Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশা-নিরাশায় রাজশাহী অঞ্চল

সংশয় মুখে মুখে

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১:২০ এএম, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮

হযরত শাহ মখদুম (র.), হযরত শাহ নিয়ামত উল্লাহ, হযরত দানিশমান্দ, হযরত তুরকান শাহ, করম আলী শাহ প্রমুখ পীর মাশায়েখের পূণ্যভূমি বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আশা নিরাশার দোলাচলে দুলছে মানুষ। ভোট নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হবেতো। এমন সংশয় মুখে মুখে। 

ঐতিহ্যগত ভাবে বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক প্রভাব বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তির পক্ষে। আবার নানা কারণে এন্টি ইন্ডিয়ান সেন্টিমেন্টও বিরাজমান। যার কারণে স্বাধীনতার পর থেকেই (১৯৭৩) এ অঞ্চলের নির্বাচনে বেশীরভাগ এ শক্তির পক্ষে রায় দিয়েছে। ধীরে ধীরে পরিনত হয়েছে বিএনপির দূর্গ হিসাবে।
বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের (রাজশাহী, নবাবগঞ্জ, নওগা, নাটোর) জেলাগুলোর ১৯টি আসনের মধ্যে দু’তিনটা বাদে সব আসন পেয়ে এসেছে বিএনপি। মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিনের রাজনৈতিক সিডরে সেই বিএনপির দূর্গে ধস নামে। এরপর ২০০৮ সালের পর থকে এ পর্যন্ত চরম বিভিষীকাময় অবস্থার মুখে পড়ে। হাজারো মামলা, লাখো আসামি কারাবাসে জীবন দূর্বিসহ হয়ে ওঠে দলটির নেতাকর্মী সমর্থকদের। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে এরমাত্রা বাড়ে আরো। চিড়ে চ্যাপ্টা হয় বিএনপি। অবস্থা এমন দাঁড়ায় দলীয় কার্যালয়ের দিকেও পা মাড়াতে পারেনি।
অন্যদিকে ফাঁকা ময়দান পেয়ে দল ক্ষমতাসীন আর প্রশাসন যন্ত্রকে পুরো ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ প্রভাব বিস্তার করে। ২০০৮ এর আগের সাংগঠনিক অবস্থা আর বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থার মাঝে বিশাল ফারাক। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে আওয়ামী লীগ ছাড়া যেন আর কোন দল নেই। বাজার রাস্তা অলিগলিতে শহর রক্ষা বাধ, ফুটপাত সর্বত্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ এবং সহযোগি সংগঠনসহ বিভিন্ন নামের হাজারো অফিস দৃশ্যমান। বারো মাসে তের পার্বনের মত অফিসগুলোয় দিবস অনুযায়ী কর্মসূচি চলে। কার্যালয়গুলো ঘিরে তৈরী হয়েছে ভাই কেন্দ্রীক বলয়। দলের রাজনীতির বদলে চলে ভাইয়ের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে এমপি লীগ। প্রায় স্থানে ভিড় জমায় সুবিধাবাদীরা। যেভাবে যে পেরেছে কামায় করেছে। একেবারে জিরো থেকে হিরো হয়েছে কাড়ি কাড়ি টাকা আর সম্পদের মালিক। টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, ভূমি দস্যুপনা, বালুদস্যু পরিবহন শ্রমিকের টাকাসহ বিভিন্ন খাত থেকে এসেছে অর্থ। ভাগাভাগি হয়েছে।
আবার বনিবনা না হলে হানাহানিও হয়েছে। নিজেদের প্রভাব আর বলয় ঠিক রাখতে কর্মী নামের ক্যাডার গ্রæপ তৈরী করা হয়েছে। আর দলের ত্যাগি পরীক্ষিত নেতাকর্মী সমর্থকরা নব্যদের কনুইয়ের গুতোয় চলে গেছে একেবারে সাইড লাইনে। অবস্থা দেখে তারা হাপিত্যেশ করেছেন। অভিযোগের পর অভিযোগ জানিয়েছে হাইকমান্ডে। সতর্ক করা ছাড়া কিছু তেমন ফল মেলেনি। উল্টো বহিষ্কারের খড়গ নেমে এসেছে। এখন নির্বাচনের সময় এ কারণে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়েছে বর্তমান এমপিদের বিরুদ্ধে। হাইকমান্ডকে বলছে বর্তমানকে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে দেয়া হোক। নইলে বিপর্যয় ঘটবে। এদের কারণে আওয়ামী লীগের ভাল অর্জনগুলো চলে গেছে বিসর্জনে।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক স্টীম রোলারের নীচে চাপা পড়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তির চিড়ে চেপ্টা হলেও তাদের নিঃশেষ করা যায়নি। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়াবার। তাদের প্রতি সাধারণ ভোটারদের অকুন্ঠ সমর্থন আর সমবেদনা রয়েছে। যার প্রমান সম্প্রতি মিলেছেও। গত ৯ নভেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় মহাসমাবেশ ঘিরে পরিবহন ধর্মঘট, পথে পথে বাধা, তল্লাশি আর গ্রেফতার এক রকম হরতালের মত পরিবেশ সৃষ্টি করেও স্বত:স্ফুর্ত জনতার ঢল ঠেকানো যায়নি। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে যোগ দিয়েছে। অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছে সমাবেশের নেতৃবৃন্দকে। জানান দিয়েছে তোমরা এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমাদের সাথে। এক সমাবেশেই উজ্জীবিত হয়েছে এ অঞ্চলের কোটি প্রাণ। তৃনমূল থেকে নগর পর্যন্ত এক আওয়াজ আমার ভোট আমি দিতে চায়। নিরাপদে ইচ্ছেমত দিতে চায়্। ডে নাইটের ভোট আর দেখতে চায়না। রাতের বেলা ব্যালট বক্স ভরা আর দিনের বেলা ভোটারদের তাড়িয়ে দেয়া আর নয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মহাসমাবেশ আর নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মী আর সমর্থকদের মাঝে যে উদ্দীপনা এসেছে তা ধরে রাখতে হবে। সময় এসেছে রাজনৈতিক সিডরে হারিয়ে যাওয়া বিএনপির দূর্গকে পুনরুদ্ধারের। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে তৎপর হতে হবে। নির্বাচন নিয়ে অশুভ খেলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার এখনি শেষ সময়। যারা বলেছিল বাটি চালান দিয়ে বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা তাদের এমন আস্ফালনের জবাব দেবার। নইলে সময় গেলে সাধন হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ