বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইবাদত-বন্দেগি ও নেক-আমলের পাশাপাশি সৃষ্টির সেবা ইসলামের অন্যতম প্রেরণা। মহানবী সা. অতীত যুগের একটি কাহিনী তার উম্মতের জন্য বর্ণনা করেছেন। সেখানে বলেছেন, এক পাপীয়সী নারী একটি মৃত্যুপথযাত্রী তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
অপর এক নারী খেলাচ্ছলে একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখে ছিল, এরপর ভুলক্রমে নারীটি তাকে একা ফেলে কোথাও চলে যায়। বিড়ালটি ক্ষুধায় কষ্ট করে মৃত্যুবরণ করে। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা এ নারীর জন্য জাহান্নামের ফায়সালা করেন (আল হাদিস)। অতএব, জান্নাত ও জাহান্নামের জন্য অনেক বড় বিষয়ের প্রয়োজন হয় না। আল্লাহ চাইলে সামান্য কারণেই কাউকে ক্ষমা করে জান্নাত দিতে পারেন। আর কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে জাহান্নামে পাঠাতে পারেন। বিষয়টি আল্লাহর খুশি-অখুশি বা ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।
হাদিস শরিফে আছে, পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। অর্থাৎ, পবিত্রতা ছাড়া ঈমান পূর্ণাঙ্গ হয় না। মন মস্তিস্কের পবিত্রতা হচ্ছে ঈমান ও চেতনা। গোটা শরীরের পবিত্রতা হচ্ছে হালাল পানাহার। দৈহিক পবিত্রতা হচ্ছে অজু-গোসল। পবিত্রতা ইবাদতের সাথে যুক্ত। পরিচ্ছন্নতার গুরুত্বও এর চেয়ে কম নয়। যেখানে মানুষ কষ্ট পাবে বলে জুমার গোসল, ঈদের গোসল, পরিষ্কার কাপড়, মেসওয়াক, পেয়াজ-রসুন ও বিড়ি সিগারেটের দুর্গন্ধ দূর করে মসজিদে যাওয়া, আতর সুগন্ধি ব্যবহার করা, মানুষের আসা-যাওয়ার পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ ইত্যাদি শরিয়তেরই অংশ।
এ জন্য বলা হয়, আননাজাফাতু মিনাল ঈমান। অর্থাৎ পরিচ্ছন্নতাও ঈমানের অংশ। আমাদের সমাজে মসজিদে অজুখানার দুর্গন্ধ প্রবেশ করে এমন নজির কম নয়। এ বিষয়ে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে মহানবী সা.-এর ওসব হাদিসের আলোকে যেখানে বলা হয়েছে, দুর্গন্ধে ফেরেশতাদের কষ্ট হয়।
তাই বিধর্মীরা কি বলবে তা না ভেবে আমাদেরই এ নিয়ে ভাবতে হবে। একটি বিষয় বলা খুবই জরুরি যে, বাংলাদেশে বাইরে চলাচলকারী লক্ষ কোটি মানুষের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার বা সামান্য ফ্রেশ হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বড় সিটি বা শহরে যদি কিছু ব্যবস্থা থেকেও থাকে, তা নিতান্তই অপ্রতুল। পাশাপাশি ব্যবহারের অযোগ্য।
সম্প্রতি রাজধানীতে হাতে গোনা কয়েকটি পাবলিক টয়লেট এমন হয়েছে, যাতে মানুষ যেতে পারে। তবে, এসবও বেসরকারি ঠিকাদার বা এনজিওর পরিচালনায়। যেসব একটু বেশি টাকা ব্যয়ে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সারা দেশে এসবের বালাই নেই। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় নারীদের বেলায়। নানা প্রয়োজনে তারা দূর-দূরান্তে যাতায়াত করেন, কিন্তু শত প্রয়োজনেও তারা নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন না।
দীর্ঘ সময় শারীরিক চাপ সহ্য করে তাদের অনেকই নানা রোগে আক্রান্ত হন। বিশেষ করে কিডনি, জরায়ু, মুত্রতন্ত্র ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরুষেরা কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই একটু আড়াল দেখে শরীর হালকা করতে পারে, যা নারীদের বেলা মোটেও সম্ভব হয় না। এ কষ্ট কবে দূর হবে, বা কীভাবে হবে, সে চিন্তা সরকারকে অবশ্যই করতে হবে।
আমার এক দার্শনিক ও শিক্ষক বলতেন, ‘কোনো জাতি কতটুকু সভ্য তা বিচার করবে তাদের পথচারী ও মুসাফিরদের পেশাব-পায়খানার ব্যবস্থাপনা দেখে। আর কোন পরিবারের কর্তারা দায়িত্বশীল তা বিবেচনা করবে তাদের নারীদের চালচলন, ব্যবহারিক জীবনের সুখ-সুবিধা, বিশেষ করে রান্নাঘরের আরামপ্রদতা দেখে।’ মানুষের পেশাব-পায়খানা শুধু নয়, পথচারী মুসাফিরদের গোসল ও কাপড় কাঁচাও একটি আবশ্যকীয় ব্যাপার।
হাজার বছরের মুসলিম শাসনামলে বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা মুসাফির খানা, সরাইখানা, খানাকাহ, দরবার, লঙ্গর ইত্যাদি নামে জনকল্যাণের মহা আয়োজন করে রেখেছিল। বর্তমানে এসব আর নেই। সরকারও ব্যবস্থা করতে পারে না। দেখা যায়, শুধু নামাজিরা না বিচরণরত সকল মানুষ প্রকৃতির প্রয়োজনে ছুটে যায় মসজিদ সংলগ্ন অজুখানায়। যেখানে নিজের ঘরবাড়ি থেকে অজু করে মসজিদে যাওয়ার কথা। বেশি হলে কেবল নামাজিরা এসব ব্যবহার করবে। সেখানে দেশের সব মানুষ যদি কোনো পথ না পেয়ে এসব কাজের জন্য মসজিদেই ছুটে যায়, তা হলে অজুখানার দুর্গন্ধ ফেরাবে কে?
বিধর্মীরা যদি এ বিষয়টিকে লক্ষ করে থাকে, তা হলে তাদের দোষ দিয়ে লাভ কি? আমাদেরই গোটা বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। প্রথমে ভাববে সরকার, সমাজ ও রাষ্ট্র। যদি পাবলিকের বিষয়ে সমাধান আসে, তা হলে মসজিদওয়ালারা অনেকটাই রেহাই পায়। এরপর নিজেদের মসজিদ সুগন্ধিত রাখা, অজুখানা দুর্গন্ধমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখা তাদের পক্ষে আরো অনেক সহজ হয়ে যাবে। পাশাপাশি সতর্কতা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে দিনে দিনে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।