বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কিয়ামতের বড় নিদর্শনাবলির মধ্যে অন্যতম হলো দাজ্জালের আগমন। দাজ্জাল সম্পর্কে বিশ্বজোড়া মানুষের মধ্যে নানা কথা, নানা কাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে। এগুলোর আগা-গোড়ার তপ্ত-তালাশ কোনো কালেই সম্ভব হবে না। আর হবে না বলেই এগুলোকে পরিত্যাজ্য বলে পরিহার করাই শ্রেয়।
দাজ্জাল শব্দের অর্থ : দাজ্জাল শব্দটি আরবি বিশেষণ, বিশেষ্য নয়। দাজ্জাল শব্দের অভিধানগত অর্থ- প্রতারক, মিথ্যাবাদী, সত্য-মিথ্যার মিশ্রনকারী। আর দাজ্জাল শব্দের মূল অর্থ মিশ্রিত করা। যেমন- কোনো বস্তু খলত-মলত ও মিশ্রিত হলে আরবিতে বলা হয় ‘দাজ্জাল’। দাজ্জাল শব্দটি আরবিতে ‘আদ দাজ্জাল’ অথবা ‘মাসিহুস দাজ্জালও’ বলা হয়। উভয় শব্দের অর্থ মিথ্যাবাদী ও কানা মিথ্যাবাদী। দাজ্জাল শব্দটি আতিশয্য জ্ঞাপক বিশেষণ রূপে মহা-প্রতারক, মহা-প্রবঞ্চক, মহা-মিথ্যাবাদী, মহা-কূটকৌশলী অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
আরবি অভিধানের এই বিশ্লেষণ ও দৃষ্টিকোণ থেকে এ কথা অবশ্যই বলা যায় যে, উপরোল্লিখিত বিশেষণযুক্ত যে কোনো ব্যক্তিকে (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) দাজ্জাল বলা যেতে পারে। এই নিরিখে দাজ্জালের গুণ ও বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ব্যক্তি, শ্রেণী দল ও গোষ্ঠীর অস্তিত্ব আগেও ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
তবে, এই দাজ্জালেরা আসল কানা দাজ্জালের পথ-ঘাট, কর্মতৎপরতাকে খোলাসা করার কাজে সর্বদাই সহযোগিতা করতে থাকবে। তাই প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি সমাজে, প্রতিটি দেশে, মোট কথা- এই ভূমন্ডলের সর্বত্রই দাজ্জালদের বিচরণ ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতে আরো বিস্তৃত পরিসরে পরিদৃষ্ট হবে এবং তারাই আসল কানা দাজ্জালের আবির্ভাবকে ত্বরান্বিত করে তুলবে। (লিসানুল আরব : ১২/২৮৪-২৮৫)।
হাদিসের কিতাবসমূহে অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে দাজ্জালের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। প্রত্যেক নবীই স্বীয় উম্মতগণকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) শেষ জামানায় কানা দাজ্জালের কতিপয় চিহ্ন বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। হাদিসে মুতাওয়াতির এবং উম্মতে মোহাম্মাদির ইজমা দ্বারা কানা দাজ্জালের বিষয়টি প্রমাণিত। এতে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশও নেই। (শরহে আকিদায়ে সিফারানিয়্যাহ : ২/৮৬,৯৯)।
কিয়ামতের আলামত অধ্যায়ে সঙ্কলিত হাদিসসমূহের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, শেষ জামানার কানা দাজ্জাল হলো এক বিশেষ কাফির ব্যক্তি। সে ইহুদি বংশোদ্ভূত হবে, সে খোদা হওয়ার দাবি করবে। তার দু’চোখের মাঝে কাফ-ফে-রে অর্থাৎ কাফির বা কুফর লেখা থাকবে। হজরত কাতাদাহ বলেন, হজরত আনাস (রা.) আমাদেরকে হাদিস শুনিয়েছেন, রাসূলে আকরাম (সা.) বলেছেন, দাজ্জালের দু’চোখের মাঝে কাফ-ফে-রে, অর্থাৎ কাফির লেখা থাকবে। (সহিহ মুসলিম : ২/৪০০)। তার ডান চক্ষু দৃষ্টিহীন হবে।
শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থান থেকে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। সেখান থেকে সে ইস্পাহান যাবে। সেখানকার ৭০ হাজার ইহুদি তার অনুসারী ও অনুগামী হবে। নিজের বিশাল বাহিনী সঙ্গে করে সে ভূপৃষ্ঠে ৪০ দিন বিচরণ করবে। তবে সে ৪০ দিনের প্রথম দিনটি হবে এক বছরের সমান। দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের সমান। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের সমান। অবশিষ্ট দিনগুলো সাধারণ দিনের সমপরিমাণ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট হবে।
ইসলামি আরবি বর্ষপঞ্জি অনুসারে এক বছর হয় ৩৫৪ দিনে। একমাস হয় ৩০ বা ২৯ দিনে। এক সপ্তাহ হয় সাত দিনে। অবশিষ্ট ৩৭ দিন হবে সাধারণ দিনের মতো। এই হিসাব অনুসারে দাজ্জাল এক বছর দুই মাস ১৪ দিন অর্থাৎ ৪২৮ দিন সারা পৃথিবীতে তার তান্ডব চালাবে। গোটা পৃথিবীতে এমন কোনো লোকালয় থাকবে না, যেখানে দাজ্জালের ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে না। দাজ্জাল ও দাজ্জালিয়াতের দাপটে গোটা বিশ্ব প্রকম্পিত হতে থাকবে। ঈমানিয়াত ও আমালিয়াত সমৃদ্ধ মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে এক করুণ অবস্থার সৃষ্টি হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।