Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রকাশিত হলো খালেদা জিয়ার জীবনের গল্প

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী ও নানা ঘটনা প্রবাহ নিয়ে লেখা ‘বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ, হার স্টোরি’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল (রোববার) বিকেলে রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। দি ইউনিভার্সেল একাডেমি থেকে প্রকাশিত বইটি লিখেছেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। ৭১৮ পৃষ্ঠার এই বইয়ের দাম ২ হাজার টাকা। বইয়ে লেখক তুলে এনেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রামের গল্প। গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী, স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম, সাবেক তত্তাবধায়ক সরকারের মেয়াদে কারাবাস, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রীর জীবনের অনেক অজানা কথা জানা যাবে এ বইয়ে। বইটির লেখক সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, বেসিক্যালি এই বইটা করা হয়েছে খালেদা জিয়ার জীবন ও জীবনের গল্প নিয়ে। তার রাজনৈতিক সংগ্রাম তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার উত্থানের গল্প আছে বইটিতে। ‘বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ, হার স্টোরি’ বইয়ে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্তাবধায়ক সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত তুলে ধরেছেন। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্ম নেওয়া খালেদা খানম পুতুল কীভাবে সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হলেন, স্বামীর মত্যুর পর গৃহবধূর দায়িত্ব ছেড়ে নেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির গুরু দায়িত্ব এসবের বর্ণনা আছে বইটিতে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক ব্যর্থ সামরিক অভূত্থ্যানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হন। এরপর প্রায় ৭ মাস পর দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের আহ্বানে ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন খালেদা জিয়া।
রাজনীতিতে তার আগমন এবং ‘আপসহীন’ নেতৃত্ব, সামরিক এরশাদ সরকার বিরুদ্ধে টানা আট বছরের সংগ্রাম শেষে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার গল্পগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৯১-এর আগে রাজনৈতিক সংগ্রাম, আন্দোলন এবং ২০০৬ সাল পরবর্তী তত্ত¡াবধায়ক সরকারের মেয়াদে খালেদা জিয়ার জেলজীবন বইটির বড় অংশজুড়ে রয়েছে। সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ এর আগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবনীগ্রন্থ রচনা করেছেন। ওই বইটির নাম ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া অব বাংলাদেশ: আ পলিটিক্যাল বায়োগ্রাফি’।
মাহফুজ উল্লাহ বলেন, খালেদা জিয়া জনমানুষের রাজনীতিবিদ বলেই এই বইয়ের নামকরণ করা হয়েছে হার লাইফ, হার স্টোরি। খালেদা জিয়া যে বয়সে বিধবা হয়েছেন, এর পর বাকি জীবন আজ পর্যন্ত দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিবেদন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে বাতিঘর হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন। বেগম জিয়া হচ্ছেন বাংলাদেশের রাজনীতির একজন বংশীবাদক। বইটি পড়লে পাঠকরা বুঝবেন এই বইটি হচ্ছে মোহিনী নেতৃত্ব এবং গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের একমন্যতা। অনুষ্ঠানে ডেইলি নিউজ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবির বলেন, খালেদা জিয়া যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসেন, তখন তার পাশাপাশি একটি প্যারালাল সরকার গড়ে উঠেছিল, সেই ব্যাপারে আসলে তার (খালেদা জিয়া) মনোভঙ্গি কী ছিল? এই বইয়ে তার উত্তর নাই, যা আমাদের জানা দরকার। সেসব কারণে আজকে দল ও তাকে যেসব বেদনাদায়ক পরিস্থিাতিতে যেতে হয়েছে, সেখানে কি তার দায় আছে? নাকি সঠিক ছিল, যা আমরা ভুল হিসেবে দেখছি। এর একটা আলোচনা বইটিতে থাকা উচিত ছিল।’
নূরুল কবির বলেন, খালেদা জিয়ার দুটো প্রশংসার দাবি দেখি। উনাকে ভারত অপছন্দ করেন। তারপরও তার দলের বহু লোক গোপনে ও প্রকাশ্যে ভারতের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কোনও একটা মীমাংসার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি মনে করি, সেটা জাতীয়তাবাদী শক্তির ভুল রাজনীতি। প্রশ্ন হচ্ছে, এতকিছুর পরও ওই ভদ্রমহিলাকে ভারত যে বিশ্বাস করে না, এটাই খালেদা জিয়ার শক্তি। তার দেশপ্রেমিকের পরিচয়।’ দ্বিতীয় প্রশ্নটা হচ্ছে, খালেদা জিয়া বাহুবলে রাজা নন, আমি এটা বিশ্বাস করি না। বাহুবলে রাজা হয়েছিলেন এরশাদ। আমার ধারণা, খালেদা জিয়া জনপ্রিয়তায় বলীয়ান। তিনি তার যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘সহানুভূতি দিয়ে বেগম জিয়ার উত্থান, তবে রাজনীতিতে অধিকার প্রতিষ্ঠায় এরশাদবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ‘আনপ্যারালাল’ ভাবমূর্তি গড়ে তুলে ছিলেন, যা শত প্রতিকূল পরিস্থিাতিতেও এখনও তিনি ধরে রেখেছেন। শুধু তা-ই নয়, খালেদা জিয়া একমাত্র নেত্রী, যিনি দেশবিরোধী কোনও কাজে কখনও আপস করেননি। সবর্দাই দেশের প্রয়োজনে, জনগণের প্রয়োজনে নিজেকে আত্মনিয়োজিত করেছেন। এখনও অব্যাহত রেখেছেন।’
ড. আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের মত দেশে বায়োগ্রাফি লেখা কষ্টসাধ্য। তারপরও তিনি (মাহফুজ উল্লাহ) যে ঝুঁকি নিয়েছেন, সেজন্য শুধু বিএনপি নয়, নিরপেক্ষ সবাইকে তার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে হবে, শ্রদ্ধা করা উচিত। তিনি আরও বলেন, আজ যারা কথায় কথায় গ্রেনেড হামলার কথা বলেন, তাদেরসহ সবাইকে ভুলে গেলে চলবে না যে বাংলাদেশে প্রথম খালেদা জিয়ার জনসভায় গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রফেসর লায়লা এন ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ার হাশিম, অবসরপ্রাপ্ত জজ ও কলামিস্ট ইকতেদার আহমেদ প্রমূখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিাত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, প্রফেসর মাহবুবউল্লাহ, বিএনপি নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সৈয়দ কামালউদ্দিন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, প্রফেসর আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, তাবিথ আউয়াল, শামা ওবায়েদ, জেবা খান প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ