Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হক নষ্ট করা

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কারো হক বা অধিকার নষ্ট করা, ধ্বংস করা, খর্ব করা ইত্যাদিকে ‘হকতলফী’ বলা হয়। ‘গছব’ মানে অনুরূপ কারো সম্পদ-সম্পত্তি আত্মসাত করা, হরণ করা, জোরপূর্বক বা জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ অন্যায়-জুলুমের মাধ্যমে কারো ন্যায্য অধিকার হরণ করা।
ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র এমনকি আন্তর্জাতিক- সর্বক্ষেত্রেই অধিকার হরণের অন্ত নেই। ক্ষেত-ফসল, ফলমূল, পানির মাছ, ওষুধ দিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা, সহায়-সম্পদ, ঘরবাড়ি, ভূমি ইত্যাদি অন্যায় ও জোরপূর্বক দখল করা, সবই গছব ও হকতলফীর অন্তভর্‚ক্ত। এসব কার্যকলাপ সমাজে সর্বত্র ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এ সম্পর্কে কুরআনের বহু আয়াতে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে এবং এতদসংক্রান্ত অনেক হাদিসও রয়েছে। সাধারণত হক বা অধিকার দুই প্রকারের- ‘হুকুকুল্লাহ’ বা আল্লাহর অধিকার এবং ‘হুকুকুল ইবাদ’ বা বান্দার অধিকার। এই দ্বিতীয় প্রকারের অধিকারগুলোর মধ্যে মা-বাবার অধিকার সর্বাগ্রে। অর্থাৎ সন্তানের প্রতি যেমন বাবা-মায়ের নানা অধিকার রয়েছে, তেমনি বাবা-মায়ের প্রতিও সন্তানের বহু অধিকার রয়েছে।
এভাবে স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, বিধবা, এতিম, অসহায়-অভাবী, রোগী, শ্রমিক-মজুর, অতিথি, প্রভৃতি শ্রেণীর পরস্পরের মধ্যে নানা অধিকার রয়েছে। ইসলাম প্রদত্ত এসব অধিকারের বিবরণ কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু অনস্বিকার্য যে, মানবতার দোহাই দিয়ে সর্বত্রই এসব মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ দৃশ্যমান। এ সম্পর্কে উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি হাদিস নিম্নে দেয়া হলো :
০১. হযরত আবু উমামা বাহেলি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে মুসলমানের হক অধিকার করছে, আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের আগুন তার জন্য অবধারিত করে রেখেছেন এবং জান্নাত তার জন্য হারাম করেছেন। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে আরজ করে, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), যদি সামান্য বস্তু হয়? বললেন, ‘মেসওয়াকের কাঠি সমান হলেও (অতি সামন্য হলেও)।’ (মুসলিম)
০২. রাসূল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি এক আঙ্গুল পরিমাণ জমি অন্যায়ভাবে অর্জন করেছে, কেয়ামতের দিন সে টুকরো ভ‚মির সাত স্তর পর্যন্ত তার গর্দান শিকলবদ্ধ করে দেয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত) বুখারি বর্ণিত হাদিসে আছে, সাত তবক জমি পর্যন্ত তাকে দাবিয়ে দেয়া হবে।
০৩. হযরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করে, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আপনার কি অভিমত, যদি কোনো ব্যক্তি আমার কাছ থেকে আমার মাল ছিনিয়ে নিতে চায়? তিনি বললেন : ‘তুমি তাকে দেবে না’। সে বলল, আপনার কী মত, সে যদি আমাকে হত্যা করতে উদ্ধত হয়? তিনি বললেন : ‘তুমি তার সাথে লড়াই করো’। সে বলল, আপনার কী মত, সে যদি আমাকে হত্যা করে? তিনি বললেন : ‘তবে তুমি শহিদ বলে গণ্য হবে’। সে বলল, আপনার কী মত, যদি আমি তাকে হত্যা করি? রাসূল (সা.) বললেন : ‘সে হবে জাহান্নামি, সে অপরের মাল আত্মসাত করার কারণে নিহত হয়েছে। (মুসিলম)।
০৪. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি নিজের মালের হেফাজত করতে গিয়ে নিহত হয়েছে, সে শহিদ। (মুসলিম)।
০৫. হযরত মুখারেক ইবনে সুলাইম (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর খেদমতে এসে আরজ করে, যদি কেউ আমার কাছে এসে আমার মাল ছিনিয়ে নিতে চায়? রাসূল (সা.) বললেন : তাকে তুমি আল্লাহকে ভয় করতে বলো।’ সে বলল, লোকটি যদি আল্লাহকে ভয় করে ওই কাজ থেকে বিরত না হয়? রাসূল (সা.) বললেন : ‘তোমার আশেপাশের মুসলমানদের সাহায্য প্রার্থনা করো’।
সে বলল, যদি আমার আশেপাশে কোনো মুসলমান না থাকে? রাসূল (সা.) বললেন : সুলতান ও শাসনকর্তার সাহায্য চাও’। লোকটি বলল, সুলতান বা শাসনকর্তা যদি আমার থেকে দূরে সরে যায়? রাসূল (সা.) বললেন : ‘(এমতাবস্থায়) তোমার মালের হেফাজতের জন্য লড়াই করো, এমনকি তুমি শহিদদের অন্তভর্‚ক্ত হয়ে যাবে অথবা তোমার মাল রক্ষা করবে।’ (নাসায়ি)।
মাল-দৌলত, সহায়-সম্পদ, যা বৈধভাবে অর্জিত, তা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতস্বরূপ, যার হেফাজতের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত, এতে সওয়াবও রয়েছে। একে বিনষ্ট ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। মাল-দৌলতের হেফাজত করতে গিয়ে প্রাণ হারালে শহিদের মর্যাদা লাভ করবে। পক্ষান্তরে অন্যায়ভাবে কোনো মাল-সম্পদ গ্রাস করলে এবং ধোকাবাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্জন করলে, তা হবে হারাম এবং সে ব্যক্তি হবে জাহান্নামি।



 

Show all comments
  • Ameen Munshi ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৩ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদেরকে বান্দার হক নষ্ট করা থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন, আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mosharraf ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৫ এএম says : 0
    একদা নবীজি (দ.) তার পাশে উপবিষ্ট সাহাবিদের বলেন, ‘তোমরা কি জানো, প্রকৃত গরিব কে? সাহাবিরা বলেন, আমাদের মধ্যে তো গরিব তাদের বলা হয়, যাদের কাছে ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা থাকে না। তখন প্রিয়নবী (সা.) বললেন, প্রকৃতপক্ষে আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে গরিব সে, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোযা, যাকাত সব কিছু নিয়ে উঠবে; কিন্তু সে দুনিয়ায় কারো সঙ্গে মন্দ আচরণ করেছে, কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে আঘাত করেছে, কাউকে খুন করেছে ইত্যাদি। সেদিন তার নেকিগুলো দিয়েই হকদারদের হক পরিশোধ করা হবে। যদি তার নেকি শেষ হয়ে যায়, তাহলে এই হকদারদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (বুখারি : ২/৪৩৫)।
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৭ এএম says : 0
    ধন্যবাদ। লেখাটি পড়ে অনেক উপকৃত হলাম। আল্লাহ হক নষ্ট থেকে আমাদের দূরে রাখুন। আমীন
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mosharraf ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৮ এএম says : 0
    প্রত্যেক মুসলমানের চারটি হক রয়েছে : অসুস্থ হলে তার শুশ্রূষা করা, বিপদে তার সাহায্য করা, মৃত্যু হলে তার দাফন-কাফনে শরিক হওয়া ও সাহায্য চাইলে সাহায্য দান করা। যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ, কোনো লোক ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলমান হতে পারে না যতক্ষণ না সে তার নিজের জন্য যা পছন্দ করে তার ভাইয়ের জন্যও তাই-ই পছন্দ করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Monir ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৯ এএম says : 0
    সমাজের সবার সঙ্গে বিনয়ের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে। একজন মানুষ অন্য মানুষের কাছ থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার রাখে। সে মুসলিম হোক আর অমুসলিম হোক। কারো প্রতি খারাপ আচরণ করা যাবে না। বিনয়, নম্রতা ও উত্তম চরিত্রের পরিচয় বহন করে। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ও তার সাহাবাগণ।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪২ এএম says : 0
    আজকে আমরা অনেকেই আছি খুব ভাল নামাজ পড়ি কিন্তু নিজের আপনজনকে আঘাত করি। কষ্ট দিই। অধিকার বঞ্চিত করি। আমরা ধর্ম থেকে দূরে ছিটকে পড়েছি। তাই অন্যের অধিকার সংরক্ষণ ও পাওনা আদায়ে অভাবিত শিথিলতা প্রদর্শন করছি। যা মোটেই ঠিক নয়। আমরা নষ্ট সমাজরীতি অনুসরণ করছি। ধর্মের মিরাস নীতির বাস্তব প্রয়োগ না করে এ সম্পর্কে অনবগতই থেকে যাচ্ছি। আমাদের এ অজ্ঞতা পাপের দ্বার উন্মোচিত করে। ফলে আমরা পৈতৃক সম্পত্তিতে সুষম বণ্টনে ব্যর্থ হই। বণ্টন বৈষম্যের শিকার হই। বঞ্চিত করি বোনকে। বোন লজ্জায় কিংবা সম্মান রক্ষার্থে তার পাওনা দাবি করছেন না।
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১০:৫২ এএম says : 0
    রাসূল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি এক আঙ্গুল পরিমাণ জমি অন্যায়ভাবে অর্জন করেছে, কেয়ামতের দিন সে টুকরো ভ‚মির সাত স্তর পর্যন্ত তার গর্দান শিকলবদ্ধ করে দেয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত) বুখারি বর্ণিত হাদিসে আছে, সাত তবক জমি পর্যন্ত তাকে দাবিয়ে দেয়া হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Iqbal Hossain ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:২০ পিএম says : 0
    নবী সঃ এর ৩নং হাদীসের উপর ভিত্তি করে “কোনো বাবা যদি সন্তানের সাথে এর থেকেও জগণ্য কাজ করে?? জুলুম-অত্যাচার, অনাচার,ক্ষমতার দাপট, অহংকার এবং সকল সহায় সম্পত্তি বিক্রি দিয়েও সন্তানের উপর জুলুম অব্যহত রাখে? সেই বাবাকে কি করা উচিত?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন