বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গত নিবন্ধে আমরা দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। এর শেষাংশটুকু এ নিবন্ধে সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাদের সামনে উপস্থাপন করব।
মহান আল্লাহপাক ঈমানদার বান্দাদের পরীক্ষার জন্য দাজ্জালের দ্বারা বিভিন্ন অলৌকিক বিষয় ও জাদুর কারিশমা প্রকাশ করবেন। সে মানুষকে হত্যা করে আবার জীবিত করবে। আসমান তার নির্দেশে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। সে ভ‚মিকে নির্দেশ দিলে ভূমি প্রচুর উদ্ভিদ উদগীরণ করবে। কোনো জনবসতি শূন্যস্থান দিয়ে গমনকালে সে স্থানের প্রতি নির্দেশ দেবে : তুমি তোমার গোপন সম্পদের ভান্ডার বের করে দাও। ভ‚মি তার সুপ্ত ভান্ডার বের করে দেবে। তারপর সম্পদের সে ভান্ডার মধুমক্ষিকার মতো তার পেছনে পেছনে গমন করতে থাকবে। দাজ্জাল পুরো ধরাপৃষ্ঠ মন্থন করে ছাড়বে। পবিত্র মক্কা ও পবিত্র মদিনা ব্যতীত এমন কোনো শহর-নগর থাকবে না, যেখানে দাজ্জালের পদচারণা ঘটবে না। শুধুমাত্র ওই দু’টি শহরে ফেরেশতাদের প্রহরা থাকার কারণে প্রবেশ করতে পারবে না। মূলত দাজ্জালের ফিতনা মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ফিতনা হিসেবে বিবেচিত হবে।
হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদিস শোনালেন। একপর্যায়ে তিনি বললেন, ‘দাজ্জাল ঘুরতে ঘুরতে মদিনার উপকণ্ঠে উপস্থিত হলে সেখানে তার সামনে তৎকালের একজন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বলবেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই তুমি সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস থেকে জানতে পেরেছি।’
দাজ্জাল তখন তার অনুসারীদের উদ্দেশে বলবে, আমি যদি এই ব্যক্তিকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করি, তবে কি আমার খোদা হওয়ার ব্যাপারে তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকবে? অনুসারীরা বলবে, না। রাবী বর্ণনা করেন, তারপরই দাজ্জাল লোকটিকে হত্যা করে ফেলবে। অতঃপর জীবিত করবে।
আল্লাহর ওলি জীবিত হয়ে বলবেন, আল্লাহর শপথ, আজকে আমি তোমার দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারে যেমন সুস্পষ্ট ও নিশ্চিত জ্ঞান লাভ করলাম, তার চেয়ে বেশি কখনো লাভ করিনি। এ উক্তিতে দাজ্জাল তাকে আবার হত্যা করতে প্রয়াসী হবে। কিন্তু হত্যা করতে সক্ষম হবে না। (সহিহ বুখারি : ২/১০৫৬)
এদিকে হযরত ইমাম মাহদি (আ.) মদিনা শরিফ হয়ে দাজ্জালের পূর্বেই দামেস্কে পৌঁছবেন। দাজ্জালও মদিনা থেকে বিতাড়িত হয়ে দামেস্কের নিকটবর্তী হবে। হযরত ইমাম মাহদি (আ.) ও দাজ্জালের অনুসারী ইহুদিদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকবে। ইত্যাবসরে একদিন আসরের নামাজের আজানের পরে লোকজন যখন নামাজের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকবে, হঠাৎ হযরত ঈসা (আ.) দুই ফেরেশতার পাখায় ভর দিয়ে আসমান থেকে অবতরণ করতে দৃষ্টিগোচর হবেন।
তিনি মস্তক অবনত করলে শিশিরবিন্দুর মতো পানি পড়তে থাকবে। মাথা উঠালে মুক্তাসম উজ্জ্বল দানা ঝরতে থাকবে। দামেস্ক জামে মসজিদের পূর্ব প্রান্তে শ্বেত মিনারের ওপর তিনি নামবেন। তারপর সিঁড়ি দিয়ে নিচে অবতরণ করবেন। তিনি ঈসায়ীদের ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন। শুকর হত্যা করে ফেলবেন। জিজিয়াকর রহিত করবেন। ইহুদিদের ও তাদের দোসরদের নিপাত করবেন। তার নিঃশ্বাস দৃষ্টি সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। কাফের ব্যক্তিদের গায়ে তার নিঃশ্বাস লাগলে মৃত্যুবরণ করবে।
পরিশেষে ‘বাবে লুদ’ নামক স্থানে তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন। বস্তুত হযরত ঈসা (আ.)-এর পৃথিবীতে পুনরায় আগমনের ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ একমত। আহলে শরিয়তের কেউ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেননি। এ ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, হযরত ঈসা (আ.) আসমান থেকে অবতরণ করবেন।
হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর শরিয়ত অনুযায়ী, সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তিনি কোনো পৃথক শরিয়ত নিয়ে আগমন করবেন না। যদিও আকাশ থেকে অবতরণকালে তার নবুওয়্যাত ঠিক থাকবে ও তিনি ওই পদবিতে ভ‚ষিত হবেন। (শরহে আকীদায়ে সিফারানিয়্যাহ : ২/৯০)।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই মহান সত্তার শপথ, যার কুদরতি হাতে আমার প্রাণ, অবশ্য অবশ্যই অদূর ভবিষ্যতে ঈসা বিন মারয়াম (আ.) একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক রূপে তোমাদের মাঝে আগমন করবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন, শুকর নিধন করবেন, যুদ্ধ-সঙ্ঘাত রহিত করবেন, ধন-সম্পদের প্রাচুর্য ও প্রবাহ হবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকবে না। (সহিহ বুখারি : ১/৪৯০)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।