ডিপিএইচই’র পানি ও স্যানিটেশন প্রকল্প সুবিধা পাবে ৩০ পৌরসভার প্রায় ৫০ লাখ বাসিন্দা
দেশের ৩০টি পৌরসভার প্রায় ৬ লাখ সুপেয় পানির সংযোগ দেবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। পাশাপাশি
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে সারাদেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশা পাওয়ার পর পুলিশ এ অভিযান শুরু করেছে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীও পৃথকভাবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান এবং বৈধ অস্ত্রের সুষ্ঠু ব্যবহার তদারকিতে মাঠে কাজ করছে। এর আগে ইসির অনুরোধে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। যার কপি পুলিশ সদর দফতরসহ দেশের সংশ্লিষ্ট সব দফতরে পাঠানো হয়েছে। ওই নির্দেশনার আলোকে গত রোববার থেকে সারাদেশে একযোগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা বলেন, নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে কয়েকটি সংঘর্ষ ও সহিংসতায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও অপরাধী গোষ্ঠী অস্ত্রের ব্যবহার করায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনমনে এক ধরণের আতঙ্ক কাজ করছে। জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) আবু বকর ছিদ্দীক গত সপ্তাহে বলেন, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশ সদর দফতরসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে বৈধ অস্ত্রের (লাইসেন্সকৃত) বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে গত ১৮ নভেম্বর কক্সবাজারে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলবে। এক্ষেত্রে সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, অস্ত্র কারবারি কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বৈধ অস্ত্রেরও যাতে অপব্যবহার না হয় সেজন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এর আগে ৩০ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম অবৈধ অস্ত্র বিরোধী অভিযান ও বৈধ অস্ত্রের দিকে নজরদারির কথা জানিয়েছিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে এমন কোন অপরাধ নেই, যেখানে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করছে না সন্ত্রাসীরা। আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জমি দখল এমনকি ডিশ ব্যবসা ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েও প্রতিনিয়ত খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। খোদ চলতি বছরে বাড্ডায় ৬টি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। যাতে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করেছে সন্ত্রাসীরা। গত ২০ নভেম্বর আর্মস ডিলার ও মাদকের এক গডফাদারকে গ্রেফতার করে সিআইডি। ৩ নভেম্বর খিলগাঁওয়ে চাঁদা না দেওয়ায় একটি গ্যাংস্টার গ্রুপের ১০ থেকে ১২ সদস্য দোকানে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। ২৬ অক্টোবর পোস্তগোলা ব্রিজে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে সোহেল নামে এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। ২২ অক্টোবর উত্তরায় ডাকাতের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির পর একটি আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলিসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ৭ অক্টোবর কক্সবাজারের মহেশখালীতে গাড়িতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুয়া স্টিকার লাগিয়ে অস্ত্র পাচারের সময় ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সারা বছরই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলে। অস্ত্র কারবারিরা দেশে ও বাইরে থেকে অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। ইতোমধ্যে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির কাজও গোয়েন্দারা শেষে করেছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দাদের তথ্যমতে, সারাদেশে পাঁচ শতাধিক অবৈধ অস্ত্রধারী ও ব্যবসায়ী রয়েছে। শুধু রাজধানীতেই তিন শতাধিক অবৈধ অস্ত্রধারী। আর অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র আছে ৪ লাখেরও বেশি। এসব অস্ত্রধারীরা বেচাকেনার পাশাপাশি অস্ত্র ভাড়া দিয়ে থাকে। বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী নিজেদের শক্তির জানান দিতে দলীয় ক্যাডার বাহিনীর জন্য ভাড়ায় নেয় এসব অস্ত্র। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে অস্ত্র উদ্ধারে সারাদেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ১৩ পৃষ্ঠার পর
বিশেষ অভিযান শুরু করে পুলিশ। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা অভিযানে ৪৭১ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৩৯৭টি অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ৩০৭ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ৭৪টি অস্ত্র। এসব অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২১২টি। এছাড়া একই সময়ে দুই হাজার ১৮৩টি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। যাতে ৩২৪টি মামলা হয়েছে। আর বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৯৬ জনকে। এ ছাড়া গত বছর সারা দেশে সাড়ে ৫ হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারের বিপরীতে মামলা হয়েছে দুই হাজার ২০৮টি।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টম্বরের প্রথম ১৮ দিনে ঢাকা মহানগরীতে অস্ত্র উদ্ধারের মামলা হয়েছে ৪০টি। পাশাপাশি বিস্ফোরক মামলা হয়েছে ১৫২টি। রেঞ্জগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র মামলা হয়েছে চট্টগ্রাম রেঞ্জে (৬১টি)। আর সবচেয়ে বেশি বিস্ফোরক মামলা হয়েছে খুলনা রেঞ্জে (৫১টি)। এছাড়া বিজিবি, সেনাবাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানেও বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। বিজিবি সূত্রমতে, গত অক্টোবরে সীমান্ত এলাকা থেকে ৮টি এয়ারগান, ১টি বন্দুক এবং ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গত সোমবার বিজিবির অভিযানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে দুটি বিদেশী পিস্তল, দুটি মাগ্যাজিন ও ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিভিন্ন প্রকারের ৯৪৩টি অস্ত্র, গোলাবারুদ ২৩ হাজার ১২৪টি, ককটেল ও গ্রেনেডসহ বোমা উদ্ধার ৪১০টি, ট্যাংক বিধ্বংসী উচ্চবিস্ফোরক উদ্ধার ১০টি এবং বিভিন্ন প্রকারের ৩১৪ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৭০৪ জনকে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, পুলিশ সারাবছরই নানা অভিযান চালায়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারও একটি নিয়মিত অভিযান। এখনো গুরুত্বের সাথে সেই অভিযান চলছে। তবে বর্তমানে নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিশেষ কোন আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা নেই। পুলিশের অস্ত্র উদ্ধার সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ কোড ব্যবহার করে চলে অবৈধ অস্ত্রের বাণিজ্য। এ সব কারবারিা বড় অস্ত্রকে ‘হাতি’, পিস্তল বা রিভলবারকে ‘ঘোড়া’ আর গুলিকে ‘কলাগাছ’ সাংকেতিক নামে ডাকে। এছাড়া বোমাকে ‘সাউন্ডবক্স’ ও বিস্ফোরককে ‘মাটি’ নামে ডাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।