Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুমিল্লায় একই পরিবারের ৩ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীই হতে চান কোরআনে হাফেজ

প্রতিবন্ধী হয়েও ওরা আলোর পথে এগিয়ে চলছে

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:৩৯ পিএম

অদম্য মনবল আর ইচ্ছা শক্তির কাছে হার মেনেছে শারীরিক সীমাবন্ধতা। বাস্তবতার কাছে হার না মেনে তার সাথে যুদ্ধ করে চলছেন একই পরিবারের ৩ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী । ওরা নিজের শারীরিক অক্ষমতাকে আগলে রেখে নিজের আগ্রহ আর প্রচেষ্ঠাকে পুঁজি করে ওরা কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আলোর পথে এগিয়ে চলছেন। 

জানা যায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা নয়কামতা গ্রামের শ্রমীক আব্দুল মান্নানের ৪ সন্তানের মধ্যে ৩ জনই জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। আর্থিক সংকট ও অভাব-অনটনের সংসারে ৩ প্রতিবন্ধী সন্তানদের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য তার নেই। সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা তার ভাগ্যে জুটে না। আব্দুল মান্নান জানায়, তার সাথে পার্শ্ববর্তী এলাকার হোসনেয়ারার বিয়ে হয়। বিয়ের ২ বছর পর প্রথম একটি ফুটফুটে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। এ মেয়েটির নাম রাখা হয় নাছরিন আক্তার (১৬)। তার ২ বছর পর একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। ছেলেটির নাম রাখা হয় সাজ্জাদ হোসেন (১৪)। জন্মের ৩/৪ বছর পর সাজ্জাদের দু’চোখের নিচে কালো কালো দাগ দেখতে পেয়ে সাজ্জাদের বাবা তাকে স্থানীয় ডাক্তারকে দেখালে সাজ্জাদ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলে ডাক্তার জানায়। পরে আরেকটি সতেজ ও ফুটফুটে ছেলে নাজমুল হাসান (১১) জন্ম নেয়। তার ক্ষেত্রেও দেখা দেয় একই সমস্যা । এরপর সর্বশেষে ছেলেটি জন্ম নেওয়া সুজন (৯) তারাই একই সমস্যা দেখা দেয়। তাদের পিতা জানায়, গত ৫/৬ বছর পূর্বে ৩ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে তিনি কুমিল্লা ক্যন্টারমেন্টের সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সেখানে একজন এমবিবিএস ডাক্তারকে দেখিয়েছিলেন। তিনি তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেছেন, এদের একজনের চিকিৎসা বাবদ ৩ লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানায়। ডাক্তার আরো বলেন যে, চিকিৎসার পরও এরা ভালো হতে পারে এবং না হতে পারে বলে জানায়। এদিকে সাজ্জাদ, নাজমুল হাসান, সুজন ওরা ৩ জনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও তারা তাদের নিজের শারীরিক অক্ষমতাকে আগলে রেখে নিজের আগ্রহ আর প্রচেষ্ঠাকে পুঁজি করে ওরা কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আলোর পথে এগিয়ে আসার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। দৃষ্টিহীন সাজ্জাদ বাড়ির পাশের একটি মসজিদে মোক্তবে কোরআন শরীফ পড়া শোনো তা মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সে ইতিমধ্যে ৯ পারা কোরআন শরীফের আয়াত মুখস্থ করেছেন। সাজ্জাদের দেখাদেখি তারই ছোট দু’ভাই দৃষ্টিহীন নাজমুল হাসান ও সুজন ওরা দু’জনে মোক্তবে পড়ে ইতিমধ্যে প্রথম জন কায়দা মুখস্থ করে আলিম লাম পড়ছেন। দ্বিতীয়জন ১০টি সূরা মুখস্থ করে কায়দা পড়ছেন। মোক্তবের শিক্ষক হাফেজ মোঃ মামুনুর রশিদ বলেন, ওরা ৩ জনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও তাদের আগ্রহ ও ইচ্ছার কারণে কোরআন শরীফ দেখে দেখে পড়তে না পাড়লেও তারা কোরআন শরীফ পড়া শোনে মুখস্থ করে চলছেন এবং তারা অন্যনা ছাত্রের তুলনায় খুব ভাল করছেন বলে ওই শিক্ষক জানায়।
হোসনেয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, চার সন্তানের মাধ্যে তিন সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়াটা তাদের জন্য অভিশাপ। নিত্যই অভাব তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সন্তানদের খাবার যোগাড় করাই তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি, সমাজসেবক, সমাজসেবামূলক সংগঠন অথবা সরকারি কোনো সাহায্য সংস্থা মানবিক দিক-বিবেচনা করে এই অসহায় পরিবারটির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে হয়তো তারা আবার সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে পারবে, এটাই তাদের প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ