Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাইচাপা আগুন

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

রাজশাহীতে দল ও জোটের মনোনীত প্রার্থীদের বিভেদের ছাইচাপা আগুন জ্বলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বর্তমান এমপিদের মনোনয়ন না দেয়ার জন্য যারা একজোট হয়ে তৎপর ছিলেন তারা বেশ হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কারণ, দু’একটা বাদে সব পুরানোরাই মনোনয়ন পেয়েছেন। পুরাতনরা মনোনয়ন প্রাপ্ত হবার পর প্রার্থীদের পক্ষে বিজয় মিছিল, রেলস্টেশন ও বিমান বন্দরে ফুলের মালা দিয়ে বরণ, মটরসাইকেল শোডাউন। যারা প্রার্থীর বিপক্ষে ছিলেন তাদের উপেক্ষা ও কোথাও কোথাও কর্মীদের নাজেহালের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের অনুসারীদের মারধর হুমকি দেবার। এনিয়ে আভ্যন্তরীণ কোন্দল যেন খানিকটা বাড়ল।
রাজশাহীর ছয়টি আসনে থেকে আওয়ামী লীগের ৪৬ জন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি আসনে জোটের শরীক ওয়াকার্স পাটিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি পাঁচটির একটিতে নতুন মুখ এসেছে। অন্যরা পুরাতন এমপি। ফের নতুন করে এমপি হবার জন্য মাঠে এসেছেন। কিন্তু এদের পক্ষে মনোনয়ন বঞ্চিতরা কতটুকু তৎপর হবেন এনিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। অনেকে মনোনয়ন পাবার পর বঞ্চিতদের সাথে সামান্য সৌজন্যতা দেখাননি।
রাজশাহী-১ আসনে বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে সাতজন হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রার্থী একজোট হয়ে তৎপর ছিলেন। বর্তমান বাদ দিয়ে যে কোন একজনকে মনোনয়ন দেবার জন্য দাবি জানিয়েছেলন। কিন্তু হাইকমান্ড বর্তমানেই আস্থা রেখেছেন। এতে স্বাভাবিকভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বঞ্চিতরা। এ আসনের জন্য মনোনয়ন তুলেছিলেন তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী। তিনি মনোনয়ন পাননি। কিন্তু যিনি পেয়েছেন তার সাথে মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যাক্তি একটিবারের জন্য যোগাযোগ করেননি। ফারুক চৌধুরী মনোনয়ন পাবার পর বিমান বন্দরে এলাকার শত শত শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।
রাজশাহী-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন। এখানে মনোনয়ন দৌড়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের জেলা সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ফিরলে তার সমর্থকরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মনোনয়ন পাবার পর আসাদকে একটিবারের জন্য ফোন দেননি আয়েন এমন অভিযোগ করেন।
রাজশাহী-৪ আসনে ফের মনোনয়ন পেয়েছেন এনামুল হক। মনোনয়ন পাবার পর এনামুলের অনুসারীরা মনোনয়ন বঞ্চিতদের মারধর করেছে। দোকানপাট বন্ধ করে দেবার এমন অভিযোগ উঠেছে। বাগমারাজুড়ে একটা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এখানে এনামুলের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে আছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, তাহেরপুর পৌর মেয়রসহ বেশ কিছু ডাক সাইটে নেতা। বিরোধের কারণে অনেকের ওপর বহিষ্কারের  খড়গ নেমেছে। তাহেরপুর পৌর মেয়র বলেন, আমরা যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম তাদের কারোর সাথে যোগযোগ করা হয়নি। গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের কেওখালি গ্রামে মুনুসর নামে একজনকে মারধর করা হয়েছে।
রাজশাহী-৫ আসনে এবার প্রার্থী বদল হয়েছে। এখানে বেশ কজন প্রবীণ ও নবীন নেতা একজোট হয়ে মাঠে নেমেছিলেন দারার বিরুদ্ধে। তারা সফল হয়েছেন। সবাইকে চমক দিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন স্বাচিপ নেতা ডা. মুনসুর রহমান। এটি মেনে নিতে পারেননি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রত্যাশা ছিল অন্তত প্রবীণ নেতা  ও সাবেক এমপি তাজুল ইসলাম মো. ফারুক মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু সেটি হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিেেয়ছেন তাজুল ইসলাম মো. ফারুক। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একটা অংশ মুনসুর রহমানের বদল না হলে তারা তাকে বয়কটের হুমকি দিয়েছে।
রাজশাহী-৬ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার। এখানে অন্তত তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখাননি। তবে তাদের মাঠে ভ‚মিকা কি হবে এনিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়। মনোনয়নপত্র জমা দেবার পর মাঠ পর্যায়ের যে বৈরী অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাতে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের পরিবেশ বিঘিœত হবার আশঙ্কা রয়েছে। তবে প্রার্থী ও দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন সব ঠিক হয়ে যাবে। নেত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে মাঠে নামবে।
এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজশাহী বিএনপি বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। যদিও কৌশলগত কারণে প্রত্যেক আসনে দুজন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কারাভোগ মনোনয়ন বহাল থাকবে এনিয়ে মনোনয়নপ্রাপ্তরা বেশ দোটানায় রয়েছে। কেন্দ্রে তদবির বাড়িয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহী-৪ আসন (বাগমারা) নিয়ে। এখানে দীর্ঘদিন মাঠে তৎপর রয়েছেন সাবেক এমপি অধ্যাপক আব্দুল গফুর। বেশ ক’বছর একেবারে নিশ্চুপ থাকার পর উড়ে এসে জুড়ে বসার মত ফের মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন। এনিয়ে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। পাল্টাপাল্টি সাংবাদিক সম্মেলন করে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দুষছেন। রাজশাহী-৩ আসনে এ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন ও জেলা বিএনপি সেক্রেটারি মতিউর রহমান মন্টুকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এর মাঝে জামায়াতের নজর আছে আসনটির দিকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ