Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট-১ আসনে বিএনপিতে দ্বিধাবিভক্তি!

ফয়সাল আমীন/ মিসবাহ উদ্দীন আহমদ | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:১৮ এএম

দেশের সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে দুই প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির মর্যাদাপূর্ণ এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। দুইজনকে মনোনয়ন দেওয়ায় দ্বন্দ্বে পড়েছে সিলেট বিএনপি। নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। এ অবস্থায় শীর্ষ নেতাদের অনেকে রয়েছেন মৌন। কোনো প্রার্থীর সাথেই এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি তাদের।

আবার এক প্রার্থীর সমর্থকরা অপর প্রার্থী বিরুদ্ধে বিষোদগার করতেও দেখা গেছে। এই বিভক্তি আর বিষোদগার আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আরও সঙ্কটে ফেলতে পারে বলে মনে করেন দলটির একাধিক নেতা। দ্রুতই একক প্রার্থী বেছে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান তাদের।

বিএনপির দুই প্রার্থীই গত বুধবার সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নিজেদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। সিলেট-১ আসনের সাবেক সাংসদ আব্দুল মালিক চৌধুরীর ছেলে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির দুপুরে এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী বিকেলে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মুক্তাদির মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কেবল মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেক ও ইনাম আহমদের সাথে কেবল কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন। আর কোনো শীর্ষ নেতাদেরই তাদের সাথে দেখা যায়নি।

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনসহ বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেন ইনাম আহমদ চৌধুরী। তবে এসব কর্মসূচিতেও প্রবীণ এই নেতার সাথে সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দেখা যায়নি। বরং সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে যাওয়ার কারণে দলের ভেতরেই সমালোচনায় পড়তে হয় তাকে।

এই দুই জনকে মনোনয়ন দেওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে এই দুই নেতার অনুসারীরা নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। একপক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও তুলছেন।

আর সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা এখন পর্যন্ত নীরব রয়েছেন। এক আজমল বখত সাদেক ছাড়া অন্য নেতাদের কোনো প্রার্থীর সাথেই দেখা যায়নি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইনাম আহমদ চৌধুরীর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সালেহ আহমদ খসরু। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় নেতাদের অনেকেই দ্বিধায় আছেন। একক প্রার্থী চূড়ান্ত হলে এই দ্বিধা কেটে যাবে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবেন। তবে অবশ্যই আমাদের সকলকে সম্মানিত লোকের সম্মান রক্ষা করে কথা বলতে হবে। যোগ্য মানুষকে মূল্যায়ন করতে হবে।

বুধবার মনোনয়নপত্র জমাদানকালে খন্দকার মুক্তাদিরের সাথে থাকা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেক বলেন, বিএনপিতে কোনো বিভক্তি নেই। প্রার্থী সাময়িক বিভ্রান্তি তৈরি হলেও তা কেটে যাবে। আমরা চাই, যিনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন, সবসময় নেতাকর্মীদের পাশে আছেন এমন ব্যক্তিকেই যেনো দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।

এ নির্বাচনে মর্যাদার আসনখ্যাত সিলেট-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১১ প্রার্থী। সিলেট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী এমদাদুল ইসলামের কাছে একে একে তারা মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন পরিবারের সদস্য ও দলের নেতাদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। এসময় তার বড় ভাই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও তার সাথে ছিলেন।

সিলেট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বেসরকারীকরণ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী এবং দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, বাসদের উজ্জল রায়, জাপার মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলনের রেদওয়ানুল হক, ইসলামী ঐক্যজোটের ফয়জুল হক, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের প্রণব জ্যোতি পাল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইউসুফ আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার উদ্দিন ও মাওলানা নাসির উদ্দিন।

সিলেট সদর উপজেলা এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসন। এ আসনটি মর্যাদাপূর্ণ আসন হিসেবে সব রাজনৈতিক দলের কাছে বিবেচিত। মিথ রয়েছে- এ আসনে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হন; সেই দল সরকার গঠন করে। স্বাধীনতা পরবর্তী সবকটি নির্বাচনেই এর প্রতিফলনও ঘটেছে।

সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরপর দুই মেয়াদে তিনি সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ