বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন মাজীদ বলে, পৃথিবী, আকাশ এবং সমগ্র জগৎ-সংসার শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার হুকুমের আওতাভুক্ত। সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা ও রিজিকদাতা যেমন আল্লাহ, তেমনিভাবে সবার ওপর শুধু তারই হুকুম চলে। বলা হয়েছে, ‘লাহুল খালকু ওয়াল আমরু’। অর্থাৎ, সৃষ্টিও তারই এবং হুকুম তারই’ (সূরা আরাফ : আয়াত-৫৪)।
আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ওয়ালাহুল হুকমু ওয়া ইলাইহি তুরজাউন’। অর্থাৎ, একমাত্র তারই হুকুম চলে এবং তোমরা সবাই তারই দিকে প্রত্যাবর্তন করবে’ (সূরা কাসাস : আয়াত-৭০)। তিনি যা করতে চান তাই করেন। তাকে ছাড়া কারো অধিকারের কিছুই নেই। না কেউ কাউকে অস্তিত্ব দান করতে পারে, না কেউ কারো কাছ থেকে অস্তিত্ব হরণ করতে পারে। না জীবন ও মৃত্যুর ওপর কারো হাত আছে, না কেউ কারো লাভ-ক্ষতির মালিক।
মূর্খ, অজ্ঞ ও পথভ্রষ্ট লোকেরা নিজেদের অজ্ঞতার দরুণ যেসব সত্তা সম্পর্কে মনে করে, বিশ্ব-ব্যবস্থায় তাদেরও কোনো দখল রয়েছে এবং তারাও যাকে ইচ্ছা লাভ ক্ষতি পৌঁছাতে পারে, কোরআন মাজীদ জায়গায় জায়গায় বলে, এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তাদের ক্ষমতায় কিছুই নেই। তারা সবাই সমবেত হয়েও নিজ ক্ষমতায় কিছুই করতে পারে না। এমনকি একটি মাছি কিংবা একটি পিঁপড়াও বানাতে পারে না। কারো ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে পারে না। কারো সাহায্য-সহায়তা করতে পারে না। কোরআনের এ বক্তব্য তারই ভাষায় শুনুন, ‘ভূ মন্ডল ও নভোমন্ডলের সাম্রাজ্য আল্লাহ তায়ালার জন্যই নির্ধারিত। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। আর আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তোমাদের আর কোনো কর্ম সম্পাদক ও সাহায্যকারী নেই’ (সূরা তওবাহ : আয়াত-১১৬)। সূরা ফাতিরে বলা হয়েছে, ‘এ আল্লাহই তোমাদের পরওয়ারদেগার ও মালিক। সাম্রাজ্য তারই আর আল্লাহকে ছাড়া যেসব সত্তাকে তোমরা ডাকো, তারা তো খেজুরের বীচির হালকা ঝিল্লিরও (মতো কোনো মূল্যহীন ও নিকৃষ্ট বস্তুর) মালিক নয়’ (সূরা ফাতির : আয়াত-১৩)।
এ সম্পর্কে সূরা হজ্জে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ছাড়া যেসব সত্তাকে তোমরা ডাকো, তারা একটি মাছিও বানাতে পারে না, যদি সবাই মিলেও সে চেষ্টা করে’ (সূরা হজ্জ : আয়াত-৭৩)। সূরা সাবায় বলা হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি তাদেরকে বলে দিন যে, আল্লাহকে বাদে তোমরা যাদেরকে নিজেদের কর্মনির্বাহী ও অভাব মোচনকারী মনে করো, তাদেরকে ডেকেই দেখো, ভূ মন্ডল ও নভোমন্ডলে তাদের অণু পরিমাণ ক্ষমতাও নেই। না তাতে তাদের কোনোরকম অংশীদারিত্ব রয়েছে, না তাদের কেউ তার সাহায্যকারী আছে। (অর্থাৎ, না কোনো কিছু তাদের মালিকানায় আছে, না তার সমকক্ষ আছে। আর নাই বা তাদের সাহায্যের কোনো প্রয়োজন আল্লাহ তায়ালার রয়েছে)’ (সূরা সাবা : আয়াত-২১)।
সূরা যুমারে বলা হয়েছে, ‘হে নবী আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, বলো দেখি আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকো, যদি আল্লাহ আমাকে কোনো কষ্ট দিতে চান, তা হলে কি তারা তা অপসারিত করতে পারবে? অথবা আল্লাহ যদি আমাকে নিজের রহমতে সিক্ত করতে চান, তা হলে কি তারা আল্লাহ তায়ালার রহমতকে আমার কাছ থেকে বারণ করতে পারে? (কখনো নয়) আপনি বলে দিন, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। ভরসাকারীরা তারই ওপর ভরসা করে থাকে’ (সূরা যুমার, আয়াত-৩৮)। সূরা শূরায় বলা হয়েছে, ‘তারা কি আল্লাহকে ছাড়া অন্য কোনো কর্মনির্বাহী বানিয়েছে? বস্তুত আল্লাহই হলেন সবার কর্মনির্বাহী’ (সূরা শূরা : আয়াত-৯)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।