বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিলেট-৩ আসনে সম্ভাব্য ৩ প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইতিমধ্যে মহাজোটের প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গেছে। মহাজোট প্রার্থী ঘোষণার মধ্যে দিয়ে আ‘লীগে চরম হতাশা ক্ষোভ এখন বাস্তবতা। বলতে গেলে ভোট রাজনীতিতে কঠিন সংকটে দলের এ প্রার্থী। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে। দ্বন্ধ ও দূরত্বের সুরাহা অনিশ্চিত। সিলেটের কৌশলগত অবস্থানগত কারণে এ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ নিয়ে এ আসনের সীমানা। দক্ষিণ সুরমা এলাকা সিলেট নগরীর প্রবেশদ্বার। তাই যেকোন দলের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের অন্যতম স্থান হলও এ এলাকার নিয়ন্ত্রণ। সেকারণে প্রার্থী মনোনয়নে এ গুরুত্ব বিবেচনায় না রাখলে পরবর্তীতে কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়তে হয়।
এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে মহাজোট। এখন অপেক্ষা চলছে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে। মনোনয়নে কতটুকু কারিশমা দেখাতে পারে দলটি। দলের একাধিক প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির সাবেক এমপি শিল্পপতি শফি আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক-সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম। জল্পনা-কল্পনা এই প্রার্থীদের নিয়ে এখন দলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে। শিল্পপতি শফি আহমদ চৌধুরী যখন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তখনকার পেক্ষাপট বর্তমান একেবারে ভিন্ন। দেশ ও রাজনীতিতে এসেছে অতিমাত্রায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন। আগামী নির্বাচন বিএনপি জন্য ভোট ও রাজপথের জন্য অস্তিত্বের প্রশ্ন। নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের পূর্বে-পরে কঠিন পরীক্ষায় মুখোমুখি হতে হবে নেতাকর্মীদের। সেকারণে ভরসাপূর্ণ ও আস্থাশীল প্রার্থী খুঁজছে নেতাকর্মীরা। কর্মী বান্ধব প্রার্থী ছাড়া কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে সাহস পাচ্ছেনা তারা।
প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরীর ঋণ খেলাপি মামলা চলমান। ঢাকার তেজগাঁও শাখার পূবালী ব্যাংককে এলাবার্ট ডেবিড বাংলাদেশ লি: নামে খেলাফি হয়েছেন শফি চৌধুরী। অর্থঋণ আদালতে মামলা নং ৪৫/০৩। টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংক। আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করেন তিনি। আপিল মামলা কোট নং ১০ এর শুনানি বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও কাজী মো: ইজারুল আকন্দের আদালতে আজ। কিন্তু আদালত ১ (এক) সপ্তাহ পর শুনানির দিন ধার্য করেছেন (হাইকোটের মামলা নং ৩৩৭/১৭ইং, শুনানির ক্রমিক নং ৩৩)। শফি আহমদ চৌধুরী ঋণ খেলাফি অবস্থায় ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতি নির্বাচনের পূর্বে ঋণ খেলাফি আদেশের উপর স্থগিতাদেশ নিয়ে নির্বাচন করে থাকেন। এবারও সেই চেষ্টা করছেন। কোন অবস্থায় স্থগিতাদেশে ব্যর্থ হলে তার মনোনয়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিবে দলে। এছাড়া বিগত ওয়ান ইলেভেন সরকারকালীন তার গ্রামের বাড়ির পুকুর থেকে ত্রাণের টিন ও প্রোটিন বিস্কুট উদ্ধার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইমেজ সংকটে পড়েন তিনি। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের জন্য বিষয়টি বিরোধিতার খোরাকে পরিণত হয়। এখন নতুন করে বিষয়টি উঠে আসছে ভোটের মাঠে।
অপরদিকে ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম, দলের যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের ঘনিষ্টভাজন হিসেবে। যুক্তরাজ্যে দলের শীষ পর্যায়ে ছিলেন, এখনও আছেন। তৃণমূলে দলের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা নেই। কোন কারণে তিনি প্রার্থী হলে বর্তমান এমপির জন্য সুখবর এমনটিই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। দীর্ঘ আওয়ামীলীগ শাসনে নিরাপদ দূরত্বে তিনি। নির্যাতিত নিষ্পেষিত নেতাকর্মীদের যন্ত্রণা বা অস্থিরতার সাথে তার বাস্তব পরিচয়ও নেই। বর্তমান সরকার দলীয় এমপির প্রভাব ও নির্বাচনী হট কৌশল মোকাবেলায় একেবারেই অনভিজ্ঞ তিনি।
এ আসনে দলের অপর সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও দেশের সফল সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের পিএস আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। ছাত্ররাজনীতির মধ্যে দিয়েই বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় তিনি। মহাজোট প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ও আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর বাড়ি একই উপজেলা ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায়। মাঠ রাজনীতিতে পোড়া খাওয়া কাইয়ুম চৌধুরীর সাথে আস্থাশীল সম্পর্ক রয়েছে তার দলের নেতাকর্মীদের। বিরোধী জোটের নিকট তিনি হেভিওয়েট প্রার্থী। শীষ পর্যায়ে রাজনৈতিক অবস্থান ও সাবেক অর্থমন্ত্রীর পিএস থাকার সুবাদে দল ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। সেকারণে অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সাহস ও ডিলিং এ তিনি পারদর্শী। একজন রাজনৈতিক হিসেবে তার প্রার্থিতা সার্বিক বিচারে প্রত্যাশা করে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।