Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বের প্রথম জিন সম্পাদিত শিশুর জন্ম চীনে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

বিশ্বের প্রথম সম্পাদিত জিনের শিশু জন্ম দেওয়ার দাবি করেছেন চীনের একজন বিজ্ঞানী। দেশটির শেনঝেং প্রদেশের ‘সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির’ গবেষক হি জিয়ানকি বলেছেন, শিশুগুলোর জিন সম্পাদনা করে তিনি তাদেরকে এইচআইভি প্রতিরোধে সক্ষম করে তুলেছেন। ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট শিশুরা এইচআইভিতে সংক্রমিত হবে না। ফলে তাদের এইডসও হবে না। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান লিখেছে, বিশেষজ্ঞদের অনেকেই তার দাবির কথা জানতে পেরে সমালোচনা করেছেন। তারা মনে করেন, এইচআইভি আক্রান্তের নিরাময়ে অনেক পরীক্ষিত পথ আছে। তার জন্য শিশুর জিন সম্পাদনার দরকার ছিল না। কারণ এমন জিন পরিবর্তন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। অজানা কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মানব জাতি।
জিন সম্পাদিত মানুষের জন্ম দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত বিতর্কিত। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই এটি এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ। সম্পাদিত জিনের প্রথম মানব শিশুর জন্ম দেওয়ার দাবি করা বিজ্ঞানী হি জিয়ানকির দাবির বিষয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সত্যতা নিশ্চিত করার সম্ভব হয়নি। এমন কি এ বিষয়ে তিনি কোনও বিজ্ঞান সাময়িকীতে গবেষণা পত্রও প্রকাশ করেননি। কিন্তু হি জিয়ানকি যুক্তরাষ্ট্রের রাইস ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক গবেষক। সেখান থেকে ফিরেই তিনি চীনের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে জিন সম্পাদনের জন্য একটি গবেষণাগার স্থাপন করেছিলেন। চীনে তার নিজের দুইটি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বিজ্ঞানী হি জিয়ানকি জানিয়েছেন, সাত জন গর্ভবতীর ভ্রূণের জিন তিনি সম্পাদনা করেছেন। এদের মধ্যে একটি শিশুর জন্ম হয়েছে। সম্পাদনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিশুটিকে তিনি বংশগত কোনও রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা দেননি। বরং একটি সক্ষমতা দিয়েছেন, যার মাধ্যমে শিশুটি এইচআইভি ভাইরাসের আক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পাবে। কোন কৌশলে শিশুদের এইচআইভি ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করেছেন তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, এসব ভ্রূণের মধ্যে থেকে সিসিআর ফাইভ নামের জিনটিকে তিনি নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছেন। এই জিনটি এমন একটি প্রোটিন তৈরি করে যা এইআইভি ভাইরাসকে কোষের ভেতরে ঢুকতে দেয়, যার প্রেক্ষিতে মানুষ এইডসে আক্রান্ত হয়।
যে সাতটি শিশুর ক্ষেত্রে জিন সম্পাদনা করা হয়েছে তাদের সবার পিতাই এইচআইভি আক্রান্ত ছিলেন। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে আস্থাযোগ্য মাত্রায় তাদের রোগ নিরাময় করা হয়েছিল। হি জিয়ানকির মতে, পিতাদের কাছ থেকে তাদের শিশুদের কাছে যাতে এইডস চলে না যায়, জিন সম্পাদনার মূল উদ্দেশ্য তা নয়। বরং ওই শিশুরা যাতে নিজেরা কখনও এইচআইভি ভাইরাস বহন না করে তা নিশ্চিত করতেই তিনি তাদের জিন সম্পাদনা করেছেন।
হি জিয়ানকি গতকাল সোমবার হংকংয়ের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজকদেরকে তার সাফল্যের তথ্য জানান। সম্মেলনটি আজ (মঙ্গলবার) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। তিনি বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসকেও এক সাক্ষাৎকারে তার দাবির কথা জানিয়েছেন। এমন ‘নিষিদ্ধ গবেষণা’ করা উচিত হয়েছে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘প্রথম হওয়া নয় উদাহরণ তৈরির বিষয়ে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। সমাজই নির্ধারণ করবে, এরপর এ নিয়ে করা হবে।’
বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মাইলফলক সাফল্য হলেও ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ায় কর্মরত জিন সম্পাদনা বিশেষজ্ঞ ড. কিরান মুসুনুরু বলেছেন, ‘এমন কাজ সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। মানুষের ওপর এমন পরীক্ষা চালানো নৈতিকতার দিক থেকে কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’ তার ভাষ্য, সিসিআর ফাইভ জিনটি এইচআইভির জন্য দায়ী হলেও তা সরিয়ে ফেললে অন্য সমস্যা হতে পারে। জিনটি না থাকলে ‘ওয়েস্ট নাইলের’ মতো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের ‘প্র্যাকটিকাল এথিকসের’ অধ্যাপক জুলিয়ান সাভুলেস্ক বলেছেন, ‘ভ্রূণগুলো সুস্থ ছিল। তাদের কোনও রোগ ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে যে তাদের জিন সম্পাদনা করা হয়েছে তাকে দানবীয় বলা ছাড়া কোনও পথ নেই। জিন সম্পাদনা এখনও পরীক্ষামূলক অবস্থায় রয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ভবিষ্যতে এসব শিশুর জিনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন কি ক্যানসারও হতে পারে।’
গার্ডিয়ান লিখেছে স¤প্রতি, জিন সম্পাদনার সহজ প্রক্রিয়া আবিষ্কার হয়েছে। ক্রিস্পার কাস নাইন নামে পরিচিত যে পদ্ধতিতে সহজে জিন সম্পাদনা কর সম্ভব হচ্ছে তা দিয়ে অসুস্থ মানুষের জিন সংশোধন করা হয়। কিন্তু যদি এমন প্রক্রিয়া শুক্রাণু বা ভ্রূণেই ঘটানো হয় তাহলে তা বংশ পরম্পরায় প্রবাহমান থাকবে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ