Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেনীর ৩টি আসন - মহাজোট প্রার্থীদের অবাঞ্চিত ঘোষণা সুবিধায় বিএনপি

মো. ওমর ফারুক, ফেনী | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ফেনী-১ আসন খালেদা জিয়ার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ আসনে তিনি পরপর ৫ বার এমপি হয়েছেন। এখানকার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুরে খালেদা জিয়ার পৈত্রিক নিবাস। এ আসন বিএনপির ভোট ব্যাংক। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এবারও এখানে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালের বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় হতাশ হয়েছিলেন ভোটাররা। কিন্তু এবার খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও প্রার্থী হওয়ায় খুশি সাধারণ মানুষ।
এক প্রতিক্রিয়ায় ফেনী-১ আসনের ভোটার কামরুল, জামাল, তাহের ও করিম জানান, মামলা হামলায় ঘর ছাড়া বিএনপি খালেদা জিয়াকে প্রার্থী হিসেবে পেয়ে আাবারো ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। যেকোনো মূল্যে তারা এ আসনে খালেদা জিয়ার বিজয় চান। এ আসনে খালেদার বিপরীতে মহাজোট থেকে জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এতে মহাখুশি বিএনপি নেতাকর্মীরা। জাসদ নেত্রীর সাথে পূর্বেই স্থানীয় আওয়ামী লীগেরবনিবনা হচ্ছিল না। তাই আ.লীগসহ তার অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা এ আসনে শিরিনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। ফলে আওয়ামী লীগের প্রভাব না থাকলে এ আসনে নিরপেক্ষ নির্বাচনে শিরিনের জামানত হারানোর আশঙ্কা করছেন বিএনপি
এদিকে ফেনীর ৩টি আসনে মহাজোট ও বিএনপির প্রার্থী চ‚ড়ান্ত হয়েছে। এ ৩টি আসনের মধ্যে ফেনী- সদর ছাড়া বাকি ২টি আসন মহাজোট প্রার্থীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ফেনী-১ আসনের মহাজোট প্রার্থী ও জাসদ নেত্রীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে আ.লীগ প্রার্থী আলাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরীর মনোনয়নের দাবিতে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে ঝাড়– মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে নেতাকর্মীরা। ফেনী-১ নির্বাচনী এলাকা (পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া) নিয়ে গঠিত। জাতীয় সংসদের আসন নং ২৬৫-তে দলের প্রার্থীর দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।
ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলীম জানান, এ অঞ্চলের নেতাকর্মীরা প্রার্থী হিসেবে আলাউদ্দীন নাসিমের বিকল্প ভাবছে না। তাকে মনোনয়ন দেয়া না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। নাসিমের নিজ উপজেলা পরশুরামে তীব্র আন্দোলন চলছে বলে জানান নেতাকর্মীরা। তাকে মনোনয়ন না দিলে এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন করবে বলে ঘোষণা দেন নেতাকর্মীরা।
ফেনী-২ আসনে এবার লড়াই চলবে নবীন প্রবীণের মধ্যে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মেয়র থেকে এমপি পদে দলের মনোনয়ন পেয়ে বিনাভোটে এমপি নির্বাচিত হন নিজাম উদ্দীন হাজারী। ভোটে রাজনীতিতে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা তার নেই। ফলে এবারই প্রথম বিএনপির প্রবীণ প্রার্থীর সাথে ফেনী-২ সদর আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হতে যাচ্ছে তার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে নিজাম হাজারী নিজ দলের নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েন। এ সময় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও এমপি জয়নাল হাজারী এবং তার সমর্থকরা মিলে নিজাম হাজারীর এমপি পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক নেতা শাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে এ রিটটি দায়ের করলে ক্ষমতার পাঁচ বছরের পুরো মেয়াদে এ মামলার রেশ টানতে হয় নিজাম হাজারীকে। তার মামলার রায় শুনাতে উচ্চ আদালতের ১২ জন বিচারক বিব্রত বোধ করেন। রিটটি এখনো চলমান রয়েছে। এ বিতর্কের মধ্যেই তিনি এমপি হিসেবে মনোনয়ন পান।
এদিকে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা, এ আসনের তিন বারের এমপি এবং খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি। অতীতের তিনটি নির্বাচনেই তিনি ফেনী সদর আসন থেকে ভোটের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ২০০১ সালে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা জয়নাল হাজারী এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহানকে পরাজিত করেন ভিপি জয়নাল। এবার সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং প্রশাসন নিরপেক্ষ ভ‚মিকায় থাকলে আবারো বিএনপি প্রার্থী হিসেবে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে জানান ফেনী জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এদিকে ফেনী-৩ ( দাগনভূঁঞা-সোনাগাজী) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন শিল্পপতি, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি নিজ এলাকায় মনোনয়ন নেয়ায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ এক যুগ ধরে নির্বাচনের ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা মিন্টুকে পেয়ে আশার আলো দেখছেন। নিরপেক্ষ ভোট হলে এ আসনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে সাধারণ ভোটার ও নেতাকর্মীদের আশাবাদ। প্রয়াত মোশাররফ হোসেন এ আসনে পরপর তিনবার বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ও বিশাল ভোটব্যাংক রয়েছে এ আসনটিতে। এদিকে মোশাররফ হোসেনের মৃত্যুর পর ফেনীর এ আসনটিতে নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা। দলের এ দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি প্রার্থী হিসেবে থাকলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মহাজোট প্রার্থী পরাজিত হবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা।
এ আসনে এবার মহাজোটের প্রার্থী হিেেসবে মনোনয়ন পেয়েছেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের নিরাপত্তা উপদেষ্টা লে.জে. মাসুদ উদ্দীন চৌধুরী। এর পূর্বে এলাকায় তার তেমন একটা পরিচিতি ছিলনা। দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় এ আসনে সর্বাধিক কেন্দ্রীয় নেতারা এলাকায় প্রচার প্রচারণা চালান। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ সম্পাদক জহির উদ্দীন মাহমুদ লিপটন, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী ও শমী কায়সার দলের মনোনয়ন পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন।
মাসুদ চৌধুরীকে প্রার্থী দেয়ায় ২ উপজেলার নেতাকর্মীরা সীমাহীন ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে তারা এ আসনে মহাজোট প্রার্থীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে নৌকার প্রার্থী দাবি করেছে। এ আসনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পান আবুল বাশার। পরে আসনটি মহাজোটের প্রার্থীকে ছেড়ে দেয়া হয়। আবুল বাশার এবার আর ছাড় দিতে রাজি নন। মাসুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। জানতে চাইলে বাশার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকার জনগণ ও দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। জনগণ চাইলে তিনি নির্বাচনে যাবেন বলে নিশ্চিত করেন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাপা থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদায় নেয়া রিন্টু আনোয়ার, হাজী রহিম উল্লাহ নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ