Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমরা সাচ্চা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই : ড. কামাল হোসেন

নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের সহায়তা চাইল ঐক্যফ্রন্ট

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে গণমাধ্যমের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনময়কালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা একদিনের গণতন্ত্র নয়, সাচ্চা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। এই সুষ্ঠু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারের যে সকল বিষয় আমরা চিহ্নিত করেছি সংবাদপত্র তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। বৈঠকে নির্বাচন কিভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে সে ব্যাপারে সম্পাদকদের মতামত জানতে চেয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। বৈঠক শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা সম্পাদকদের কাছে সব ধরনের সহযোগিতা চেয়েছি ।
গতকাল রাজধানীর গুলশানে হোটেল লোকশোরে জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় শেষে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের মখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।
ড. কামাল হোসেন বলেন, দুই ঘন্টা সম্পাদকদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি। সম্পাদকরা বিভিন্ন ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন, আমাদেরও দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন, আমাদের কাছ থেকে তারা কী আশা করেন যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হয়। এই মতবিনিময় আমাদের জন্য খুবই মূল্যবান মনে করি। একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সম্পাদকেরা বিভিন্ন ব্যাপারে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। তারা বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের যেমন কর্তব্য আছে তেমনি আমরা যারা নির্বাচন করতে যাচ্ছি, সে সব দলেরও কর্তব্য আছে পরিবেশ রক্ষা করার। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয় সে ক্ষেত্রে আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। সেই সাথে গণমাধ্যমেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা শুধুমাত্র ভোটের দিনের জন্য অর্থাৎ একদিনের গণতন্ত্র চাই না। আমরা একটা সাচ্চা গণতন্ত্র চাই। এটার জন্য অবশ্যই সময় প্রয়োজন।
সম্পাদকদের কাছে আপনারা কি ধরনের সহযোগিতা চেয়েছেন? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অবাধ সুুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যে যা যা প্রয়োজন সব রকমের সহযোগিতা আমরা চেয়েছি। সম্পাদকগণ আমাদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, সম্পাদকদের সাথে আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য ছিলো অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে কী কী জিনিস তারা অতীতে দেখেছেন। তারা মনে করেন এবার সেগুলো থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হয় এবং সক্রিয়ভাবে সবাইকে চেষ্টা করতে হয় যে,জনগন সত্যিকার অর্থে নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকারের যেমন কর্তৃব্য আছে, আমরা যারা বিরোধী দল নির্বাচন করতে যাচ্ছি তাদেরও কর্তব্য আছে যে নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা করা যাতে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়।
মতবিনিময় সভা শেষও হওয়ার আগেই বেরিয়ে এসে আমাদের নতুন সময় এর সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি সা¤প্রতিক সময়ে ঐক্যফ্রন্টের জনসভাগুলোতে কোরআন তেলোয়াত, বাইবেল, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু ,বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো তাদের ঐক্যবদ্ধ চিন্তার ফল কিনা?এ বিষয়গুলো নিয়ে তাদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নির্বাচনের আগে আমাদের সামনে তুলে ধরবেন কিনা। আমি জানতে চেয়েছি নির্বাচনের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীর যে উৎসব তারা জয়ী বা পরাজিত হলে কিভাবে পালন করবেন। এসব প্রশ্নের নোট তারা নিয়েছেন, পরে উত্তর দেবেন। এ ছাড়া বিডি নিউজের তৌফিক ইমরোজ খালেদী জানতে চান ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হলে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? এ প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্লামেন্ট সদস্যের মতামতের ভিত্তি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী সাংবাদিকদের বলেন, আমি মতবিনিময় সভায় একটি প্রশ্ন করেছি যে, ফ্রন্ট যদি জয়লাভ করে তাহলে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। সেই প্রশ্নের উত্তর আমি পাইনি। আমার মনে হয় এই ফ্রন্টকে, সবাইকে যারা নির্বাচন করছে তাদের বলতে হবে যে, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে তারা যদি বিজয়ী হন কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে, সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে। যেমন আমরা বৃটিশ পার্লামেন্টারি সিষ্টেম অনুসরন করার চেষ্টা করি, ভারতে হোক, বৃটেনের হোক বা অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে সবাই কিন্তু আগে থেকে জেনে যান যে, এই দল বা এই জোট বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী কে হবে। যদিও এটার আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। তারপরও সেই বিষয়টা কিন্তু এই ফ্রন্টকে পরিস্কার করতে হবে। সেটা তারা এখনো পরিস্কার করেননি।
বৈঠক শেষে সাপ্তাহিকের সম্পাদক গোলাম মর্তুজা সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যমের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন। তারা বলেছেন বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। তাদের নেতাকর্মীদের এখনো ধর পাকড় করা হচ্ছে। মামলা দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্তরায়। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সম্পাদকরা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে এ বিষয়টি বার বার লিখিত ভাবে তুলে ধরতে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট তাদের সঙ্গে দেখা করেও বার বার এ সব বিষয় তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। সম্পাদকরা বলেছেন, নির্বাচনে থেকেই তারা যেন এসব প্রতিবন্ধকতা প্রতিকারের সর্বাত্মক চেষ্ট করেন। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। গণমাধ্যম এখনো এবং সব সময়ই নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। গণমাধ্যমের কাজই হচ্ছে প্রকৃত সত্য তুলে ধরা।
গুলশানের হোটেল লেকশোরে বিকাল ৩ টায় বৈঠক শুরু হয়ে দুই ঘন্টারও বেশি সময় চলে। বৈঠকের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্পাদকদের স্বাগত জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন সূচনা বক্তব্য রাখেন।
সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রথম আলোর মতিউর রহমান, নিউজ টুডের রিয়াজউদ্দিন আহমদ, মানব জমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, আমাদের নতুন সময়ের নাইমুল ইসলাম খান, নিউ এজের নূরূল কবীর, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মুন্সী আবদুল মান্নান, বিডি নিউজের তৌফিক ইমরোজ খালেদী, নিউজ টু ডের মোসলেম উদ্দিন, ভয়েজ অব আমেরিকার আমীর খসসরু, যুগান্তরের চীফ রিপোর্টার মাসুদ করিম প্রমুখ।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন, দিনকালের রেজোয়ান সিদ্দিকী, ঢাকা ট্রিবিউনের জাফর সোবহান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের আবু তাহের, বাংলাদেশের খবর এর সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন, ডেইলি স্টারের সাখাওয়াত হোসেন লিটন, সমকালের চীফ রিপোর্টার লোটন একরাম, রয়টার্সের সিরাজুল ইসলাম কাদির, এএফপির শফিকুল আলম প্রমুখ।
বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বক্তব্য শুনছেন। ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সবার বক্তব্য নোট করেছেন। তিনি তার সমাপনী বক্তব্যে বলেছেন সম্পাদকদের এই পরামর্শ তাদের চলার পথকে সুগম করবে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আ স ম আবদুর রব, মোস্তফা মহসিন মন্টু, এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, ডা. জাফরুল্লাহসহ ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর এই প্রথম গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সাথে বসলেন ড. কামাল হোসেন। এই ফ্রন্টে বিএনপি, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এই ৬টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর কুটনীতিকদের সাথেও মতবিনিময় করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আগামী দু’একদিনের মধ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মতবিনিময়ের কথা রয়েছে।



 

Show all comments
  • Zain Imam ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১২ এএম says : 0
    এগিয়ে যান।গনতন্রেরর জয় হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Zain Imam ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৩ এএম says : 0
    জনগনের মতামতের মূল্য প্রতিষঠা করার জন্যই ৭১ এ যুদ্ব হয়েছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • Monir ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৪ এএম says : 0
    Go ahead, we are with you.
    Total Reply(0) Reply
  • Ameen Munshi ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৫ এএম says : 0
    ধন্যবাদ স্যার। জাতি আপনাদের দিকে চেয়ে আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Alam Khan ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশে সত্যিকারের গণতন্ত্রের চরম সঙ্কট চলছে। আপনাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Ullah ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৬ এএম says : 0
    এবারের সংগ্রাম গণতন্ত্র উদ্ধারের সংগ্রাম।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী রফিক ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৭ এএম says : 0
    আল্লাহ আপনার লক্ষ্য পুরণ করুন, দেশকে সৈরচার মুক্ত করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • রফিকুল্লাহ ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৮ এএম says : 0
    দেশে আপনি গণতন্ত্রের সংকট দেখলেন কোথায়? বিজ্ঞ মানুষ হয়ে কী বলেন..
    Total Reply(0) Reply
  • mahabbul arefeen ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৪১ এএম says : 0
    Onek shokto shokto prosno korechey editorra. Valo legechy karon onek deen por upovog korlam songbad shommelon. Erai jokhon Shekh hasinar shommelonney jai onader kach thekey tokhon kono prosno noy shudhu prosongsha shuni. Ja "Hirok Rajar Deshey" cinemar kotha monay koriey dey.
    Total Reply(0) Reply
  • Engr Amirul Islam ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:২৫ এএম says : 0
    May Allah bless you to be successful to make this country free from pro India government
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ