বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক ধরনের লিটমাস স্ট্রিপ উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে একজন ক্রেতা নিজেই খাদ্যে ফরমালিন আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে নিতে পারবেন৷
উন্নয়নশীল দেশের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ৷ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার এ দেশে খাদ্য নিরাপত্তা একটি বড় ইস্যু৷ বেশি লাভের আশায় বিক্রেতারাখাদ্যে ভেজাল মেশাতেও পিছপাহন না৷ বাজারে যেসব খাবার, সবজি ও মৌসুমী ফল পাওয়া যায়, তার প্রায় সবগুলোতেই মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে৷ অনেকে আবার ফরমালিন মিশ্রিত বরফ বা পানি দিয়ে মাছ সংরক্ষণ করেন, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ সাধারণ ক্রেতা হিসেবে গোলাম মোর্তুজা বলেন, ‘‘আমরা তো বাজার থেকে মালামাল কিনে ব্যবহার করি৷ কিন্তু কোন মাল বাজারে কীভাবে আসে, সেটা তো আমরা জানি না৷ তাই আমরা না জেনেই ভেজাল খেয়ে ফেলছি৷''
আশার কথা হলো, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষকরা তিন বছরের প্রচেষ্টায় এক ধরনের লিটমাস স্ট্রিপ উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে একজন ক্রেতা নিজেই খাদ্যে ফরমালিন আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে নিতে পারবেন৷ বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক ড. মহিদুস সামাদ বলেন, ‘‘আমি যখন বাংলাদেশে প্রথম আসলাম, তখন দেখলাম এখানে খাবারে অনেক ভেজাল৷ তখন চিন্তা করলাম, বাইরে থেকে আমি যে শিক্ষা নিয়েছি, সেখান থেকে আমি কোনো কিট তৈরি করতে পারি কিনা, যেটা ফরমালিন শনাক্ত করতে পারে৷ আমার এখনো মনে আছে, আমি যখন এখানে ২০১৩-এ ফিরে আসলাম, তখন আমায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমি কী করবো৷ আমি বলেছিলাম, একটা পেপার বেসড কিট বের করতে চাই, যেটা ফরমালিন শনাক্ত করতে পারে এবং যা খাদ্য নিরাপত্তায় সাহায্য করবে৷ ''
যে খাবারে ফরমালিনের উপস্থিতি যত বেশি থাকবে, লিটমাস পেপারটি তত বেশি গাঢ় বেগুনি রং ধারণ করবে৷ এতে করে সহজেই খাদ্যে বিষের আধিক্য শনাক্ত করা যাবে৷ বুয়েটের গবেষক সাকিব ফেরদৌস বলেন, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ খুঁজে বের করা, যা ফরমালিনের সাথে বিক্রিয়া করবে৷ বিক্রিয়ার ফলে সেটা এমন একটা রং ধারণ করবে, যা স্বচ্ছ পানিতে আমরা আলাদা করতে পারবো৷''
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মহিদুস সামাদের তত্ত্বাবধানে চলে এ গবেষণা কার্যক্রম৷ মোট ৫৫টি খাবারের উপর গবেষণার ফলাফল ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন তাঁরা৷ বুয়েটের প্রভাষক মো. নাজীবুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল দুটি৷ এর মধ্যে এক, সহজ হতে হবে এবং দুই, স্বল্পমূল্যের হতে হবে৷ এর জন্য আমরা যে মাধ্যমটা বেছে নিয়েছি, সেটা হলো পেপার৷ পেপার ব্যবহারের ফলে আমাদের খরচ কমে যাচ্ছে৷ আমরা হিসেব করে দেখেছি যে, এটা অল্প খরচে তৈরি করা যাবে, যা একজন বাংলাদেশি নাগরিক খুব সহজে কিনে ব্যবহার করতে পারবেন৷''