তা ন্যায়ভাবে ব্যয় করে, আল্লাহপাক তাকে এর সওয়াব দান করেন এবং বিনিময়ে তাকে জান্নাতে পৌঁছে দেন। তার যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন করে এবং অন্যায়ভাবে তা ব্যয় করে, আল্লাহপাক তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দেন।
আর অনেক ব্যক্তি অন্যায়ভাবে আল্লাহ ও তার রাসূলের সম্পদ আত্মসাৎ করে, তবে পরকালে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। (বায়হাকি : শোয়াবুল ঈমান)। এই হাদিস জীবিকা ও সম্পদ ন্যায় ও সৎভাবে অর্জন করার এবং ন্যায় ও মঙ্গলকর কাজে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে। এর বিপরীত পন্থা খুবই গর্হিত ও নিন্দনীয় পন্থা, যা মানুষকে দুনিয়ার জীবনে অধঃপতনের দিকে ঠেলে দেয় এবং পরকালে জাহান্নামের বাসিন্দা হতে বাধ্য করে।
তা ছাড়া এতিম, মিসকিন ও দুঃস্থদের মাল-সম্পদ আত্মসাৎ করাও মহাপাপ। যার পরিণতি জাহান্নামে গমন ছাড়া কিছুই নয়। এই পৃথিবীতে সৎপথে জীবিকা অর্জনের সহজতর পথের পরিচয় পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় উম্মতদের সামনে তুলে ধরেছেন। জীবিকা অর্জনের হাজারো পথ এবং তরিকা রয়েছে।
তবে সহজভাবে কেমন করে ন্যায় ও মঙ্গলকর পথটি বেছে নেয়া যায়, এর প্রতি দিকনির্দেশনা প্রদান করে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, (১) ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার ধর্মকে পরিপূর্ণ, সুঠাম ও সংশোধন করে দিন, যা আমার সকল কাজ-কর্মকে পবিত্র করবে।’ (২) ‘আপনি আমার পার্থিব দুনিয়ার ব্যাপার ও কর্মকান্ডসমূহ সুঠাম ও সুগঠিত করে দিন, যেগুলোতে আমার জীবিকা রয়েছে।’ (৩) ‘আপনি আমার পরকালকে সুন্দর ও সুঠাম করে দিন, যেখানে আমাকে অবশ্যই ফিরে যেতে হবে, প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (৪) ‘আপনি আমার হায়াতকে কল্যাণ, মঙ্গল ও নেক আমলের জন্য বৃদ্ধি করে দিন এবং (৫) আমার মৃত্যুকে সকল প্রকার অনিষ্ট বেদনা থেকে আরামদায়ক করে দিন।’ (সহিহ মুসলিম)।
এই হাদিসে জীবন পরিক্রমার পাঁচটি স্তরের কল্যাণ ও মঙ্গলের লক্ষ্যে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রার্থনা ও মুনাজাত বিবৃত হয়েছে। জীবন চলার পথে এই পাঁচটি অধ্যায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ। এগুলোর সবকটিই একটির সাথে অপরটি গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। এর একটিকে বাদ দিয়ে অপরটির পরিপূর্ণতা কল্পনা করা যায় না।
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই হাদিসে মৃত্যুকে সকল অনিষ্ট হতে আরামদায়ক করার প্রার্থনা করা হয়েছে। এই প্রার্থনা সকল মানুষেরই করা উচিত। তবে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করা এক শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। এই নেয়ামত লাভের অর্থ সুপ্রশস্ত করে তোলে সৎপথে উপার্জিত জীবিকা। প্রকৃতপক্ষে যারা অসৎ পথে জীবিকা অর্জন করে তারাই দুনিয়াদার।
হাদিসে আছে ‘দুনিয়াদার লোকেরা স্বাভাবতই গোনাহ হতে রক্ষা পেতে পারে না।’ (বায়হাকি)। তাই তাদের মৃত্যু কোনোক্রমেই আরামদায়ক হয় না। তা ছাড়া উল্লিখিত হাদিসে কল্যাণ ও মঙ্গলকর্ম সম্পাদনের জন্য দীর্ঘায়ু লাভের কামনা করা হয়েছে। এই পৃথিবীতে মানুষ দীর্ঘকাল বেঁচে থাকলে অধিকহারে পুণ্য কর্ম করার সুযোগ যেমন পায়, তেমনি বদ আমলও বেশি করার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু তাই বলে, নেকির পরিবর্তে গুনাহকে যারা অবলম্বন করে তারা প্রকৃতই অকৃতজ্ঞ ও অভিশপ্ত। তাদের জন্য দুনিয়া এবং আখিরাতে আল্লাহর পক্ষ হতে কোনো পুরস্কারের ব্যবস্থা নেই। আবার পরকালে প্রত্যাবর্তন অবশ্যম্ভাবী। সেখানে নেক ও বদ আমলের জন্য সকলেরই ফল ভোগ করতে হবে।
আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা প্রত্যক্ষ করবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও প্রত্যক্ষ করবে।’ (সূরা যিলযাল : আয়াত ৬-৭)। মূলত, দুনিয়ার জীবনে অসৎ পন্থায় জীবিকার্জনের দ্বারা নিজেকে ক্লেদাক্ত ও কলুষিত করে তুললে পরকালের সুন্দর ও মনোহর প্রত্যাবর্তনস্থল কামনা করা বাতুলতা মাত্র। শুধু তা-ই নয়, সৎভাবে অর্জিত জীবিকার নির্যাস হয় মঙ্গল ও কল্যানের ধারক ও বাহক।
এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, ‘বিশ্বস্ত সত্যবাদী মুসলমান ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন শহীদদের সঙ্গী হবে।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম)। সর্বোপরি ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। ইসলাম ধর্মের ছায়াতলে আশ্রয়গ্রহণকারী ব্যক্তি অসৎপন্থায় জীবিকার্জনের লক্ষ্যে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে না। ইসলাম ধর্মে যে সব কাজের অনুমোদন নেই, ধার্মিক মুসলমান ব্যক্তি কোনো কালেই সেগুলোকে সমর্থন করেন না।



 

Show all comments
  • Mohammad Mosharraf ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৮ এএম says : 0
    নবী রাসূলগণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তাঁরা নিজ হাতে কর্ম সম্পাদনকে অধিক পছন্দ করতেন। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে প্রাথমিক সময়ে ছাগল চড়ানো ও পরবর্তীতে খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যবসায়িক দায়িত্ব পালনের বর্ণনা পাওয়া যায়, যা নিজ হাতে জীবিকা নির্বাহে উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ameen Munshi ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৯ এএম says : 0
    হালাল জীবিকা অর্জন করা একজন মুমিনের জন্য ফরজ।আর আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ইবাদতের জন্য।ইবাদত করতে হলে সুস্থ শরিরের প্রয়োজন।সুস্থ শরিরের জন্য সুষম খদ্যের দরকার।খাদ্যার্জন পূরণ করার জন্য সম্পদের প্রয়োজন।এসম্পদ অর্জনের উপায় বৈধ ভাবে হওয়া চাই।তাই বলা হয়েছে- طلب كسب الحلال فريضة بعد الفريضة অর্থাৎ ফরয ইবাদাত আদায়ের পর হালাল রুজি রোজগার হচ্ছে ফরয।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২০ এএম says : 0
    শুকরিয়া। লেখাটি থেকে আমাদের মতো পাঠকরা অনেক উপকৃত হবে। এজন্য ইনকিলাব পরিবারের সাফল্য কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • আমিন গাজী ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২১ এএম says : 0
    আল্লাহর দেয়া রিযিক আল্লাহর নির্দেশের বাহিরে অর্জন করলে তার পরিনাম যে কত ভয়াবহ আমাদের কে তা মাথায় রাখা উচিত। আল্লাহ আমাদের হালাল রুজি করার তৌফিক দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • তমিজ উদ্দিন ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২২ এএম says : 0
    হালাল উপার্জন ইবাদাত-বন্দেগি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পূর্বশর্ত। সঠিক পথে কষ্টোপার্জিত অর্থে জীবনধারণ, আহার গ্রহণকে ইসলাম আবশ্যক করেছেন। একজন পরিপূর্ণ ঈমানদারের প্রধান দায়িত্ব-কর্তব্যও তাই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানবগোষ্ঠী! পৃথিবীতে যা আছে তা থেকে হালাল, পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষণ কর এবং শয়তানের অনুসরণ কর না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন। (সুরা বাক্বারা আয়াত ১৬৮)
    Total Reply(0) Reply
  • আরিয়ান রাসেল ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২৩ এএম says : 0
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে সৎ পথে উপার্জন উদ্বুদ্ধ করতে সব সময় নসিহত করতেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি উপার্জিত হারাম সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে তবু তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং ওই সম্পদ থেকে বরকত উঠিয়ে নেয়া হয়। যদি সে ওই সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখে তবে (সে সম্পদ) তার জন্য জাহান্নামের রাস্তাকে সহজ করে দেয়া হয়। (মিশকাত)
    Total Reply(0) Reply
  • বাকী বিললাহ ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২৩ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা মুসলিম ‍উম্মাহকে বৈধ পথে উপার্জন করার তাওফিক দান করুন। হালাল উপার্জিত অর্থ তাঁর পথে ব্যয় করার তাওফিক দান করুন। জীবিকার উৎস হোক হালাল উপার্জন- এ প্রত্যাশা হোক সবার। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Tipu ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৬:৪২ এএম says : 0
    Very good writing. We need these sorts of writing Which w Very good writing. We need these sorts of writing because everyday we face these sorts of matters. Thanks
    Total Reply(0) Reply
  • Shahidullah ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৪ এএম says : 0
    মাগরিব নামাজের কাজা নামাজের নিয়ম কি?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন