Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিবার-পরিজন

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

পিতা-মাতার পর মানুষের সবচাইতে বড় সম্পর্ক থাকে স্ত্রী-পুত্রদের সাথে। নিজের পরিবার-পরিজনকে সুখে রাখা মানুষের সাধারণ প্রকৃতি। বরং বলতে গেলে এ ব্যাপারে অনেকে নিজের সীমাও অতিক্রম করে বসে। সে জন্য কুরআন মাজিদে এ ব্যাপারে খুব বেশি জোর দেয়া হয়নি যে, পরিবার-পরিজনের সাথে ভালো আচরণ করবে এবং তাদের হক আদায় করবে।
অবশ্য অনেকেই যেহেতু নিজের পরিবার-পরিজনের দ্বীনি সংশোধন ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে শৈথিল্য অবলম্বন করে থাকে। সুতরাং কুরআন পরিবার-পরিজনের সে হক বা অধিকারের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে, তাদেরকে দ্বীনদার তথা ধর্মপরায়ণ বানানোর এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করার জন্য তেমনি প্রয়াস চালাবে, যেমন প্রত্যেকটি ঈমানদারের প্রাণকে দোজখ থেকে রক্ষা করার চিন্তাভাবনা করা উচিত। সূরা তাহরিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার জ্বালানি হলো মানুষ ও পাথর। তাতে (আজাব দেয়ার জন্য) এমন ফেরেশতা নিয়োজিত, যারা অত্যন্ত কঠোরতা এবং অত্যন্ত শক্তিশালী (রূপে সৃষ্ট)। আল্লাহ তাদের প্রতি যে হুকুম দিয়ে দিয়েছেন, তারা তার (সামান্যতম) অন্যথা করবে না। আর যে কাজের জন্য তারা আদিষ্ট, তা তারা (পুরোপুরি) সম্পাদন করবে’ (সূরা তাহরিম : আয়াত-৬)। অবশ্য স্ত্রীদের ব্যাপারে যেহেতু অনেকের দ্বারাই ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকে, তাই তাদের সাথে সদাচরণ এবং তাদের হক আদায়ের ব্যাপারে কুরআন মাজিদে বিশেষ তাকিদ করা হয়েছে। সূরা বাকারায় বলা হয়েছে, ‘এবং পুরুষদের ওপর মহিলাদের তেমনি অধিকার রয়েছে, যেমন পুরুষদের অধিকার রয়েছে মহিলাদের ওপর রীতি মোতাবেক’ (সূরা বাকারা : আয়াত-২২৮)। সূরা নিসায় বর্ণনা করা হয়েছে, ‘আর তাদের সাথে (অর্থাৎ, নিজেদের স্ত্রীদের সাথে) রীতি মোতাবেক সদ্ভাব রেখে জীবন যাপন করো’ (সূরা নিসা : আয়াত-১৯)। আল্লাহর কোনো বান্দার স্ত্রী-পুত্ররা যদি বদমেজাজি অথবা বিধর্মিতার দরুণ তার বিরুদ্ধাচরণ করে কিংবা তাকে কষ্ট দেয় এবং তাদের পক্ষ থেকে যদি তার আশঙ্কা থাকে, তবে কুরআন মাজিদের পরামর্শ হলো এই যে, তাদের চক্রান্ত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করবে এবং তাদের সতর্ক থাকবে। কিন্তু যতটা সম্ভব প্রতিশোধ ও কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেবে না, বরং ক্ষমা ও উপেক্ষা করবে। ইনশাআল্লাহ এ কর্মপন্থা তাদের সংশোধনেরও কারণ হবে। সূরা তাগাবুনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কোনো কোনো স্ত্রী এবং কোনো কোনো সন্তান তোমাদের শত্রু। সুতরাং তোমরা তাদের উপদ্রব থেকে আত্মরক্ষা করো। আর যদি তোমরা ক্ষমা করে দাও, অনুকম্পা প্রদর্শন করো, তা হলে (সেটাই তোমাদের জন্য উত্তম ও শুভ পরিণাম বয়ে আনবে) নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা মহা-ক্ষমাশীল ও করুণাময়’ (সূরা তাগাবুন : আয়াত-১৪)।
বান্দাদের হক বা অধিকার প্রসঙ্গে পিতা-মাতা, পরিবার-পরিজন, নিকট প্রতিবেশী, এতিম-অনাথ, গরিব-মিসকিন, বন্দী প্রভৃতি দুর্বল শ্রেণীর অধিকার এবং তাদের সেবা ও সদ্ব্যবহার সম্পর্কে কুরআন মাজিদের শিক্ষা ও তাকিদ পাঠকবর্গ এখন পাঠ করলেন। এবার দেখা যাক, সাধারণ মানুষের অধিকার এবং তাদের সাথে সদাচরণ সম্পর্কে কুরআনের শিক্ষা কী? এ প্রসঙ্গে প্রথমত কুরআন মাজিদের বিভিন্ন জায়গায় স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সমস্ত মানুষ একই সম্মানিত যুগল (আদম-হাওয়া)-এর সন্তান। গোটা মানব ভ্রাতৃত্বকে তাদের মৌল প্রকৃতির দিক দিয়ে সম্মানিত করে দেয়া হয়েছে। তারপর অন্যান্য যাবতীয় সৃষ্টির তুলনায় মানুষকে সে বিশেষ জ্ঞানগত ও কর্মগত যোগ্যতা ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যার মাধ্যমে তারা সমগ্র জগৎ-সংসারকে ব্যবহার করেছে। এ বিষয়টিকেও কুরআনে গোটা মানব-জাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক সম্মান ও মর্যাদা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আর আমি মানুষকে এক বিশেষ সম্মান ও মর্যাদায় ভূষিত করেছি এবং এ জগতের পানি ও স্থলভাগের ওপর তাকে ক্ষমতা ও অধিকার দান করেছি’ (সূরা বনী ইসরাইল : আয়াত-৭০)। এই প্রাকৃতিক ও খোদাপ্রদত্ত মর্যাদা ও সম্মান ছাড়াও কুরআনে তার আজ্ঞাবহদের নির্দেশ দান করেছে, যেন তারা সব মানুষের সাথে ভালোভাবে কথা বলে। বলা হয়েছে, ‘ওয়া কুলু লিন্নাসি হুসনা’ অর্থাৎ, সব মানুষের সাতে ভালো কথা বল। তেমনিভাবে সাধারণভাবে সবার সাথে ন্যায় ও সৌজন্যের নির্দেশ দান করেছে। ঈমানদারদেরকে শোনানো হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা ন্যায়পরতা ও (সবার সাথে) সৌজন্য প্রদর্শনের নির্দেশ দান করেন’ (সূরা নাহল : আয়াত-৯০)।



 

Show all comments
  • Ameen Munshi ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২৬ এএম says : 0
    পৃথিবীকে আবাদ করার জন্য আল্লাহ রাববুল আলামীন প্রথমে আদম (আ)-কে সৃষ্টি করেন। অতঃপর তাঁর পাজর থেকে জুড়ি হিসেবে হাওয়া (আ)-কে সৃষ্টি করেন। তাঁদের উভয়ের দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমে পৃথিবীতে পরিবারের সূচনা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيراً وََّنِسَاءً ‘‘হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতেই সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তাদের দু’জন হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ১)। يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْباً وَّقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوْا ‘‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ এবং নারী থেকে। তারপর তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গ্রোত্রে যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পার..।’’ (সূরা আল হুজুরাত, আয়াত ১৩)।
    Total Reply(0) Reply
  • রুবেল ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২৬ এএম says : 0
    শুকরিয়া। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mosharraf ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২৭ এএম says : 0
    মানব জীবনের প্রথম ভিত্তি হচ্ছে পরিবার। ব্যক্তি পরিবারের একটা অংশ। আর পরিবার সমাজের অংশ ও ভিত্তিপ্রস্তর। সমাজকে বাদ দিয়ে যেমন রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না, তেমনি পরিবার ছাড়া সমাজও অকল্পনীয়। পরিবার ঠিক হলে ব্যক্তি ঠিক হয়ে যায়। আর ব্যক্তি ঠিক হয়ে গেলে পরিবার ও সমাজ উভয়ই ঠিক হয়ে যায়। সুখে-সমৃদ্ধিতে গড়ে ওঠে সর্বাঙ্গীন সুন্দর এক সমাজ কাঠামো। এজন্য ইসলাম পারিবারিক জীবনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে এবং কুরআন-সুন্নাহর বিধি-বিধানের একটা বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে পরিবার।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Shah Alam ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২৮ এএম says : 0
    ইসলাম পরিবারকে সুশৃঙ্খল ও গতিশীল করার জন্য নানাবিধ বিধি-বিধান প্রবর্তন করেছে, যেগুলো পরিবারের প্রতি ইসলামের সীমাহীন গুরুত্বারোপের প্রমাণবাহী। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীবের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাধ্যমে এসব বিধি-বিধান মানবজাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন। উৎ. ঝযধয়ির উধুভ বলেন, The Family is the basic unit of Muslim society and God revealed to the Prophet rules and legislations which enhanced its solidarity and strengthened the bonds holdign it together to this day.
    Total Reply(0) Reply
  • আতিকুর রহমান ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২৮ এএম says : 0
    পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ইসলাম সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তাই এ বিষয়ে আমাদের আরো সতর্ক ও সাবধান হতে হবে। অন্যথা পাশ্চাত্যের মত আমাদেরকেও এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে। আল্লাহ আমাদের পরিবারগুলোকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করুন! আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • Monir ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩১ এএম says : 0
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার সামর্থ রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ তা দৃষ্টিকে সংবরণকারী এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণকারী। আর যে সক্ষম নয় তার সিয়াম পালন করা উচিত। কারণ তা তার জন্য কামস্পৃহা দমনকারী। তিনি আরো বলেন, বিয়ে করা আমার সুন্নাত। সুতরাং যে আমার সুন্নাত বর্জন করবে সে আমার দলভুক্ত নয়। শুধু তাই নয়, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিয়েকে ঈমানের অর্ধেক গণ্য করে বলেন, যখন কোন বান্দা বিয়ে করে তখন সে অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করে। কাজেই অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে সে আল্লাহকে ভয় করুক।
    Total Reply(0) Reply
  • আমিন গাজী ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩১ এএম says : 0
    ইসলামে পরিবার ও পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। দেহের মধ্যে হার্ট বা কলবের স্থান যেমন, ইসলামে পরিবারের স্থান তেমন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শরীরের মধ্যে একটি গোশতপিন্ড রয়েছে। যদি তা সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে তাহলে গোটা শরীর সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে। আর যদি তা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে সমস্ত শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঐ গোশতপিন্ডটি হচ্ছে কলব বা হৃদয়। সুতরাং পরিবার যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে সমাজ ঠিক হয়ে যাবে। আর সমাজ ঠিক হয়ে গেলে রাষ্ট্রও ঠিক হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন