বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
৫ বছর পর আবারো নৌকা আর ধানের শীষের লড়াই। স্বভাবতই এই লড়াইটি কেউ কাউকে না ছাড়ে সমানে সমানই হবার কথা। ময়মনসিংহের ১১ টি আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরের বিরোধী দল বিএনপি দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল না করলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
কোন কোন আসনে আবার দুই দলকেই তাদের জোটের প্রার্থীকে ছাড় দিতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই প্রার্থীকে জেতাতে মূল দল কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভরাডুবির আশঙ্কা থাকছেই।
ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ১৪ জন আর বিএনপির ৭ জন। আওয়ামী লীগ থেকে এগিয়ে আছেন জুয়েল আরেং। আর দীর্ঘদিন যাবত দলের রাজনীতির শক্ত হাতে পরিচালনা করায় নেতা-কর্মীদের ‘গুডবুকে’ রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ১৭ জন আর বিএনপি’র বিএনপির ৫ জন। এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ কিংবা সাবেক সংসদ সদস্য হায়াতুর রহমান বেলাল দলীয় মনোনয়ন পাবেন। আসনটি পুনরুদ্ধারে বিএনপি থেকে দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ারকে ভাবছেন নেতা-কর্মীরা। সারোয়ার ও তার পরিবারের নিজস্ব ভোট ব্যাংক, পারিবারিক ঐতিহ্য ভোটের মাঠকে প্রভাবিত করবে।
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে নৌকার মাঝি হতে চান ১৬ নেতা। আর ধানের শীষ প্রার্থী ৮ জন। নানা কারণে দলের সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ বিতর্কিত হয়েছেন। এই আসনে নতুন মুখ দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে জেলা আওয়ামী লীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফ হাসান অনু ও ড. সামিউল আলম লিটন এগিয়ে আছেন। বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী ইকবাল হোসাইন ও উপজেলা চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের সাপে-নেউলে সম্পর্কে মাঠ গুছাচ্ছেন জেলা জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল হক।
ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে সক্রিয় থাকলেও জাতীয় পার্টি জোটে থাকায় আবারো মহাজোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। ময়মনসিংহ বিভাগের কৃতিত্বসহ নানা কারণে তাকে নিয়ে ভোটাররা ইতিবাচক।
এই আসনে বিএনপি থেকে ড্যাবের মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের মনোনয়ন সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়া শক্ত মনোনয়ন প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র নেতা আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, কোতোয়ালী বিএনপি’র সভাপতি কামরুল ইসলাম ওয়ালিদ, নগর বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম। তারাসহ ৬ শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী মনোনয়ন বোর্ডের কাছে দাবি করেছেন, আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় মাঠের নেতাকেই দলীয় মনোনয়ন দিতে।
ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে জোটগতভাবে এবারো মনোনয়ন পেতে পারেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুক্তি। বিএনপি থেকে মনোনয়ন লড়াই চলছে সাবেক জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও তার ছোট ভাই জাকির হোসেন বাবলু’র মাঝে। এই কারণে সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে ‘গৃহবন্দি’ করেছেন ছোট ভাই বাবলু এমন অভিযোগ স্বয়ং অবগত হয়েছেন দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে ৫ বারের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন। এবার আওয়ামী লীগের কাছে আসনটি দাবি করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু। বিএনপিতে মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় রয়েছেন চাচা সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিন আহমেদ ও ভাতিজা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতি জামাই আখতারুল আলম ফারুক।
ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে এবার জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। এখানে দলীয় তিন সাবেক সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, আব্দুল মতিন সরকার, রেজা আলী’র পাশাপাশি ত্রিশাল পৌরসভার জনপ্রিয় মেয়র এ বি এম আনিসুজ্জামান মনোনয়ন লড়াইয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। আসনটিতে বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটনই গতবারের মতো এবারো মনোনয়ন পাচ্ছেন।
ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম এবারো জোটগতভাবে আসনটি পেতে চান। তবে এবার তাকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার। বিএনপিতে সাবেক সংসদ সদস্য শাহ নুরুল কবির শাহীনের চেয়ে জনমত ও দলীয় নেতা-কর্মীদের আপদে-বিপদে পাশে থাকার মানসিকতার কারণে এগিয়ে রয়েছেন উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু।
ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে আওয়ামী লীগের এমপি আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিনের ‘আমলনামা’ ভালো নয়। এবার তার ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুস সালাম। বিএনপিতে উত্তর জেলা বিএনপি’র সভাপতি খুররম খান চৌধুরী’র মনোনয়ন নিশ্চিত।
ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে আবারো নৌকার মাঝি হয়ে রেকর্ড করতে যাচ্ছেন জনপ্রিয় স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল। ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের কারণে সব সংসদ সদস্যদের ‘মডেল’ তিনি। তার বিপরীতে একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকলেও শেখ হাসিনার আস্থা এই তরুণ সংসদ সদস্যের প্রতি। বিএনপি থেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শিল্পপতি এবি ছিদ্দিকুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, মুশফিকুর রহমানসহ একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন।
ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে এবারো নৌকার প্রার্থী হিসেবে বহাল থাকতে পারেন সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. এম আমান উল্লাহ। বিএনপিতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফখরউদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোর্শেদ আলমের মধ্যে ‘নেক এন্ড নেক ফাইট’ অবস্থা।
তবে আসনটি পুনরুদ্ধারে নিজের হবিরবাড়ি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৫০ হাজার ভোট ফ্যাক্টর বলে মনে করেন মোর্শেদ আলম। একই সঙ্গে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলীয় একটি পক্ষের সমর্থনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তার বিজয় ছিনতাই করেছিলো। ফলে ভোটাররা এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মোর্শেদকেই চান, এমন অভিমত তার অনুসারীদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।