পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সরকার সংবিধানের কথা বললে আমার হাসি পায়। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকাই অসাংবিধানিক। দিনে-রাতে নিজেরা সংবিধান লঙ্ঘন করছে। আর আমাদের সংবিধান দেখাচ্ছে। সংবিধানের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র। কিন্তু এই পাঁচ বছরে কি আমরা সে গণতন্ত্র দেখতে পেয়েছি? নির্বাচন দেবে বলে তারা ভাওতাবাজি করেছে। ভাওতাবাজিতে পুরস্কার পদ্ধতি থাকলে তারা মেডেল পাওয়ার যোগ্য হতো। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠ নির্বাচন চাই। আমি সবাইকে বলব, নির্বাচন আমরা বয়কট করব না। একবার করে আমাদের খেসারত দিতে হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সরকার যত ১০ নম্বরিই করুক, আমরা নির্বাচনে থাকব। সবাই মিলে হাজারে হাজারে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে। প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে জনগণকে বোঝাতে হবে। গতকাল শনিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ‘জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট’ আয়োজিত আইনজীবীদের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহাসমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে সারাদেশের ৫৪টি জেলার আইনজীবী সমিতির নেতারা অংশ নেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, এটা খুবই ন্যায়সঙ্গত। দেশের একটি বিরোধীদলের প্রধান তিনি। যেহেতু একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এতদিন পরে হতে যাচ্ছে তাতে একটা দলের নেত্রী, সরকারের প্রধান তিনি থাকবেন আর আরেক দলের নেত্রীকে সেই সেন্ট্রাল জেলে রেখে অপমান করা হবে এটা একদমই মেনে নেয়া যায় না। উনাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা দরকার। যাতে উনি তার নেতাদের নিয়ে দেশের মানুষের কাছে গিয়ে নির্বাচনে ভোট চাইতে পারেন।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, সবার মতামত উপেক্ষা করে কোটি কোটি টাকা ব্যবহার করে কেন ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। এই সরকারের বড় ঘাটতি হলো দেশ ১৬ কোটি মানুষের কিন্তু এরা পাচঁজন মিলে যা মনে করেন তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। জাতীয় নীতির তোয়াক্কা না করে তারা এসব করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এস কে সিনহার বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, সাতজন বিচারপতি মিলে একটা রায় দিলেন কিন্তু কথা শুনতে হলো সিনহা সাহেবকে। এতো লজ্জা আমি জীবনে পাইনি, যেদিন দেখলাম কোনো একজন মন্ত্রী যখন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বলেছিলেন, তোকে কে নিয়োগ দিয়েছিল? একজন প্রধান বিচারপতিকে কেউ এভাবে বলতে পারে না। সে যে-ই হোক। যে এসব কথা বলেছে তার আদালত অবমাননা এখনো হতে পারে বলে আমি মনে করি। এই ঔদ্ধত্য দেখানোর ফল ভোগ করতেই হবে বলে মনে করেন তিনি। আজকে হোক, কালকে হোক- কেউ পার পাবে না। ক্ষমতায় থাকলে যে কেউ, যা খুশি করে পার পাবে না- এটাই বাংলাদেশ।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি গত পাঁচ বছর দেশ যেভাবে শাসিত হয়েছে এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে আমি জানি না। ২০১৪ তে একটা নির্বাচন হয়েছিল। পরে বিষয়টা যখন কোর্টে আসলো অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আমাকে ডেকেছিল। কোর্ট জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন। আমি বললাম যে, মূল্যায়ন করলে তো দুই মিনিটেই বলা যায় যে এটা কোনো নির্বাচনই ছিল না। আরেকটা নির্বাচন করতে হবে। সরকার তো বলছে, দ্রুত আরেকটা নির্বাচন করবে। সরকারের পক্ষের লোকই সেখানে বলেছে, তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য একটা সরকার করে নেয়া হয়েছে, সকলের সঙ্গে আলোচনা করছি যেন দ্রুত একটা নির্বাচন করা যায়। ওই কথায় তিনিও আশ্বস্ত হয়েছিলেন জানিয়ে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, তখন আমি কোর্টকে বললাম, আমার কিছু বলতে হবে না, তারা তো নিজেরাই বলছে যে, একটি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য করেছে, তারাও এটাকে ডিফাইন করতে পারছে না, বলছে দ্রুত আরেকটা নির্বাচন দেবে।
এই দ্রুত মানে কি পাঁচ বছর?-প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সরকার এত হালকা হয়ে গেছে যে, তারা এ রকম কথা বলে যে, তার অর্থও তারা বোঝে না। দ্রুত মানে কি পাঁচ বছর? আমি জানতে চাই। যারা আজ সরকারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তারা দেখেন ২০১৪ তে দাঁড়িয়ে আপনারা কী বলেছিলেন। যদি কথাগুলো মনে না থাকে তাহলে কোর্টের অর্ডার বের করে দেখেন। ১৬ কোটি মানুষের দেশ। এই দেশে সরকার যদি কোনো কথা বলে তবে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হয়। ষোলো কোটি মানুষকে যা-তা বলে পাঁচ বছর এ ধরনের শাসন বজায় রেখেছে।
কামাল বলেন, সংবিধানের মৌলিক কথা হচ্ছে, জনগণ ক্ষমতার মালিক। কিন্তু জনগণ যদি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে তাদের ক্ষমতা না প্রয়োগ করাতে পারে তাহলে স্বাধীনতার উপরে আঘাত দেয়া হয়। দেশ স্বাধীন থাকে না। এই দেশটাকে পরাধীন দেশ বানাতে দিতে পারি না। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীনতার অর্থ হলো জনগণ এই ক্ষমতার মালিক। কিন্তু এই পাঁচ বছরে মূলত এই দেশকে যেভাবে শাসন করা হয়েছে, তা জনগণের সাথে ভাওতাবাজি ছাড়া কিছু না।
মন্ত্রী-এমপিদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, মন্ত্রী যে বলা হচ্ছে, এরা কারা? উপদেষ্টা, এরা কারা? তারপর যাদেরকে মেম্বার বলা হচ্ছে তারা কারা? আলহামদুলিল্লাহ, অবৈধ ১৫৪ জন মনোনীত। তারা বলে এমপি। এই এমপি মানে মনোনীত প্রার্থী। এমপি যে মেম্বার অব পার্লামেন্ট- এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না। আমি বলি কিছু না, একটু লজ্জাবোধ ফিরে আসুক আমাদের যারা এগুলো করেন লজ্জাহীনভাবে। কে আপনাকে নির্বাচিত করেছে? এটার জন্য নতুন কোনো শব্দ বের করতে হবে। বলতে হবে জিপি, ঘোষিত প্রতিনিধি। এখন থেকে আমাদের এমপি না লিখে জিপি লেখা শুরু করতে হবে। ঘোষণার কত জোর? ঘোষণা করে দিল এমপি হয়ে গেল? ঘোষণা করে দিলাম মন্ত্রী হয়ে গেল? এই ঘোষণার শক্তিটা কোথা থেকে আসে, সংবিধনের কোথায় লেখা আছে?
কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচন ছাড়াই ১৫৪ জনকে সংসদ সদস্য করা হয়েছে। এ নিয়ে আবার গেজেট প্রকাশ করাও হয়েছে। আমি মনে করি এই গেজেট করে তারা প্রেসের কাগজ নষ্ট করেছে। কামাল হোসেন বলেন, ওখানে আমারও কিছু বন্ধু-বান্ধব আছে। তোমরা মন্ত্রী, এমপি হয়ে কি হয়ে গেছ? তোমাদের কি লজ্জাবোধ বলে কিছু নেই। আদম সন্তান হলে তো লজ্জাবোধ থাকবে। তোমরা কি মানুষ না কি অন্য কিছু হয়ে গেছ। তোমরা কিসের চাকরি নিয়েছ? মানুষের সঙ্গে ভাওতাবাজী করার চাকরি? একটু লজ্জাবোধ ফিরে আসুক এ দোয়া করি।
সংবিধানের মৌলিক কথা হচ্ছে, জনগণ ক্ষমতার মালিক। কিন্তু জনগণ যদি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে তাদের ক্ষমতা না প্রয়োগ করাতে পারে তাহলে স্বাধীনতার ওপরে আঘাত দেয়া হয়। দেশ স্বাধীন থাকে না। এই দেশটাকে পরাধীন দেশ বানাতে দিতে পারি না। শহীদের রক্তের সাথে আমরা বেঈমানি করতে পারি না। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সরকার সংবিধানের কথা বললে আমার হাসি পায়। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকাই অসাংবিধানিক। দিনে-রাতে নিজেরা সংবিধান লঙ্ঘন করছে। আর আমাদের সংবিধান দেখাচ্ছে। সংবিধানের প্রথম লাইনে সংবিধান লেখা আছে। এরপরে আর কোনো লাইন তারা যে পড়ে আমার তা মনে হয় না। পড়লে এভাবে সংবিধান সংবিধান সংবিধান করতো না। পড়লে দেখবে যে, তোমরা একেকটা বিধান লঙ্ঘন করছো।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ৪৭ বছর পর স্বাধীনতার সে মূল চেতনা আর নেই। এই সময়ের মধ্যে বিচার বিভাগ, জনগণ, মানুষের স্বাধীনতা হারিয়েছে। নির্বাচনে আছি, থাকব। সুষ্ঠু ভোট হলে ব্যাপক ব্যবধানে আওয়ামী লীগ হারবে। এবার লড়াই করেই ভোট দিতে হবে। যত ষড়যন্ত্রই হোক আমরা ভোটে আছি এবং শেষদিন পর্যন্ত থাকবো।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও মাহবুবব উদ্দিন খোকন ও সানাউল্লাহ মিয়ার পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখনে সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, মীর নাসির উদ্দিন, এম এ রকীব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোহাম্মদ শাহজাহান, তৈমুর আলম খন্দকার, মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, বোরহানউদ্দিন, বদরুদ্দোজা বাদল, গরীবে নেয়াজ, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ মিয়া, মহসিন মিয়া, গোলাম মোস্তফা খান, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, শফিউদ্দিন ভুঁইয়া, মনসুর রহমান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, কেএম জসিম, শাহ আহমেদ বাদল, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট শফি উদ্দিন ভূইয়া, অ্যাডভোকেট কে এম জাবের, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া, অ্যাডভোকেট ড. মেহেদী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা এসো ঐক্য, এসো ঐক্য, দেশমাতার ডাকে ঐক্য গান গেয়ে শোনান কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন। সকাল সাড়ে ১০ টায় এই সমাবেশ শুরু হয়ে চলে ৩ টা পর্যন্ত চলে এই সমাবেশ।
সমাবেশ শেষে উপস্থিত বক্তাদের আলোচনা থেকে গৃহীত ১১টি সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। সিদ্ধান্তগুলো হলো, ১. বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ২. খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সকল ফরমায়েশি সাজা বাতিল ৩. বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা মামলা সহ সকল রাজনৈতিক সাজা বাতিল ৪. জামিনযোগ্য অপরাধে আগত বিচারপ্রার্থীরা বিচার থেকে বঞ্চিত ৫. মাসদার হোসেন মামলার আলোকে গেজেট সংশোধন ৬. প্রভাবমুক্ত থেকে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান ৭. দেশের আইনজীবী ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী, ভুয়া এবং রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার ৮. দেশের আইনজীবী ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি ৯. বাকস্বাধীনতা হরণকারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সহ সকল কালো আইন বাতিল ১০. একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম এর ব্যবহার স্থগিত, সংবাদকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে সংবাদ পরিবেশনে বিধি নিষেধ আরোপ বাতিল এবং বিচারিক ক্ষমতা সহ সেনাবাহিনী মোতায়ন এবং ১১. মানবাধিকার সাংবিধানিক অধিকার’ রক্ষা করতে হবে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।