Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাপার দখলে থাকা রংপুরের ৬টি আসনের মধ্যে ৪টিই হাতছাড়া হওয়ার পথে

হালিম আনছারী, রংপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ৪:১৩ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৪টি আসন আওয়ামীলীগ নিজেদের ঘরে রেখে ২টি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে। ফলে এবারও জাতীয় পার্টির দখলে থাকা ৬টি আসনের মধ্যে ৪টি আসন হাতছাড়া হওয়ার পথে। আর এ কারনে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে জাতীয় পার্টি এখনও যথেষ্ট আশাবাদী আরও দু’টি আসন নিজেদের ঘরে রাখতে। তাদের মতে, রংপুর-৬ যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি, তাই এই আসনটি তাকে ছাড় দিতে আপত্তি নেই। তাছাড়া রংপুর-৫ মিঠাপুকুর আসনটিও তারা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ,এন আশিকুর রহমানকে ছাড় দিতে চায়। বাকি ২টি আসন তারা ফিরে পেতে চায়। কিন্তু আওয়ামীলীগ রংপুর-৩ (সদর) এবং রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) এই দু’টি আসন বাদে বাকি ৪টিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এরমধ্যে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্পীকার ডঃ শিরীন শারমীন চৌধুরী। এখানে বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন সাইফুল ইসলাম। এই আসনে জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থী নেই। রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে আওয়ামীলীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক টিপু মুন্সী এমপি মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব রহিম উদ্দিন ভরসার ছেলে এমদাদুল হক ভরসা। এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকেও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সেলিম বেঙ্গল। তবে তার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন তিনি। রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ, এন আশিকুর রহমান এমপি। এখানে জাপা থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ফখর উজ জামান জাহাঙ্গীর। তিনি এখন পর্যন্ত ঝুলন্ত অবস্থায় আছেন। বিএনপি থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জাপা থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি সোলায়মান আলম ফকির। আর রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বর্তমান এমপি আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকসহ দু’জন। এদের দু’জনের মধ্যে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি কেন্দ্র। তাই তারা দু’জনেই নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আসনে বিএনপি থেকে দু’জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি থেকেও জমা দিয়েছেন দু’জন। তাদের ব্যাপারেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া আসন দু’টি হলো-রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) এবং রংপুর-৩ (সদর)। এরমধ্যে রংপুর-৩ (সদর) আসনে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এই আসনে আওয়ামীলীগ থেকে জেলা সভাপতি মমতাজ উদ্দিন এবং বিএনপি থেকে মোজাফফর হোসেন ও রীতা রহমান মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে জাপা থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি। এখানে বিএনপি থেকে দু’জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
এক সময়কার জাতীয় পার্টির দূর্গ ছিল রংপুরের ৬টি আসন। ‘এলাকার ছাওয়াল’ হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে এ অঞ্চলের মানুষ অন্ধভাবেই ভালোবাসতেন। তাই এখানকার ৬টি আসনেই ছিল জাতীয় পার্টির জন্য নির্ধারিত। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে যেই নির্বাচন করতেন জিতে যেতেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এরশাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হতে থাকে এ অঞ্চলের মানুষ। তার প্রতি ভালোবাসা কমতে থাকে। আর এ সুযোগ কাজে লাগায় আওয়ামীলীগ। ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে কৌশলে জাপার কাছ থেকে ২টি আসন বাদে ৪টি আসন নিয়ে নেয় আওয়ামীলীগ। তখন থেকেই হাতছাড়া হয়ে যায় জাতীয় পার্টির নির্ধারিত ৬টি আসনের মধ্যে ৪টি আসন। জাতীয় পার্টির দখলে থাকা রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনটি হাতছাড়া হয়ে যায় ২০১৪ সালে। ২০১৪ এর নির্বাচনে এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম মোঃ আহসানুল হক চৌধুরী। এবারেও তিনি প্রার্থী। রংপুর-৪ (কাউনিয়া ও পীরগাছা) আসনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের টিপু মুন্সি। রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে গত দুই নির্বাচনে জিতেছেন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। ২০০১ সাল পর্যন্ত আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি। ২০০১ সালে এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি। তবে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে তিনি নির্বাচিত হন। এবারও এখান থেকে তিনি নির্বাচন করবেন। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগকে ছেড়ে দেয়ায় এই আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি নুর মোহাম্মদ মন্ডল জাপা ত্যাগ করে বিএনপি যোগদান করেন। সম্প্রতি তিনি বিএনপি ত্যাগ করে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। বর্তমানে এ আসনে জাতীয় পার্টির তেমন কোন প্রার্থী নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ