বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দুয়ারে দাঁড়িয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জনপদ সিলেটের দিকে দেশবাসীর নজর যেনো একটু বেশিই। কেননা ওলি আউলিয়ার স্মৃতিধন্য ‘সিলেট-১ আসন যার সরকার তার’ এমন মিথ প্রচলিত স্বাধীনতার পর থেকেই। বাস্তবেও ধরা দিয়েছে এ বিষয়টি। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে যে দলের প্রার্থীই বিজয়ী হয়েছেন তারাই বসেছে ক্ষমতায়।
সিলেট জেলার ৬টি আসনেই দেখা যাচ্ছে নানামুখী সমীকরণ। এরমধ্যে বিএনপি প্রতিটি আসনেই মনোনয়ন দিয়েছে একাধিক নেতাকে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ কোন কোন আসনে একক প্রার্থী দিলেও কিছু আসনে মহাজোটের শরিকদের প্রার্থীও আছেন। একারণে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। ৯ ডিসেম্বরের পর জানা যাবে সিলেটের ৬ আসনে কারা চূড়ান্ত লড়াইয়ে থাকছেন।
এদিকে বিভিন্ন আসনে উভয় জোটের সমর্থকদের সাথে আলাপ করে দেখা গেছে কেউ খুশি, কেউ নাখোশ। বিশেষ করে ৬টি আসনের মধ্যে মহাজোটের তৃণমূলে প্রার্থীদের মনভাঙা দেখা গেছে। অন্যদিকে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের প্রার্থী করায় ফুরফুরে মেজাজেই আছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. এ কে এ মোমেনকে অনেকেই চাননি শুরুর দিকে। দল থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে যে দু'জনকে তারা হচ্ছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বেসরকারীকরণ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী এবং দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। বিএনপিতে প্রার্থীতা নিয়ে আপত্তি না থাকলেও চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণ না হওয়ায় বিভক্তি দেখা দিয়েছে। তবে এটাকে সাময়িক বলে দাবি করছেন সিলেট বিএনপির নেতারা।
সিলেট-২ আসনে গতবারের মতো এবারও জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ আসনে আওয়ামী লীগের দু'জন শক্তিশালী প্রার্থী মাঠে সরব ছিলেন। তারা ছিটকে পড়েছেন মনোনয়ন বোর্ডে। এ কারণে এই আসনের কর্মী সমর্থকরা নাখোশ দলের হাইকমান্ডের প্রতি। তারা নৌকার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেও নৌকার প্রার্থী পাননি। এই আসনে বিএনপির প্রার্থীতা নিয়ে কোন আপত্তি নেই।
সিলেট-২ আসনের আওয়ামী লীগের একই অবস্থা সিলেট-৩ আসনে। এখানে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে নিজ দলের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করলেও লাভ হয়নি। সিলেট-৩ ও ৪ আসনে বিএনপি একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিভক্তি বা বিদ্রোহ নেই। দু'টিতেই সাবেক সংসদ সদস্যের সাথে নতুন প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে দলটি।
সিলেট-৫ আসনেও মন ভেঙেছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। এটি মহাজোট ছেড়ে দিয়েছে তাদের শরীক জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে। সিলেট-৬ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে চায়নি আওয়ামী লীগের তৃণমূল। দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছিলেন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার হোসেন। তিনি মনোনয়ন পাননি। সিলেট ৫ ও ৬ আসনেও বিএনপিতে কোন অসন্তোষ নেই। সবমিলিয়ে ফুরফুরে মেজাজেই আছে বিএনপি বলা যায়।
মর্যাদার আসনখ্যাত সিলেট-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১১ প্রার্থী। তারা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বেসরকারীকরণ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী এবং দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, বাসদের উজ্জল রায়, জাপার মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলনের রেদওয়ানুল হক, ইসলামী ঐক্যজোটের ফয়জুল হক, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের প্রণব জ্যোতি পাল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইউসুফ আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার উদ্দিন ও মাওলানা নাসির উদ্দিন।
সিলেট-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপি, জাতীয়পার্টি, খেলাফত মজলিসসহ অন্যান্য দলের ১২ প্রার্থী। এদের মধ্যে ‘নিখোঁজ’ বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী এবং ছেলেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে, আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়ায় আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী দেয়নি।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া, ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বিএনপি চেয়াপার্সনের উপদেষ্ঠা তাহসিনা রুশদীর লুনা ও তার ছেলে আববার ইলিয়াস, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মো. মুশাহিদ খান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মনোয়ার হোসেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কাজী আমিনউদ্দিন, খেলাফত মজলিসের মুনতাসির আলী, গণফোরামের মোকাব্বির খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. এনামুল হক সরদার, মোহাম্মদ আব্দুর রব ও মো. হাবিবুর রহমান।
সিলেট-৩ আসনের মোট ১৩ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থী রয়েছেন। এরা হচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা এম এ হক, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী, ব্যারিস্টার এম এ সালাম, জাতীয় পার্টি নেতা ওসমান আলী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমান, ইসলামি আন্দোলনের আব্দুল মতিন বাদশাহ, মাওলানা নজরুল ইসলাম, জাতীয়পার্টির উছমান আলী ও তোফায়েল আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ, শাহেদ আহমদ, মো. আব্দুল ওদুদ ও খেলাফত মজলিসের দিলওয়ার হোসাইন।
পাথর সাম্রাজ্যখ্যাত তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ৭জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম, সামসুজ্জামান জামান, জাতীয় পার্টির এটিইউ তাজ রহমান ও এম ইসমাইল আলী আশিক, জমিয়তের মাওলানা আতাউর রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোজ কুমার সেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সিলেট-৫ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের ১২জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন যারা জমা দিয়েছেন তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার, ২০ দলীয় জোটের পক্ষে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির মামুনুর রশীদ, শরিফ আহমদ লস্কর, জাপার এমএ মতিন চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ওবায়দুল্লাহ ফারুক, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা নুরুল আমিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়জুল মুনীর চৌধুরী, আহমদ আল ওয়ালী, বাহার উদ্দিন আল রাজি, মো. শহীদ আহমদ চৌধুরী।
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিকল্পধারার শমসের মুবিন চৌধুরী বীরবিক্রম, ২০ দলীয় জোটের পক্ষে জামায়াতের মাওলানা হাবিবুর রহমান, জাপার সেলিম উদ্দিন, বিএনপির ফয়সল চৌধুরী ও হেলাল খান, ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ আব্দুর রকিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আসআদ উদ্দিন আল মামুন, স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গির হোসেন মিয়া মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সবমিলিয়ে সিলেটের ৬টি আসনে ৬৬জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২ ডিসেম্বর। বৈধ প্রার্থীরা আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। পরদিন ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। প্রার্থীরা ১১ ডিসেম্বর থেকেই প্রচারে নামতে পারবেন। ভোটগ্রহণ আগামী ৩০ ডিসেম্বর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।