বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বাঘে-বাঘে লড়াই হবে দেশের মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে ! বাঘ না হলে এই আসনে মানাবেই না ভোট যুদ্ধ। তাই বাঘেরাই নেমেছেন ভোট রাজনীতির মাঠে। ঐতিহ্যগত মিথ সিলেট-১ আসন যার সরকার তার। ব্যতিক্রম বা ব্যতয় হয়নি আজও। স্পর্শকাতর এই আসন নিয়ে তাই চলে নানা জল্পনা কল্পনা। পারিবারিক ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী আওয়ামীলীগ তথা মহাজোট ও বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ড. একে আব্দুল মোমেন ও ইনাম আহমদ চৌধুরী। দেশ,-আন্তর্জাতিক অংগনে রয়েছে তার বহুল পরিচিতি। জ্ঞান-গরিমায়-পান্ডিত্যে উজ্জলতার পাশাপাশি রয়েছে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার বিস্তর অভিজ্ঞতা তাদের। নিখাদ ভদ্র লোক তারা। সংকীণতার উর্ধ্বে তাদের চিন্তা-চেতনা। ড.একেএম মোমেন নির্বাচনের মাঠে দীর্ঘদিন থেকে বিচরণ করলেও সিলেট-১ আসনে জন্য নবাগত বলতে গেলে ইনাম আহমদ চৌধুরী। তবে ‘শুরুতে ভালো মানে অর্ধেক শেষ‘ এ আপ্তবাক্যের সার্থকতা দেখিয়েছেন নিজের বিচক্ষণতার মাধ্যমে। স্থানীয় ভোটার সহ দেশময় ঝড় তুলেছেন সিলেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতে বাসায় গিয়ে ব্যক্তিগত সৌজন্য সাক্ষাতে। বলেছেন নিজের কথা, রাজনীতির কথা, নির্বাচনের কথা। সম্প্রীতি ও উদারতার বানী তুলে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে আসন্ন নির্বাচনে শতভাগ লড়তে যাচ্ছে সেই ম্যাসেজ জানিয়ে দিয়ে এসেছেন তিনি। অথমন্ত্রী মুহিতও তাকে স্বাগত জানিয়েছেন পরম অতিথিপরায়নতার সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায়। রাজনীতিক কট্ররপন্থিদের নিকট বিষয়টি তুচ্ছ হলেও এর আবেদন সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বৈঠকে তারা পরস্পর পরস্পরকে সম্মান জানিয়েছেন, বর্তমান-আগামী দিনের রাজনীতির কর্মী-সমর্থকদের জন্য এ ঘটনা শিক্ষনীয় বটে। এ আসনে বিএনপির টিকেটে লড়ার প্রত্যাশা করছেন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এক রাজনীতিক পরিবারের সদস্য, দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। শান্ত-স্বভাবের মুক্তাদির মাঠ রাজনীতির অনেক নেতাকর্মীদের নিকট ভরসার পাত্রও। তার নামও জোরেশোরে উচ্চারিত হয়েছে, হচ্ছেও। তবে সিলেট-১ আসনের গুরুত্ব ও প্রতিপক্ষ প্রার্থী বিবেচনা, এই মুর্হুতে নিজে নিজের-ই প্রার্থীতা গুটিয়ে নিয়ে ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপনের বিশাল সুযোগ রয়েছে তার। নির্বাচনের মনোনয়ন প্রতিযোগীতার অশুভ দৌড়ে তিনি হতে পারেন নতুন পথের বাতিঘর। সেই শিক্ষা- অভিজ্ঞতার কমতি তার নেই বলে মনে করছেন সচেতন মহল। পাওয়ার সুখের চেয়ে, ত্যাগের সুখ যে মহিয়ান হয়ে আলোয় আলোকিত হওয়া যায়, খন্দকার মুক্তাদির পারেন সেই ইতিহাস গড়তে। ভোট যুদ্ধের কঠিন পরীক্ষার ঝঁকির চেয়ে আগেই মনোনয়ন প্রত্যাহারের মাধ্যমে ইনামের পাশে দাড়ানোর প্রত্যাশা মুক্তাদিরের নিকট করছেন দলের বিজ্ঞ ত্যাগি নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে দিয়ে দলের আসবে স্বস্তি, একই সাথে প্রতিপক্ষ প্রার্থী সহ কর্মী সমর্থকদের নিকট হবে কাঁপুনি। তবে দলের মধ্যে কৌশলগত কোন হিসেব নিকেশ না থাকলে মুক্তাদির এমনটাই করবেন বলে, মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা। ধীরতা, স্থিরতা মুক্তাদিরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বয়োজৈষ্ট্যদের প্রতি সমীহ, এগিয়ে রাখার চিরন্তন আদব বনেদি লোকদের অনন্য গুন। সেই গুনে তারা পথ রচনা করেন, কৃতিমান হয়ে থাকেন, তাদের দলের অন্যতম জন তিনি। বিএনপি রাজনীতিতে বিগত সময়ে অনেক অসম দৌড় হয়েছে। সংবাদ পত্রের শিরোনাম হয়েছে, সাইফুর-ইলিয়াস দ্বন্দ্ব। প্রবীন ও বিএনপি তথা দেশের আলোকিত ব্যক্তি এম সাইফুর রহমানের সাথে- ইলিয়াস আলীর প্রতিযোগিতার খেসরাত আজও দল দিয়ে যাচ্ছে। আজ সাইফুরও নেই, ইলিয়াসও নেই। দু‘জনেই ছিলেন নিজ নিজ অবস্থানের সিংহ পুরুষ। কিন্তু রাজনীতির অপরিপক্ষ চালে তারা হয়েছিলেন খোরাক। প্রতিপক্ষ রাজনীতিক দলকে মোকাবেলার ছক ভূলে দলের মধ্যে শুরু হয়েছিল আত্মঘাতি খেলা। পেরোশানি ছিল নিজদের নিয়ে। কিন্তু ফলাফল বিএনপি রাজনীতি চেইন অব কমান্ড ভেংগে পড়ে। সেই অনাস্থা, অবিশ্বাস, দ্বন্দ্ব, হতাশা, গৃহ দাহের তাপ এখন পোড়াচ্ছে নেতাকর্মীদের। সেকারনে আত্ম-উপলব্ধি দল ্ও পরিস্থিতির জন্য খুবই জরুরী বলে মনে করছেন বিএনপির শুভাকাংখিরা। ব্যক্তি চেয়ে দল বড়, সেই বাস্তবতা বুঝতে হবে বিএনপির নেতাকর্মী তথা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। কথিত খায়েশে পরিহার করার বিকল্প নেই। অনেকে আংগুল তুলে বলছেন, আওয়ামীলীগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত নিয়ে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে মান-অভিমান বিরাট পাহাড় রয়েছে। কিন্তু নগ্নভাবে দলের নেতাকর্মীরা আক্রমন বা কাঠগড়ায় দাঁড় করায় তাকে। দলের সিনিয়র ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মান-মর্যাদার প্রতি আনুগত্যের একটি বিন¤্র পর্দা রয়েছে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের। অর্থমন্ত্রীর, পাশাপাশি তার সহোদর ড.একে এম মোমেন ও দলের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ, সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নামও ছিল মনোনয়নের দৌাড়ে । মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ দলের জন্য পরীক্ষিত। মাঠ রাজনীতির সূদীর্ঘ পাঠ রয়েছে তার জীবনে। কামরানের মাঠে ময়দানে রয়েছে পরিচিতি, গ্রহনযোগ্যতা ব্যাপক। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন ড. একেএম মোমেন লাভের পর তারা তরী ভিড়িয়েছেন তার পাশে। মনের ভেতর, ক্ষোভ থাকলেও প্রকাশ্যে তারা একাট্রা। কিন্তু বিএনপি সুখের সাগরে নেই, দিকবিদিক দিশেহারা। তারপরও বাঘে-মহিষে এক ঘাটে পানি খেতে আপত্তি। সাধারন ভোটার তথা সচেতন মহল মনে করেন, এখনই সময় মর্যাদার আসনে মর্যাদার উদাহরন সৃষ্টি করে বাঘে-বাঘে খেলার পথ সুগমে এগিয়ে আসবেন খন্দকার মুক্তাদির। ভোট যুদ্ধের আগেই, নিজের আমিত্য যুদ্ধে জয়লাভের মধ্যে দিয়ে দলের মধ্যে চলমান প্রার্থীতা কেন্দ্রিক দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবসান ঘটাবেন তিনি। কারন সময় আছে সামনে অনেক তার, কিন্তু দলের জন্য সামনে কঠিন পরীক্ষা। তাই কোন পথে হাটবেন মুক্তাদির, এটাই এখন দেখার পালা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।