রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে একসময় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল ভরসা পরিবারের। ১৯৭৯ সালে রহিম উদ্দিন ভরসা বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার মাধ্য্যমে ভরসা পরিবারের আগমন। পরে ১৯৯৬ সালে করিম উদ্দিন ভরসা জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। রহিম উদ্দিন ভরসা ও করিম উদ্দিন ভরসা সহোদর। সংসদ ও নির্বাচনী এলাকায় আঞ্চলিক ভাষায় তাদের হাস্যরসাত্মক বক্তব্য সেই সময় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বয়সের কারণে রাজনীতিতে এখন আর সক্রিয় নন এ দুই শিল্পপতি। তবে তাদের উত্তরসূরিরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম থেকে আলোচনায় আছেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ রহিম উদ্দিন ভরসার ছেলে এমদাদুল হক ভরসার ওপর বিএনপি ভরসা রাখলেও করিম উদ্দিন ভরসার ছেলে সিরাজুল ইসলাম ভরসার ওপর ভরসা রাখতে পারেনি জাতীয় পার্টি। এ আসনে হারাগাছের আরেক শিল্পপতি মোস্তফা সেলিম বেঙ্গলের ওপর আস্থা রেখেছেন জাতীয় পার্টি।
বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দুই নতুন প্রার্থীর বিপরীতে আ.লীগ এবার পুরোপুরি নির্ভার। এ দলের প্রার্থী বর্তমান এমপি টিপু মুনশি। নির্বাচনী লড়াই শুরুর আগে থেকেই অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন তিনি। এ আসনে আ.লীগের দলগত গ্রহণযোগ্যতাও তার জন্য ইতিবাচক হয়ে উঠেছে। এক সময় রংপুরের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি বড় ফ্যাক্টর ছিল। রংপুর-৪ আসনটি ছিল জাপার জন্য নির্ধারিত। লাঙ্গল প্রতীক পাওয়াই ছিল জয়ী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সে অবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে পীরগাছা-কাউনিয়াজুড়ে। নির্বাচিত জাপা এমপিরা অতীতে এলাকার উন্নয়নে তেমন ভ‚মিকা রাখতে না পারায় মানুষ লাঙ্গল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর এই শূন্যস্থানের অনেকটাই পূরণ করেছেন আ.লীগের টিপু মুনশি। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থেকে এবং এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। আ.লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশির বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের কোনো অভিযোগও নেই।
কান্দি ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক হাইফুল ইসলাম খান ইকবাল বলেন, এ আসনে বিগত সময়ের চেয়ে দল অনেক বেশি সংগঠিত। দলে কোনো গ্রুপিংও নেই। তৃণমূল নেতাকর্মীরা মিলেমিশে কাজ করছেন।
পীরগাছা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন বলেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, তরুণদের ন্যাশনাল সার্ভিসের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও স্থানীয় স্কুল-কলেজ সরকারিকরণসহ এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। কাউনিয়া উপজেলা আ.লীগ সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মায়াসহ দলের নেতাকর্মীদের দাবি, এ আসনে টিপু মুনশির বিকল্প নেই। ভোটারদেরও আস্থা রয়েছে তার ওপরে।
নব্বইয়ের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন জাপার প্রার্থীরা। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে শাহ আলম, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে করিম উদ্দিন ভরসা নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে গত দুই নির্বাচনে আ.লীগের টিপু মুনশি জয়ী হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগের প্রার্থী টিপু মুন্সি এক লাখ ১৮ হাজার ৮০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী জাতীয় পার্টির করিম উদ্দিন ভরসা পেয়েছিলেন এক লাখ তিন হাজার ৬৪৩ ভোট। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রায় ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ২০০৮ সালে অল্প ভোটে পরাজিত হলেও বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হয়। তাই এবারও আশা দেখছেন জাতীয় পার্টি। এ অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে যুবলীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়া মোস্তফা সেলিম বেঙ্গলকে মনোনয়ন দিয়েছে জাতীয় পার্টি।
মনোনয়ন পাওয়া মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল জানান, তিনি জাপার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে রয়েছেন। তারাও তাকে ভালোবাসে। তাই জয়ের বিষয়ে তিনি আশাবাদী।
তবে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে হলেও গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে অনেকটাই সংগঠিত। পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। এরপর থেকেই বিএনপি এআসনে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তাই আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীরা নতুন করে উজ্জীবিত ও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির করিম উদ্দিন ভরসা ৯৩ হাজার ৬৩১ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির প্রার্থী রহিম উদ্দিন ভরসা পেয়েছিলেন ৮৩ হাজার ৮২৫ ভোট। প্রায় ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী। সেই হিসাব-নিকাশও করছেন নেতাকর্মীরা। তবে ভরসা পরিবারের সদস্য ও রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা বিএনপির প্রার্থী মনোনিত হওয়ায় আশার আলো দেখছেন নেতাকর্মীরা। অনেক ভোটারও তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন।
এমদাদুল হক ভরসা বলেন, এ আসনে বিএনপি নেতাকর্মীরা আগের চাইতে অনেক উজ্জীবিত। সেই সঙ্গে তার বাবা সাবেক এমপি রহিম উদ্দিন ভরসার ইমেজ এখনো উজ্জ্বল। তাই তার জয় নিশ্চিত।
পীরগাছা উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও কাউনিয়া উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য আ.লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা সবাই শিল্পপতি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে মোট ভোটার চার লাখ ১২ হাজার ৯৫৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ১১ হাজার ৭০৮ জন ও মহিলা ভোটার দুই লাখ ১১ হাজার ২৫১ জন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।