Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কক্সবাজারের সর্বত্র নৌকা ও ধানের শীষ

কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সরগরম হয়ে ওঠছে কক্সবাজারের চারটি নির্বাচনী এলাকা। হাটে-ঘাটে চায়ের দোকানে সবর্ত্রই বইছে এখন নির্বাচনী হওয়া। কক্সবাজারের ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫৮০ ভোটারের আলোচনার প্রধান বিষয় এখন বহুল প্রত্যাশিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর কি আদৌ নির্বাচন হচ্ছে? নির্বাচন হলে কোন জোট বিজয়ী হচ্ছে? ১৪ দলীয় জোট না ২০ দলীয় জোট? নৌকা না ধানের শীষ? এসব আলোচনায় নির্বাচনী জটিল সমীকরণ মেলাতে অনেকের নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামগঞ্জে।
এমনিতেই বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি খ্যাত কক্সবাজারের চারটি অসনই ৫ জানুয়ারির সেই ভোটারবিহীন নির্বাচনে দখলে নিয়েছিল ১৪ দলীয় জোট। তখন ভোট ছাড়া এমপিরা কক্সবাজারের চারটি আসনই ভাগ করে নিলেও এখন চারটি আসনেই শক্ত লড়াইয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন বর্তমান এমপিরা।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনে চকরিয়া-পেকুয়ার আসনটি ১৪ দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলেও এখন চারটি আসনেই আ.লীগের প্রার্থী দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার-৩ সদর-রামুর আসনে জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুর নাম ঘোষণা দিয়েও আ. লীগের বর্তমান এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের শক্ত প্রতিরোধের মুখে বাবলুকে প্রত্যাহার করে সাইমুম সরওয়ার কমলকেই মনোনয়ন দেয়া হয়।

হাটবাজারে চায়ের দোকানের সরব নির্বাচনী আলোচনা থেকে জানা গেছে, টানা ১০ বছর আ. লীগের শাসনকালে কক্সবাজারের ব্যাপক উন্নয়নের কথা তুলে ধরছেন নৌকার সমর্থকরা। তারা মনে করছেন, কক্সবাজারের জনগণ নৌকায় ভোট দিয়ে আবারো আ. লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে শেখ হাসিনাকে চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দেবেন।

বিরোধী নেতাকর্মীরাদের মতে, টানা ১০ বছরে আ. লীগ সরকার শত শত মামলায় হাজার হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে আসামি করে জেলে পুরে, ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে। তবে তাদের মনোবল ভাঙতে পারেনি সরকার। তারা এখন তারা ঘর থেকে বের হতে শুরু করেছে। তাদের মতে, আগামী নির্বাচন ৫০ ভাগ সুষ্ঠু হলেও খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী করতে কক্সবাজারের চারটি আসনেই ধানের শীষের প্রার্থীদের বিপুলভাবে ভোটে দিয়ে বিজয়ী করবেন জনগণ।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৯০ হাজার ৬৭৫ জন। সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদ এখনো ভারতের শিলংয়ে প্রবাসী। গত তিন বছর ধরে তিনি সেখানে বন্দী জীবন কাটিয়ে সম্প্রতি বেকসুর খালাস পেয়ে এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায়। তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও এই আসনে সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী সাবেক এমপি অ্যাড হাসিনা আহমদ বিএনপির প্রার্থী।

অপর দিকে, আ.লীগ থেকে এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও চকরিয়া উপজেলা আ.লীগের সভাপতি জাফর আলম। তিনি জাতীয় সংসদে নির্বাচন করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন।
জাতীয় পার্টি থেকে এখানে আবারো মনোনয়ন পেয়েছেন গতবারের ভোট ছাড়া নির্বাচনের এমপি মৌলভী ইলিয়াছ। মৌলভী ইলিয়াছ এখানে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আসারও কোনো সুযোগ আছে বলে কেউ মনে করেন না।
সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের অতীতের উন্নয়ন কার্যক্রম তাকে এবং তার পরিবারের যে কাউকে সামনে অনেক দিন পর্যন্ত এমপি হতে সহায়ক হবে বলেই মনে করেন এলাকার মানুষ। তবে আ.লীগ নেতা জাফর আলম জনগণের ভোটে এমপি হবেন বলেই মাঠে সরব রয়েছেন।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৯৬ হাজার ৯৬ জন। এখানে ৫ জানুয়ারির সেই নির্বাচনে এমপি হয়েছেন আশেক উল্লাহ রফিক। এই আসনে এবারো আ.লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি আশেক উল্লাহ রফিক।
২০০৮ সালের সংসদে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুর রহমান আযাদ চারদলীয় জোটের এমপি ছিলেন এ আসনে। সেই সুবাদে আসনটি এবারো জোটগতভাবে জামায়াত পেয়েছে। আদালত অবমাননার একটি মামলায় হামিদুর রহমান আযাদ জেল খাটায় নির্বাচনে অংশ নিতে আইগত জটিলতা দেখা দিলেও শেষ মুহূর্তে তার মনোনয়নপত্র বৈধ হয়।
এই আসনে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের এখনো সংশয় কাটেনি। সকলের প্রশ্ন কে হচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থী? তবে দু’জনের যে কোনো একজন ধানের শীষের প্রার্থী হলেও বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞজনেরা।

এখানে পারিবারিক ঐতিহ্য ও জনবল এদিক থেকে আলমগীর ফরিদ হামিদ আযাদের চেয়ে এগিয়ে বলেই মনে করা হয়। এ ছাড়াও ধানের শীষের আলমগীর ফরিদ আর নৌকার আশেক উল্লাহ চাচা-ভাতিজা হওয়ায় আলমগীর ফরিদের প্রভাব বেশি হওয়ায় সম্ভাবনার দিক থেকে হামিদ আযাদের চেয়ে তিনি এগিয়ে বলেই মনে করেন ভোটাররা।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে ভোটার সংখ্যা চার লাখ ১৪ হাজার ১৮৫ জন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচিত বর্তমান এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এ আসনে আবারো নৌকার মনোনয় পেয়েছেন।
জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুকে এখানে ১৪ দলের প্রার্থী ঘোষণা করা হলে আন্দোলন করে তা ঠেকিয়ে নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করেন কমল। তার কর্মী-সমর্থকরা বিএনপির সাথে জামায়াত কর্মীদের অনৈক্যকে কাজে লাগিয়ে বিজয়ের চিন্তা করছেন বলে জানা গেছে।
এখানে ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎসজীবী বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল। এখানে জামায়াত স্বতন্ত্র নির্বাচন করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের চাপে তা হয়েনি। এ আসনে বিগত উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের মাঝে ভু বোঝাবুঝি রয়েছে। এই ভুল বোঝাবুঝি নিরসন করা গেলে এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৬৫ হাজার ৮২৪। এখানে চার বারের সাবেক এমপি ও কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহন চৌধুরী বিএনপিধানের শীষের প্রার্থী।
এ আসনে আ.লীগের সেই এমপি আব্দুর রহমান বদি দুর্নীতির মামলা ও মাদক সংশ্লিষ্টতাসহ নানা করণে ব্যাপক সমালোচিত হওয়ায় আ. লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেলেও এখানে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বদির বউ শাহীন আক্তার।
এখানে বটবৃক্ষের মতো চার বারের সাবেক এমপি প্রবীণ রাজনীতিবিদ শাহজাহান চৌধুরী তার মেয়ের বয়সী বদির বউয়ের সাথে প্রতিদ্বন্দি¦তা বেশ কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে ভোটারদের মধ্যে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ