ডিপিএইচই’র পানি ও স্যানিটেশন প্রকল্প সুবিধা পাবে ৩০ পৌরসভার প্রায় ৫০ লাখ বাসিন্দা
দেশের ৩০টি পৌরসভার প্রায় ৬ লাখ সুপেয় পানির সংযোগ দেবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। পাশাপাশি
দিনাজপুরের ৬টি আসন থেকে মোট ৫৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এবার দিনাজপুরের সবকটি আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যরাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এ কারণে তারা সংশয় ছাড়াই নির্বাচনী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে, একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করায় বিএনপি শিবিরে দোটানা ভাব সৃষ্টি হয়েছে। রয়েছে ২০ দলীয় জোটের শরিক ও ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে আসন বন্টনের শেষ সিদ্ধান্ত। এছাড়া মামলা, গ্রেফতার ও নির্বাচনী বিধি বিধান কঠোরভাবে প্রয়োগ। মনোনয়ন দাখিলের পর জেলার নির্বাচনী আসনগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সরকারি দলে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হলেও বিএনপি শিবিরে কোন আমেজ নেই। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, মহাজোটের শরিক দল এরশাদের জাতীয় পার্টির মধ্যে নির্বাচন নয় দলীয় নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত ২৮ নভেম্বর মনোনয়ন দাখিলের শেষদিন পর্যন্ত দিনাজপুর-১ আসন থেকে সর্বমোট ১৩, দিনাজপুর-২ আসন থেকে ৮, দিনাজপুর-৩ আসন থেকে ৮, দিনাজপুর- ৪ আসন থেকে ৯, দিনাজপুর- ৫ আসন থেকে ৮ ও দিনাজপুর- ৬ আসন থেকে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। জেলার সবকটি আসনের মধ্যে ১ ও ৬ আসনে আওয়ামীলীগের দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা ছাড়া আর সেরকম কোন বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেনি। অপরদিকে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। তাদের অধিকাংশই ড্যামি প্রার্থী। এটা এখন প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ মানুষ বুঝে গেছে। আর এ কারণেই আগামী ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চূড়ান্ত সময় অতিক্রম না করা পর্যন্ত বিএনপি ও শরিক দলের কার্যক্রম দৃশ্যমান হওয়ার কোন যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সচেতন মহল।
দিনাজপুর-৩ আসনে আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য এম ইকবালুর রহিম মনোনয়নপত্র দাখিলের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে গণতন্ত্র বজায় রাখার লক্ষ্যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। এ কারণেই আজ আমরা ও বিএনপিসহ সব দল মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারছি। তিনি দিনাজপুর সদর আসনে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকা-ের সুফল জনগণ উপলব্ধি করে আগামীতে উন্নয়ন যাত্রাকে অব্যাহত রাখার স্বার্থেই নৌকাকে বিজয়ী করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে আর তারেক রহমানকে নির্বাসনে রেখে আমাদের নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার একমাত্র কারণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে অন্যায়ভাবে দ-প্রাপ্ত নেতাদের মুক্ত বাতাসে ফিরিয়ে আনা। তার মতে, সরকারের একতরফা নির্বাচনী কার্যক্রমের মধ্যে জনগণই আমাদের ভরসা। ব্যালট বাক্সে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে জনগণ প্রমাণ করে দেবে নৌকা না ধানের শীষ এদেশের গণতন্ত্রের মার্কা। দিনাজপুর-২ আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়নপত্র দাখিলকারী সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আগামী সংসদ নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণমূলক হবে বলে দাবি করেন। তার মতে, বর্তমানে লেবেল প্লেয়িং অবস্থা বিরাজ করছে। অপরদিকে দিনাজপুর-৪ আসন থেকে মনোনয়ন দাখিলকারী বিএনপি প্রার্থী হাফিজুর রহমান মনোনয়ন দাখিলের পরপরই উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন সকালে আওয়ামীলীগ প্রার্থী হাজার হাজার সমর্থক নিয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছেন আর আমি তথা বিএনপি প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দাখিল করতে আসলে পুলিশ প্রধান গেটে গুনে গুনে ৫জনকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তাহলে লেভেল প্লেয়িং অবস্থার কি দূরাবস্থা তা আপনারা সাংবাদিকরাই পর্যালোচনা করতে পারছেন। অবশ্য জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন বিধি-নিষেধ লঙ্ঘনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) মনোনয়ন দাখিল করেছেন, মনোরঞ্জন শীল গোপাল (আ-লীগ), মো. হানিফ (বিএনপি) জামায়াত ও বর্তমান পৌর মেয়র, মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন- (বিএনপি), মো. মঞ্জুরুল ইসলাম- (বিএনপি), মামুনুর রশিদ চৌধুরী (বিএনপি) বর্তমান উপ. চেয়ারম্যান, মো. আশরাফুল আলম (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), আবদুল হক (বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি), মো. শাহিনুর ইসলাম- (জাতীয় পার্টি), মো. মাহাবুব আলম- (জাতীয় পার্টি), সৈয়দ মনজুর উল করিম, (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ), মো. পারভেজ হোসেন (স্বতন্ত্র), রঞ্জিত মুরমু-(স্বতন্ত্র), মো. আরিফুল ইসলাম-(জাগপা)। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও আছে বিদ্রোহ। অপরদিকে জামায়াত প্রার্থী মো. হানিফ এর হাতে ধানের শীষ প্রতিক তুলে দেয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত।
দিনাজপুর -২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) খালিদ মাহমুদ চৌধুরী- (আওয়ামী লীগ), মানবেন্দ্র রায়- (আওয়ামী লীগ), মো. সাদিক রিয়াজ- (বিএনপি), মো. মঞ্জুরুল ইসলাম- (বিএনপি), মো. জুলফিকার হোসেন (জাতীয় পার্টি), মো. হাবিবুর রহমান- (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), মো. এরশাদ হোসেন (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ), মো. মোকাররম হোসেন-(স্বতন্ত্র)। এ আসনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও শেষ মুহুর্তে প্রত্যাহার করে নেবেন বলে জনশ্রুতি আছে। প্রার্থী নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি শিবিরে বিরাজমান থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
দিনাজপুর-৩ (সদর) ইকবালুর রহিম-(আওয়ামী লীগ), সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম- (বিএনপি) বর্তমান পৌর মেয়র, মো. মোফাজ্জল হোসেন দুলাল- (বিএনপি), মো. খাইরুজ্জামান- (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), সৈয়দ মাহমুদ উল করিম- (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ), মো. বদিউজ্জামান (বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টি), মো. আশরাফুল ইসলাম-(বিকল্প ধারা বাংলাদেশ), মো. রাইসুল ইসলাম। এ আসনে আওয়ামীলীগের অপ্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হচ্ছেন এম ইকবালুর রহিম। বিএনপি প্রার্থী নিয়ে রয়েছে ধোয়াশা।
দিনাজপুর -৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর) আবুল হাসান মাহমুদ আলী (আওয়ামী লীগ), হাফিজুর রহমান সরকার- (বিএনপি), মো. আক্তারুজ্জামান মিঞা (বিএনপি), মো. রেয়াজুল ইসলাম- (বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টি), মো. মোজাফ্ফর হোসেন- (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ), মো. ইউসুফ আলী- (স্বতন্ত্র), মো. সাজেদুল আলম চৌধুরী-(বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি), মো. মিজানুর রহমান- (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), মো. মোনাজাত চৌধুরী- (জাতীয় পার্টি)। আওয়ামীলীগের প্রার্থী নিশ্চিত হলেও বিএনপি প্রার্থী নিয়ে কিছুটা ধোয়াশা রয়েছে। তবে গুঞ্জন রয়েছে বিশিষ্ট শিল্পপতি হাফিজুর রহমান এ আসনে বিএনপি’র নিশ্চিত প্রার্থী। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশি আখতারুজ্জামান ও জামায়াত নিঃশর্তভাবে সমর্থন দিলে আওয়ামী শিবিরকে ধাক্কা সামলাতে হবে।
দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর), মোস্তাফিজুর রহমান-(আওয়ামী লীগ), এ, জেড এম রেজওয়ানুল হক- (বিএনপি), এস এম জাকারিয়া বাচ্চু (বিএনপি), মো. মতিউর রহমান- (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), মো. শফিকুল ইসলাম- (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ), শওকত আলী- (পিপলস পার্টি), সোলায়মান সামী- (জাতীয় পার্টি) মনসুর আলী সরকার- (স্বতন্ত্র)। টানা ৬ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এখন অহংকারের প্রতিকে পরিণত হয়েছেন। আওয়ামী শিবিরে মোস্তাফিজ ঠেকাও আন্দোলন বিরাজ করছে। আছে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি কেলেংকারী’র অসন্তোষ। এখানে বিএনপি’র পক্ষে দুজন মনোনয়ন দিলেও বিএনপি’র অবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী বলে সাধারন ভোটাররা মন্তব্য করেছেন। জেলা বিএনপি’র আহবায়ক এ জেড এম রেজওয়ানুল হক গত কয়েকবছর ধরেই তার উপজেলা পার্বতীপুরে ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকছেন। এবার ফুলবাড়ীতে আওয়ামী শিবিরের বিদ্রোহ ও কয়লা কেলেংকারী অহংকারে ছেদ ফেলার আশংকা রয়েছে।
দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ-বিরামপুর-হাকিমপুর-ঘোড়াঘাট), মো. শিবলি সাদিক-(আওয়ামীলীগ) মো. লুৎফর রহমান- -(বিএনপি), মো. আনোয়ারুল ইসলাম (বিএনপি) (জামায়াত) মো. শাহিনুর ইসলাম (বিএনপি), মো. সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী (বিএনপি) কাজী আবু জাফর মুহম্মদ লুৎফর রহমান চৌধুরী (ন্যাপ), শাহিদা খাতুন-(ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), দেলওয়ার হোসেন- (জাতীয় পার্টি), মো. নুরুন্নবী মন্ডল- (গণফোরাম), রবীন্দ্রনাথ সরেন- (ওয়ার্কার্স পার্টি), নুর আলম সিদ্দিক-(বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন), আজিজুল হক চৌধুরী-(স্বতন্ত্র), মো. আতাউর রহমান- (স্বতন্ত্র)। চাচা - ভাতিজার লড়াই এ আসনের আলোচিত বিষয়, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বিনোদন কেন্দ্রের স্বত্তাধিকারী দেলওয়ার হোসেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদের মনোনীত প্রার্থী। অপরদিকে তারই ভাতিজা বর্তমান সংসদ সদস্য শিবলি সাদিক তারুন্যের অহংকার। অবশ্য আওয়ামীলীগের প্রবীন নেতাদের অবস্থান তার অনুকুলে নয়। অপরদিকে বিএনপি পক্ষে মনোনয়ন দাখিল করা হলেও এ আসনটি জামায়াতকে উপহার দিতে চায় বিএনপি। আর জামায়াত নেতা আনোয়ারুল হক ২০০৮ এর নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে নির্বাচনের চুলচেড়া বিশ্লেষনের সময় আসেনি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের পরই মাঠের লড়াইয়ের চিত্র স্পষ্ট হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।