Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যে কারণে গার্মেন্টস শিল্পে কমছে মুনাফা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

প্রতিনিয়ত উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, সে তুলনায় বাড়ছে না উৎপাদিত তৈরি পোশাকের দাম। সঙ্গে কমছে তৈরি পোশোকের চাহিদাও। এই তিন এ কারণে কমছে আয়। আর এই আয়ের সঙ্গে ব্যয় মেটাতে না পেরে ক্রমশ বন্ধ হচ্ছে দেশের ছোট ও মাঝারি তৈরি পোশাক কারখানা। এভাবে চলতে থাকলে তৈরি পোশাক খাতে একসময় অন্ধকার নেমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশের ছোট ও মাঝারি সাইজের তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা। তবে এসব মন্তব্য মানতে নারাজ তৈরি পোশাক খাতের সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, রানা প্লাজা ধসের পর অনেকেই মনে করেছিলেন যে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প আর টিকবে না। কিন্তু এখনও যেহেতু এ খাত টিকে আছে সেহেতু আর কোনও দুঃসংবাদ আসবে না। এ খাতের ভবিষ্যৎ ভালো বলেও জানান তারা।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত চার বছরে দেশের তৈরি পোশাক খাতের বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমেছে আট শতাংশ। পণ্য উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দর কমেছে গড়ে প্রায় সাত শতাংশ। এই তিন প্রতিকূলতায় বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের মুনাফা কমেছে।
সূত্র জানায়, গার্মেন্টস পণ্যের মুনাফা কমার এই তিন কারণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পোশাকের রফতানি প্রবৃদ্ধি ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে আসে। গত অর্থবছরে তা আবার বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অথচ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের বছরেও রফতানিতে প্রবৃদ্ধি এতটা কম ছিল না। ওই বছরের এপ্রিলের পর জুন পর্যন্ত তিন মাসের খারাপ সময় সত্তে¡ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাকশিল্পে গত পাঁচ বছরে ১ হাজার ৯৬৫টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। চাকরি হারিয়েছেন কয়েক লাখ শ্রমিক। একই সময়ে সংকুচিত হয়েছে পোশাক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ। রানাপ্লাজা ধসের পর থেকে কমপ্লায়েন্সসহ নানা ইস্যুতে ছোট ও মাঝারি আকারের এসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ওপর আন্তর্জাতিক বাজারে কমছে পণ্যের দাম।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রানাপ্লাজা ধসের পর বিদেশে বাংলাদেশের পোশাক খাতবিরোধী প্রচারণা, ক্রেতাদের বিভিন্ন শর্তা আরোপ, চুক্তিতে অন্য কারখানায় কাজ করানোর সুযোগ কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রমতে, বিজিএমইএর নিবন্ধিত তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা ৬ হাজার ১৯৬টি। এর মধ্যে বিভিন্ন জটিলতায় বিজিএমইএ নিবন্ধন বাতিল করার কারণে ১ হাজার ৭৬৫টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এই সংখ্যা বাদ দিলে বিজিএমইএ’র নিবন্ধিত কারখানার সংখ্যা দাঁড়ায় চার হাজার ৪৩১টি। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনে চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়েছে আরও ২০০টি। সর্বোপরি বর্তমানে সক্রিয় কারখানার সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০টি।
বিজিএমইএ নেতারা জানান, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে ঠিকই, তবে সার্বিকভাবে দেশে পোশাক কারখানার সংখ্যা কমছে। কারণ যে হারে কারখানা বন্ধ হচ্ছে, সেই হারে নতুন কারখানা গড়ে উঠছে না। একইভাবে সাভারের রানাপ্লাজা ধসের পর থেকে বিদেশি খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের বড় ক্রেতারা অংশীদারি ভবনে অবস্থিত কারখানা থেকে পোশাক নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আগে বড় কারখানাগুলো বিপুল পরিমাণ রফতানি আদেশ সময়মতো সরবরাহ করতে অনেক ছোট ও মাঝারি কারখানাকে দিয়ে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করিয়ে নিতো। এখন ক্রেতারা সাব-কন্ট্রাক্টে চলা এসব কারখানার কর্মপরিবেশও আন্তর্জাতিক মানের কিনা তা যাচাই করছে।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন কারণে তৈরি পোশাক খাতের ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো হয়তো কিছু সমস্যা মোকাবিলা করছে। তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার ভবিষ্যৎ যতো বলা হয় ততোটা খারাপ নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গার্মেন্টস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ