বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ১ মাস বাকি। নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তুমুল ব্যস্ততা। ইতোমধ্যে দেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার মসনদে থাকা আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিজেদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। তবে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিভিন্ন আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি দু'টি জোটই। আর এদিকে বিএনপি প্রায় প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। একেবারে শেষ মুহুর্তে এসে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে দলটি।বিভাগীয় জেলা সিলেটের ৬টি আসনেও একই অবস্থা।
সিলেটের সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট ৪ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী বদল করেনি। টানা দুইবারের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদকে তৃতীয়বারের মতো নৌকার টিকিট দিয়েছে দলের মনোনয়ন বোর্ড। এ আসনে মহাজোটে থাকা জাতীয় পার্টি থেকেও দুই প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে।
আর এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানকে।
সবমিলিয়ে এই আসনে শেষ পর্যন্ত মহাজোট থেকে ইমরান আহমদই একক প্রার্থী থাকবেন বলে জানাগেছে বিভিন্নসূত্রে। এর বিপরীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে কে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাচ্ছেন সেটি এখনও নিশ্চিত করেনি বিএনপি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত মনোনয়নপত্র পাওয়া দিলদার হোসেন সেলিম ও সামসুজ্জামান জামান দু'জনেরই বেশ শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে নির্বাচনী এলাকাতে। সেলিম সাবেক সংসদ সদস্য থাকলেও সামসুজ্জামানও জৈন্তা-গোয়াইনঘাটে গড়ে তুলেছেন নিজের ভাল অবস্থান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কাজ করছেন তিন উপজেলাতে। চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। কারোর চেয়ে কেউই কম নয়।
অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনের তৃণমূলের মাঝে গড়ে নিয়েছেন শক্ত অবস্থান। সিলেট ছাত্রদলের এক সময়কার রাজপথ কাঁপানো নেতা তিনি। সিলেটে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের রাজনীতিতে জামানের রয়েছে জনপ্রিয়তা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মামলার বোঝা নিয়ে দেশের বাইরে ছিলেন জামান। এরপর জন্য সিলেটে ফিরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেন। তৎকালীন সময়ে দেশব্যাপী আন্দোলনে তিনি একাই তার বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে জোরালো ভূমিকা রাখেন। নির্বাচনের পর অর্ধশতাধিক মামলায় আসামি হয়ে সিলেট ছাড়তে হয় জামানকে। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে যখন সিলেট সফর করেন তখন আবারও দেখা মেলে জামানের। এরপর থেকে তিনি সক্রিয় আছেন রাজনীতিতে।
অন্যদিকে সিলেট-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম। সেলিম দলের প্রবীণ নেতা। তিনি একাধিকবার ওই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও তিনি সেলিম এবারো এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনিও সিলেট-৪ আসনের মানুষের মনে ভালো অবস্থান গড়ে নিয়েছেন। একাধিকবারের এই সাবেক সাংসদ পরিচ্ছন্ন রাজনীতির অধিকারী। দীর্ঘদিন ধরে সিলেট বিএনপিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জৈন্তা, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন। যেকারণে তার কদর কোন অংশে কম নয়। জামান-সেলিম দু'জনেই সমানে সমান।
সামসুজ্জামান জামান জানিয়েছেন, সিলেট-৪ আসন হচ্ছে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। মানুষ বিএনপিকে ভোট দিতে ইচ্ছুক। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সিলেট-৪ আসনে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত।
প্রার্থীতার ব্যাপারে তার মন্তব্য, ‘সিলেট-৪ আসনে দলের সঠিক সিদ্ধান্তই কেবল পরিবর্তন ঘটাতে পারে।’
অপর প্রার্থী দিলদার হোসেন সেলিমের মন্তব্যও অনুরুপ।একাধিকবার সংসদ সদস্য থাকার কারণে সংসদীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞ এই নেতা চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে নিজেকে যোগ্য মনে করছেন।
এখন দেখার বিষয় ‘রানিং’ সংসদ সদস্য ইমরান আহমদকে টেক্কা দিতে দিলদার হোসেন সেলিম ও অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান দু'জনের কাউকেই কম যোগ্য মনে করছেন না এলাকার ভোটাররা। তাদের মতে এখানকার মানুষ বিএনপিকে ভালবাসে। যে কেউ প্রার্থী হলেই বিজয়ের আশা করাই যায়। এমন দাবি সাধারণ মানুষের।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পাথর সাম্রাজ্যখ্যাত তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ৭জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন গত বুধবার সিলেট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলামের কাছে একে একে মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রার্থীরা। মনোনয়ন জমা উপলক্ষে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গনে ভীড় করেন প্রার্থীদের সমর্থকরাও।
প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম, সামসুজ্জামান জামান, জাতীয় পার্টির এটিইউ তাজ রহমান ও এম ইসমাইল আলী আশিক, জমিয়তের মাওলানা আতাউর রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোজ কুমার সেন।
সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা তিনটি নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন। এ আসনের সর্বমোট ভোটার ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪০১ জন। তন্মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮০১ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ জন।
সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের ইমরান আহমদ। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। আর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দিলদার হোসেন সেলিম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।