Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্ষতবিক্ষত কাঁকড়ি-ডাকাতিয়া

বেপরোয়া মাটি সিন্ডিকেট

সরকারের খরচ লাখ লাখ টাকা | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

মোঃ আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম থেকে : চৌদ্দগ্রামের স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট কাশিনগর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট কাঁকড়ি ও পাশ্ববর্তী মরা ডাকাতিয়া নদী রক্ষা বাঁধসহ অন্তত দশটি পয়েন্ট থেকে মাটি কেটে নদীর অস্তিত্ব বিলীন করে দিচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

দীর্ঘ দিন ধরে মাটি লুটে নিয়ে এই নদীর অপরুপ সৌন্দর্য বাঁধাহীনভাবে ধ্বংস করছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এ নিয়ে সচেতন মহলের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করলেও রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় প্রশাসন ও কুমিল্লার পরিবেশ অধিদপ্তর। উপজেলার উজিরপুর, কালিকাপুর, শ্রীপুর ও কাশিনগরের বিভিন্ন স্থানে কাঁকড়ি নদীর চর এলাকা থেকে প্রভাবশালী চক্রটি দিনের বেলায় অবাধে বালু ও মাটি কেটে বিক্রি করে দিলেও নিয়মিত ভাগ-বাটোয়ারা পেয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপই নিচ্ছে না প্রশাসন এমন অভিযোগ এলাকার লোকজনের। এদিকে চরের পাশাপাশি নদী রক্ষা বাধের নিকটস্থ মাটি কেটেও বিক্রি করে দিয়েছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চৌদ্দগ্রামের কাঁকড়ি ও মরা ডাকাতিয়া নদীর কাশিনগর থেকে উত্তর যাত্রাপুর, রামপুর পয়েন্টে আবুল কাশেম, দলিলুর রহমান, অলিপুর পয়েন্টে মনির হোসেন, রবিউল, ফয়েজ আহমেদ, কাঁকড়ি-ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল কাশিনগরের তিন গাঙ্গের মুখ ও ব্রিজের উত্তরে আমির হোসেন মেকার, জাকির হোসেন, মরা ডাকাতিয়া নদীর হিলালনগর-বারইয়া থেকে উত্তর ধর্মপুর পর্যন্ত মাঝামাঝি স্থানে দুটি পয়েন্টে আলমগীর হোসেন ও জালালের নেতৃত্বে পৃথক সিন্ডিকেট প্রতিদিনই ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। মাটিগুলো ট্রাক্টরে করে পরিবহনের কারণে নদীর মূল প্রতিরক্ষা বাঁধও হুমকির মুখে। ৫টি মেশিনের সাহায্যে মাটি কেটে বিক্রি করার ফলে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত দুটি ব্রিজ হুমকির সম্মুখীন বলে জানা গেছে। এছাড়া মাটিকাটা চক্র নদী রক্ষা বাঁধ ও চরের মাটি কেটে নেয়ার ফলে কাশিনগর এলাকার বারিয়া ব্রিজ, হিলালনগর কাতালিয়া ব্রিজ, কাশিনগর বাজার ব্রিজ, কাশিনগর কলেজ সংলগ্ন ব্রিজও হুমকির মুখে রয়েছে।

ডাকাতিয়া ও কাঁকড়ি নদী রক্ষা বাঁধ এবং চরের কমপক্ষে ২০টি পয়েন্ট থেকে মাটি কেটে ট্রাক-ট্রাক্টরযোগে ইটভাঁটাসহ বিভিন্নস্থনে বিক্রি করছে প্রভাবশালী ১০টি সিন্ডিকেট। এভাবে প্রতিবছরই মাটি বিক্রি করে প্রভাবশালীরা লাভবান হলেও বর্ষা মৌসুমে প্রতিবারই বিভিন্নস্থানে ভাঙে নদী রক্ষা বাঁধ, তলিয়ে যায় নদীপাড় ও তৎসংলগ্ন এলাকার মানুষের বাড়িঘর ও ফসলি জমি। সরকার লাখ-লাখ টাকা খরচ করে নদী রক্ষা বাঁধ মেরামত করলেও বাঁধ-চরের ওই মাটি বিক্রি করে কেউ-কেউ আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। আর বর্ষা মৌসুম এলে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হন পাড়ের নিরীহ মানুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, এক রাজনৈতিক নেতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত কাশিনগর-সুয়াগাজী সড়কের মাটির যোগান দিতে কাঁকড়ি ও ডাকাতিয়া নদীর চর ও পাড়ের মাটি অবাধে কাটা হয়েছে।

সরেজমিন পদির্শনকালে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুম এলে চিহ্নিত এসব সিন্ডিকেট কাঁকড়ি ও ডাকাতিয়া নদী রক্ষা বাঁধ ও চরের মাটি বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ লাভবান হলেও বর্ষা মৌসুমে প্রতিবারই বিভিন্নস্থানে ভাঙে নদী রক্ষা বাঁধ। তলিয়ে যায় নদীপাড় ও তৎসংলগ্ন এলাকার মানুষের বাড়িঘর ও ফসলি জমি, বাড়ে জনদুর্ভোগ, নিঃস্ব হন পাড়ের নিরীহ মানুষ। এছাড়া নদীর নাঙ্গলকোট ও লাকসাম অংশেও বিভিন্নস্থানে মাটি কাটা অব্যাহত আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুমিল্লাস্থ উপ-বিভাগ-২ সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরসহ গত তিন অর্থ বছরে শুধুমাত্র কাঁকড়ি নদীর তীর রক্ষা বাঁধ মেরামত কাজে ব্যয় হয়েছে সরকারে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এছাড়া কুমিল্লার জেলার পুরাতন ডাকাতিয়া ও নতুন ডাকাতিয়া সেচ ও নিষ্কাশন প্রকল্প নামে ৪৯ কোটি ৮৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকার আরও একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছর থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে সরকার কোটি টাকা খরচ করে নদী রক্ষাবাঁধ মেরামত করলেও সঠিক নজরদারিসহ মাটি কাটা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উল্লেখযোগ্য কোন নজির না থাকায় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটগুলো বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে প্রতিবছরই কাটছে নদী রক্ষাবাঁধ চরের মাটি।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লাস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ জগলুল সাংবাদিকদের জানান, ডাকাতিয়া ও কাঁকড়ি নদীতে চরের ও পাড়ের মাটি যারা কেটে নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তারপরও আমাদের কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি আরও জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন অর রশিদ ভূইয়া বাদী হয়ে মনির হোসেন, আমির হোসেন, রবিউল, আলমগীরসহ মাটি কাটা সিন্ডিকেটের ৪ জনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মু. আসাদুজ্জামান জানান, যারা নদী রক্ষা বাধ ও চরের মাটি কেটে জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং সরকারের অর্থের ক্ষতি সাধন করে তারা কখনও ভাল মানুষ হতে পারে না। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কাশিনগর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবু হানিফ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কমিশন নেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। আমি প্রায় সময় তাদেরকে মাটি কাটতে নিষেধ করতাম। কিন্তু প্রভাবশালীরা নিষেধ অমান্য করেই মাটি কাটা অব্যাহত রাখে’।



 

Show all comments
  • Md Tashin Hossain Emran ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৫:১৯ পিএম says : 0
    ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাটি সিন্ডিকেট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ