Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অ্যাকর্ড বন্ধ হলে গার্মেন্টস শিল্পে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ শুরু করা আন্তর্জাতিক পরিদর্শন ব্যবস্থার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এই নিষেধাজ্ঞা আদেশ আজ শুক্রবার ৩০ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এর আন্তর্জাতিক পরিদর্শন সংস্থা অ্যাকর্ড ফর ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি তাদের ঢাকা অফিস বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
অ্যাকর্ড বন্ধ হলে এইচ অ্যান্ড এম, এসপ্রিট, প্রাইমার্কসহ কয়েকশ’ ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানা পরিদর্শনের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে।
অ্যাকর্ডকে প্রত্যাহারে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, প্রায় ১,৪৫০ টি কারখানায় এখনও জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়নি, অর্ধেকেরও বেশি কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নি মেকাবেলা ব্যবস্থা নেই। নিরাপদ কর্মপরিবেশ বিশেষ করে কারখানায় অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টিতে বাংলাদেশে আরও কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। 
এসপ্রিট ও এইচ এ্যান্ড এম উভয়ই অ্যাকর্ডের ঢাকা অফিসের কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্তে হতামা প্রকাশ করেছে। এসপ্রিটের পক্ষ থেকে বাংলাদেশী সরবরাহকারীদের কাছে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘এটি আমাদের কাজকে সহজ করার বদলে আরও কঠিন করে তুলবে।’ 
স্বাধীন শ্রমিক সংগঠনের ওয়ার্কার রাইটস কনসোর্টিয়ামের নির্বাহী পরিচালক স্কট নোভা বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার অ্যাকর্ডের ঢাকা অফিস বন্ধ করে তবে দেশের পোশাক শিল্পের ক্ষতি গভীর এবং স্থায়ী হবে।’
২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকার উপকণ্ঠে রানা প্লাজা কমপ্লেক্স ভেঙ্গে যাওয়ার পরে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত দুটি প্রধান সংস্থার মধ্যে অ্যাকর্ড একটি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি অ্যালায়েন্স। এগুলো প্রায় ২৩০০টি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা উন্নতির দিকে নজর রাখছে। পাঁচ বছরের জন্য করা এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছর। তারা ২০২১ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছিল কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট 
তাদেরকে নভেম্বরের মধ্যেই কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়।
মেয়াদ পূর্তির পরও এই সংস্থাটি বাংলাদেশে কাজ করতে চাইলে পোশাকখাতের মালিকরা এর বিরোধীতা করেন। এ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও একাধিকবার বলেছেন, গার্মেন্টসখাত পরিদর্শনে বাংলাদেশে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তারাই যথেষ্ট। এখন আর তাদের প্রয়োজন নেই। পরবর্তীতে অ্যাকর্ড এদেশে থাকবে কি থাকবে না তার মীমাংসা হাই কোর্টে। 
সরকার বলছে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প এখন তাদের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, চীন ও ভারতের তুলনায় নিরাপদ হয়ে উঠেছে, এবং নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই হস্তান্তর করা উচিত। 
কিন্তু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা, পাশাপাশি কিছু বড় ব্র্যান্ড বলছে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে। অনেক দূরে। বাংলাদেশে আইএলওর পরিচালক তুয়োমো পুতিয়াইয়েন বলেছেন, ‘সরকার, আইএলও এবং অন্যান্যদের সহায়তায় কিছু কারখানার জন্য সক্ষমতা অর্জন করলেও এত সল্প সময়ে অতিরিক্ত সংখ্যক কারখানাগুলির দায়িত্ব গ্রহণ করা কঠিন হবে। এতে অবশ্যই শিল্পের স্বার্থ রক্ষা হবে না।’
দেশের মোট রপ্তানির ৮২% হয় এই শিল্প থেকে। বিশ্লেষকদের মতে, অনেক গার্মেন্টস মালিক পার্লামেন্ট সদস্য হওয়ায় সরকারের জন্য সঠিকভাবে কারখানা পরিদর্শন কঠিন হবে।
সরবরাহকারীদের কাছে লেখা চিঠিতে এসপ্রিটের আন্তর্জাতিক সরবরাহের প্রধান লিউস গনজাগা লিখেছেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিপুল উন্নতি অর্জন করা সত্তে¡ও বিশ্বের প্রধান বাজারগুলিতে এই সিদ্ধান্তে পোশাক নেয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’ তিনি ১৮০ টি ব্র্যান্ড যারা অ্যাকর্ডে সাইন করেছেন তারা ব্যবসা প্রত্যাহারের জন্য চাপে পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন।
দেশের বৃহত্তম গার্মেন্টসগুলোর একটি মোহাম্মাদি গ্রæপের মালিক রুহানা হক গার্ডিয়ানকে জানান, এই সিদ্ধান্তে কোনও ব্র্যান্ড দেশ ছাড়বে না বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একমাত্র উৎপাদন কেন্দ্র যা ব্র্যান্ডগুলিকে উচ্চতর সুরক্ষা ডিগ্রী সরবরাহ করে, তাই বাংলাদেশের ব্যবসা চলতে থাকবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গার্মেন্টস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ