বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামের বিরুদ্ধে ‘আর্নাথ এর ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা’ :
‘আর্নাথ’ ছিল ইরাকের ‘কাখ’ রাজ্যের ফরাসি শাসক। তার পূর্ণ নাম রিনোদী শায়তুন। কার্ক অবস্থিত ‘মৃত সাগর’ হতে দক্ষিণ পূর্বদিকে। মুসলমানদের হাতে দীর্ঘ দিন বন্দি থাকার পর ক্রুসেডার ‘আর্নাথ’ কার্ক দুর্গ হতে সে লোহিত সাগরে ধ্বংসাত্মক হামলা আরম্ভ করে। তখন মুসলমানদের নেতৃত্বে ছিলেন সালাহউদ্দীন।
তিনি ক্রুসেডারদের মোকাবেলায় আত্মনিয়োগ করে ছিলেন। লোহিত সাগরে তখন মুসলমানদের কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। তাই ইসলামী ইতিহাসে লোহিত সাগর বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী ছিল। কেননা একটি সড়কপথ হেজাজের দিকে গিয়েছিল। সেখান থেকে ‘হারামাইন শরীফাইন’ (মক্কা ও মদীনা) খুব দূরে ছিল না, মাত্র একদিনের দূরত্বে। মুসলমানগণ লোহিত সাগরকে ইসলামী সাগর মনে করতেন। তারা পূর্ণভাবে আগ্রহী ছিলেন যে, কোন বিদেশি- ভারতীয় কিংবা চীনা, অথবা ইটালীয় বা অপর কোন নৌযানকে এ সাগরের ওপর দিয়ে চলাচল করতে দেয়া হবে না, কেননা এর ওপারে রয়েছে এডেন সীমান্ত। আর এ নৌপথ দিয়ে ব্যবসা- বাণিজ্য মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেখানে আর কারও আধিপত্য ছিল না।
ঐতিহাসিক বর্ণনানুযায়ী ক্রুসেডারেরা ইজাব হতে হেজাজের তীরবর্তী লোহিত সাগর অতিক্রম করে। তারা ‘ইয়াম্ব’ এর নিকটবর্তী ‘আল হোবা’ নামক তীরবর্তী স্থানে অবতরণ করে এবং হাজীদের কাফেলাগুলোর ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে এবং মদীনা মোনাওয়ারা হতে এক দিনের দূরত্বে অবস্থিত এ স্থানে অবস্থান করে, এমনকি তারা মদীনাতুর রাসূলে প্রবেশে উদ্যত হয়।
উদ্দেশ্য রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর কবর খনন করে তার পবিত্র দেহ সেখান থেকে সরিয়ে ফেলবে, কিংবা গুম করে ফেলবে অথবা তাদের দেশে নিয়ে যাবে এবং সেখানে দাফন করবে। এর ফলে মুসলমানগণ তার কবর জিয়ারতের সুযোগ হতে বঞ্চিত হবে। এ সম্পর্কে কাজী আবদুর রহীম ইবনে আলী আল বিসানী তার এক সাহিত্যক আরবী ‘রেসালায়’ যে ব্যাখ্যা করেছেন তার মর্ম এই;
ক্রুসেডারেরা লোহিত সাগরে আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল, উদ্দেশ্য হজ গমণেচ্ছুদের গতিপথ রোধ করা, মদীনা আক্রমণের মাধ্যমে মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত হানা এবং মুসলমানদের কেবলা সম্পর্কে তাদের তা’না তিরস্কার এবং ইয়েমেনে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ও পর্বতমালা অধিকার করা। অর্থাৎ ক্রুসেডারেরা চেয়েছিল দক্ষিণে এডেনে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং উত্তরে ইলা-এ তাদের শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা, যাতে লোহিত সাগরে তাদের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং তা কুক্ষিত করা সম্ভব হয়। ফলে ভারত মহাসাগর ও পূর্ব প্রাচ্যের একচ্ছত্র বাণিজ্য তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
সিরিয়ায় অবস্থানকারী গাজী সালাহউদ্দীনের নিকট এসব খবর পৌঁছে যায়। তিনি মিসরে নিয়োজিত তার নায়েব সাইফুদ্দীনের নামে প্রেরিত পত্রে এই মর্মে নির্দেশ প্রদান করেন যে, লোহিত সাগরে নিয়োজিত ক্রুসেড শত্রুদের বিরুদ্ধে মিসরের হোসামুদ্দীন লুলুর নেতৃত্বে একটি নৌবহর প্রস্তুত করা হোক। বৃহদাকারের নৌযানগুলোর সমন্বয়ে নৌবহর প্রস্তুত সম্পন্ন হয় এবং সেগুলো বিক্ষিপ্তভাবে বহু উটের পীঠে উঠিয়ে সুয়েজ নদীতে প্রেরণ করা হয় এবং নৌবহর আকারে লোকবলের মাধ্যমে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয় এবং এসব ইসলামী নৌযান লোহিত সাগরে অবতরণ করে। নৌ অভিযানের প্রথম পর্ব এভাবে সচল ও সক্রিয় উঠে।
অতঃপর মুসলিম সেনাপতি হোসামুদ্দীন ইলা অবরোধ করেন এবং নৌ ক্রুসেডারদের ওপর জয়লাভ করেন এবং সবাইকে বন্দি করেন এবং এরপর তিনি ক্রুসেডারদের নৌকাগুলোকে ধাওয়া করতে থাকেন। এমনকি তারা ইজাবের নিকট অবস্থান নেয়, যা হোরা তীরের হেজাজের তীরবর্তী এলাকা এবং ক্রুসেডারদের কেউ কেউ নৌকায় আশ্রয় নেয় এবং কেউ কেউ পর্বত মালায়। মুসলমানগণ বন্দি মুসলিম ব্যবসায়ীদের মুক্ত করেন।
অতঃপর হোসামুদ্দীন লুলু ও তার লোকজন হেজাজের স্থল ভাগ ধরে পরাজিতদের ধাওয়া করেন এবং ক্রুসেডারদের পর্বত মালায় বিতাড়িত করেন। তখন তারা মদীনা মোনওয়া থেকে এক দিনের দূরত্বে অবস্থান করছিল এবং তাদের সকলকে বন্দি করেন। তখন হজের মওসুম নিকটবর্তী ছিল। হোসামুদ্দীন লুলু দুই জন ক্রুসেড বন্দিকে মিনায় প্রেরণ করেন। সেখানে তাদেরকে কোরবানির জন্য কাবায় প্রেরিত পশুদের ন্যায় জবাই করা হয় এবং বাকি কয়েদিদের নিয়ে তারা মিসরে প্রত্যাবর্তন করে। ওই দুইজনের নাম জানা যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।