বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিশ্বে এখন নারী-পুরুষ সমতা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। অনেকেই বলেন, ইসলাম নারীকে স্বাধীনতা দেয়নি। সমতা দেয়নি। একদল মানুষ নারীর পক্ষ নিয়ে ‘নারীবাদী’ হয়ে গেছেন। তাদের দেখাদেখি মুসলিম সমাজেও এ ধরনের চিন্তা ছড়িয়ে পড়ছে। যার ছায়া এসে পৌঁছেছে আমাদের বাংলাদেশেও। অনেকের মনেই প্রশ্ন ইসলামে নারীরা পর্দায় কেন? সম্পত্তিতে ভাইয়ের অর্ধেক কেন? দুই নারীর সাক্ষী এক পুরুষের সমান কেন ইত্যাদি। এ বিষয়ে সঠিক বুঝ লাভ করতে হলে, চোখ থেকে পশ্চিমা অপপ্রচারের রঙিন চশমা খুলতে হবে। বুঝতে হবে যে, পাশ্চাত্যের নারী-পুরুষ সমতার ধারণা ভুল।
অতএব, এ ধারণা থেকে চিন্তা করলে ইসলামের সমতার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যাবে না। চিন্তাটি করতে হবে মানুষের স্রষ্টা ও বিধাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নীতি অনুযায়ী। ইসলামে নারী ও পুরুষের মর্যাদা অবশ্যই সমান। এমনকি নানা পর্যায়ে নারীর মর্যাদা পুরুষের চেয়ে বহুগুণ বেশি। তবে মানবজীবনে কেবল মর্যাদা দিয়ে জীবনের সবকিছু চলে না।
এখানে মর্যাদা, ক্ষমতা, অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে মানুষে ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়। নারীর মর্যাদা ক্ষমতা ও অধিকার পুরুষের চেয়ে বেশি। কিন্তু দায়িত্ব কম। আবার নারীর একটি দায়িত্ব আছে যা শত পুরুষের দায়িত্বের চেয়ে বড় ও ভারী। এর নাম মাতৃত্ব। এটি কোনো পুরুষ পালন করতে পারবে না। মর্যাদাও এমনই।
নবী করিম সা.কে এক লোক প্রশ্ন করল, হযরত আমি কার সেবা করব, নবীজী উত্তরে বললেন, ‘তোমার মায়ের’। লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করল, এরপর কার? হযরত জবাব দিলেন, ‘তোমার মায়ের’। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, হে রাসূল এরপর কার? প্রিয় নবী আবারো জবাব দিলেন, ‘তোমার মায়ের’। লোকটি ফের প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল এরপর কার? তখন চতুর্থবারের মতো জবাব দিতে গিয়ে নবী করিম সা. বললেন, তোমার বাবার’ (আল হাদিস)। এ প্রশ্নোত্তরে নারীর মর্যাদা যে পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি তা কি স্পষ্ট নয়? এরপর ধরা যাক, নারীর জীবন জীবিকার কথা।
পৃথিবীর সব নারী ও তাদের শিশুরা পুরুষদের কাঁধেই আমানত হয়ে আছে। এটি আল্লাহর প্রাকৃতিক বিধান। শরিয়তও প্রকৃতি অনুযায়ীই তৈরি। এরপরও নারীর মালিকানা ও নিজ অঙ্গনে কর্তৃত্ব ইসলামে স্বীকৃত। তবে, নারীর মাতৃত্ব, নারীত্ব, সতিত্ব, ঈমান ও সম্মান রক্ষার্থে তাদের সেফটির ওপর জোর দিয়েছে।
পুরুষের চালচলন, জীবিকার কঠোর বোঝা, কঠিন দৈহিক শ্রম, অনিরাপদ চলাচল ইত্যাদি থেকে নারীকে দূরে রেখেছে। এটি তার প্রতি অবহেলা নয় বরং তার বিকল্পহীন দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্যই করেছে। কেননা, মানব শিশুর জন্ম, ধারণ-লালন, সংসারের পরিচালনা, পুরুষের শান্তিময় আশ্রয় সবই নারীর কাজ। এ হিসাবে নারীকে সুখি, নিরাপদ, নির্ঝঞ্ঝাট, পবিত্র ও সুরক্ষিত রাখা ইসলামের অভিপ্রায়।
তবে, নারীর মাতৃত্বের প্রয়োজনেই প্রকৃতি তাকে যে বৈশিষ্ট্য, নিয়মিত অসুস্থতা, শারীরিক গঠন, স্বভাবগত মায়াময়তা ইত্যাদি দিয়েছে, সেসব অস্বীকার করে বা বিকৃত করে পুরুষের সঙ্গে নারীর নিঃশর্ত অংশগ্রহণ ইসলামসম্মত নয়। যে জন্য নারী পুরুষে অবাধ মেলামেশা শরিয়তে হারাম। প্রয়োজনে শরিয়তের শর্ত পালন সাপেক্ষে, পর্দা, দৃষ্টি সংযম ইত্যাদি পালন করে আর্থ সামাজিক লেনাদেনা বৈধও রেখেছে।
কেবল ইসলামি উম্মাহর ইমারত (খেলাফতের প্রধান) ও মুসলিম জামাতের ইমামত (পুরুষের জামাতের ইমামতি) ছাড়া নারী অন্য সবকিছুতেই ভূমিকা রাখতে পারে। এটি নারীর প্রতি অবজ্ঞা নয়, বরং মাতৃত্বের বৈশিষ্ট্যের প্রতি পরম শ্রদ্ধা। তবে, অধিক স্নেহ, নম্রতা ও কোমলতা এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভীরুতা, অমনোযোগিতা, পরিবেশ জ্ঞানের স্বল্পতা দরুণ বোধের সীমাবদ্ধতার জন্য (অল্প ব্যতিক্রম ছাড়া) সাধারণত নারীরা সবসময় সবক্ষেত্রে স্বাভাবিক মন-মানসিকতা ধরে রাখতে পারে না।
তাই, গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে তাদের সাক্ষ্য দু’জন মিলে একজনের সমান করা হয়েছে। তবে, এটিও আইনগত ক্ষেত্র ছাড়া জীবনের সব ক্ষেত্রে নয়। এটি উচ্চতর প্রজ্ঞাময় মহান সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্ত। প্রকৃতির ওপর মানুষের যেমন হাত নেই, অভিযোগ নেই, ঠিক তেমনই শরিয়তের ওপরও মানুষের হাত নেই, অভিযোগ নেই, থাকতে পারে না।
সুতরাং ইসলামের আলোয় যখন আপনি সব বিষয় দেখবেন, তখন মনে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না। কারণ, ইসলাম মহান সৃষ্টিকর্তার বিধান। বান্দাদের সম্পর্কে তার চেয়ে ভালো আর কে জানে। কিসে তাদের মঙ্গল, তা তিনি ছাড়া আর কে বুঝবে। মুসলিম নারীরা কত সম্মানে অবস্থান করছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখলে দুনিয়ার মানুষ আর যাই করুক, মুসলিম নারীদের জীবন নিয়ে ঈর্ষা করবেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।