বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
প্রত্যেক মুসলমানকেই এ কথা বুঝতে হবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে আমরা যখন চেহারা ও পোশাক সজ্জিত করি, তখন পৃথিবী আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সমস্ত চারিত্রিক গুণাবলিও পাবে বলে বিশ্বাস করে।
যদি আমরা সে বিশ্বাস রক্ষা করতে পারি তা হলে পৃথিবীর কাছে খোদ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রেম ও সম্মান উঁচু হয়ে যাবে। আর আমরা যদি সে বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করতে না পারি তা হলে আমরা উম্মত হয়ে খোদ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অমর্যাদা করে থাকি। বিশেষ করে লেনদেন মানব জীবনের ও জগৎসংসার পরিচালনার সবচেয়ে বাস্তব চর্চার বিষয়। এর সঙ্গে মানুষের বিশ্বাস-অবিশ্বাস, আশা-নিরাশা ও অভিজ্ঞতা জড়িত। এ ক্ষেত্রে মহানবী রাসূলুল্লাহ (সা.) সততা ও স্বচ্ছতার যে মহান সুন্নত আমাদের দিয়ে গেছেন, তাকে বহুলাংশেই ত্যাগ করে আমরা কিছুতেই প্রকৃত সুন্নতওয়ালা হওয়ার দাবি করতে পারি না।
আমরা অনেক চতুরতার মাধ্যমে প্রচলিত আইন ও বিচার-ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বা ভুল বুঝিয়ে নিজের পক্ষে বিচারের ফায়সালা আদায় করে ভেবে থাকি, সব দফা-রফা হয়ে গেল বা ঋণ, হক আদায় থেকে মুক্তি পেয়ে গেলাম। কিন্তু দুনিয়ার বিচারে কপটতা চললেও আখেরাতে এর চরম শোধ দিতেই হবে। এ ক্ষেত্রে বেঁচে যাওয়ার কোনোই পথ নেই। এই মর্মে নিম্নোক্ত হাদিসটিতে সুস্পষ্ট বক্তব্য এসেছে-
হজরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত। প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তো একজন মানুষ বৈ কিছু নই। তোমরা ঝগড়া-বিবাদ, লেনদেন সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসো। তোমাদের পরস্পর একজন অন্যজনের চেয়ে দলিল-প্রমাণ উত্থাপনে বেশি বুদ্ধিমান ও চালাক-চতুর। হতে পারে বাহ্যিকভাবে এসব দেখে একজনের পক্ষে ফায়সালা দিলাম। যদি এমন হয় যে, আমি কোনো মুসলমানের হক তাকে দিয়ে দিয়েছি, তা হলে (মনে রেখো) তা হলো আগুনের টুকরা। সে তা গ্রহণ করুক বা ছেড়ে দিক।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
এ হাদিসটি আনার পর আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, দেনা-পাওনা ও হক পরিশোধের বিষয়টি বাহ্যিক ভুল বিচারে শেষ হয়ে যায় না। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ফায়সালাও যদি এ ক্ষেত্রে কোনো কারণে ভুল হয়ে যায়, তবে তা আখেরাতে জাহান্নামের বিনিময়ে সমাধান করা হবে এবং বিভ্রান্তকারী ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করবে। তা হলে দুনিয়ার সাধারণ বিচার ও বিচারককে ফাঁকি দিলে কতটুকুই বা আর লাভ!
হজরত আবু কাতাদাহ হারেস ইবনে রাবঈ (রা.) থেকে বর্ণিত। হুজুরে আকরাম (সা.) সাহাবিদের মাঝে খুতবা দিতে দাঁড়ালেন। নবীজী (সা.) আলোচনায় বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান স্থাপন করা, আমল দুটি সর্বোত্তম।
এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর নবী, আমি যদি আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যাই, তবে কি সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবো?
নবীজী (সা.) বললেন, হ্যাঁ, যদি তুমি এভাবে শহীদ হও যে, তুমি ধৈর্যধারণকারী ছিলে, সাওয়াবের আশায় জিহাদ করেছিলে, সামনে এগুচ্ছিলে, পেছনে পালাচ্ছিলে না, তা হলে তোমার...।
পরক্ষণেই নবীজী (সা.) লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কী প্রশ্ন করেছিলে?
লোকটি বলল, আপনি কী বলেন যদি আমি আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যাই, তবে কি আমার সব গোনাহ দূর হয়ে যাবে?
নবীজী (সা.) এবার জবাব দিলেন, হ্যাঁ, যদি তুমি এমতাবস্থায় শহীদ হও যে, তুমি ধৈর্যধারণকারী ছিলে, সাওয়াবের আশায় জিহাদকারী ছিলে, অগ্রগামী ছিলে, পিছু হটছিলে না তা হলে তুমি সব গোনাহ থেকে নিষ্কৃতি পাবে কিন্তু ঋণ-কর্জ থেকে মুক্তি পাবে না। তার কারণ, এমনটিই জিবরাইল (আ.) আমাকে জানিয়ে গেছেন।(সহিহ মুসলিম)
সুবহানাল্লাহ! যে ঋণ ও হক আদায়ের ব্যর্থতার দায় থেকে আল্লাহর পথের শহীদেরও মুক্তি নেই, আল্লাহ সেই ঋণ ও হক আদায়ের কাজটিকে প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হিসেবে পালন করার তাওফিক আমাদের সবাইকে দান করুন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এ জীবনময় সুন্নতটি যেন কিছুতেই আর মেঘে ঢাকা পড়ে না থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।