Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্মৃতিময় রবিউল আউয়াল

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

রবিউল আউয়াল একটি যৌগিক শব্দ। ‘রবি’ আর ‘আউয়াল’ মিলে রবিউল আউয়াল। শব্দ দুটি আরবী। ‘রবি’ শব্দের অর্থ হলো বসন্ত, আর আউয়াল শব্দের অর্থ প্রথম। তাহলে রবিউল আউয়াল শব্দের অর্থ দাঁড়ায় প্রথম বসন্ত। রবিউল আউয়াল এবং রবিউস সানী। প্রথম ও দ্বিতীয় বসন্ত। আরবে এ দু’মাস ব্যাপি বসন্তকাল চলত। এ জন্য এর প্রথম মাসকে ‘প্রথম বসন্ত’ বা রবিউল আউয়াল হিসাবে নামকরণ করা হয়। জাহেলী যুগে এ মাসকে ‘খাওয়ান’ বলা হত।
স্মৃতিময় রবিউল আউয়াল মাসেই রাসূল (সা.) ধরার বুকে আগমন করেন এবং এ মাসেই তিনি ধরা থেকে প্রস্থান করেন। জীবনের শুরু ও শেষ তথা মিলাদ ও ওফাত এ মাসেই সংঘটিত হয়। এছাড়াও নবী জীবনের পট পরিবর্তনকারী ‘হিজরত’ এ মাসেই সংঘটিত হয়েছে, যার মাধ্যমে ইসলামের বিজয় নিশান পত পত করে উড়েছে বিশ্বব্যাপী। নবী করিম (সা.) ছিলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট শেষ নবী হিসাবে নির্ধারিত ছিলাম, যখন আদম আ. মৃত্তিকার মাঝে বিদ্যমান ছিলেন।’ অন্য এক হাদীসে এসেছে, ‘সৃষ্টিগতভাবে আমি প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে আমি শেষ।’
বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন সাধারণ কোনো বিষয় নয়। তার আগমনের পূর্বে নবীগণের নিকট থেকে আল্লাহ তায়ালা তার আনুগত্যের ব্যাপারে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন এবং স্বয়ং নিজেই এ অঙ্গীকারের ব্যাপারে সাক্ষী হয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা যখন নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি কিতাব ও হিকমাহ থেকে যা তোমাদেরকে দান করেছি, অতঃপর তোমাদের কাছে তোমাদের নিকট বিদ্যামান বিষয়াবলীর সত্যায়নকারী হিসাবে যে রাসূল আগমন করবেন, তখন তোমরা সে রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে সহযোগিতা করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি অঙ্গীকার গ্রহণ করেছ? এবং এই শর্তে আমার অঙ্গীকার গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বলল, আমরা অঙ্গীকার গ্রহণ করেছি। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। (সূরা আল ইমরান: আয়াত ৮১)। এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালা রাসুল সা. কে পৃথিবীতে প্রেরণের পূর্বেই প্রস্তুতিমূলক অনেক বিষয় সম্পাদন করেন। যেমন: তার আগমনের সাথে সাথেই তাঁর প্রতি ঈমান ও সহযোগিতার ব্যাপারে নবীগণ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন এবং সে অঙ্গীকার গ্রহণের ব্যাপারে নবীগণ ও নিজেকে সাক্ষী হিসাবে রেখেছেন। স্মর্তব্য যে, নবীগণ কখনই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। তবুও তাদের নিকট থেকে কড়া অঙ্গীকারনামা গ্রহণ এবং তাদেরকে ও স্বয়ং আল্লাহ নিজেই সাক্ষী থাকা রাসূল (সা.)-এর আগমনের বিষয়টির সর্বাধিক গুরুত্ব ও বিশেষত্বের প্রতি প্রকাশ্য ইঙ্গিত বহন করে। অতএব বুঝা গেল, ধরার বুকে রাসূল (সা.) আগমন সাধারণ বিষয় নয়।
মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আ. কাবা ঘর নির্মাণ করে রাসূল (সা.) কে প্রেরণের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার কাছে কায়োমনোবাক্যে প্রার্থনা করেছেন। এ ব্যাপারে ইরশাদ হচ্ছে: ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের মাঝে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদের কাছে আপনার আয়াত পাঠ করবেন, তাদের কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন। নিশ্চয়ই আপনি মহাপরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা বাকারা: আয়াত নং ১২৯)। পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থে রাসূল আগমনের আগাম সুসংবাদ উল্লেখ ছিল এবং আম্বিয়ায়ে কেরামও তাদের উম্মতদের দিয়েছিলেন। যেমনটি ঈসা আ. প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে: ‘যখন মরিয়মের পুত্র ঈসা আ. বললেন, ‘হে বনী ইসরাঈল, আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তাওরাত কিতাবের ব্যাপারে সত্যায়নকারী এবং আমার পরবর্তীতে একজন রাসূলের ব্যাপারে সুসংবাদদতা। যার নাম হবে ‘আহমদ’। (সূরা সাফ, আয়াত নং ০৬)। এ বিষয়গুলোই হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে আমার প্রাথমিক বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দিব। আমি ইবরাহীম আ. দোয়ার ফল, ঈসা আ. সুসংবাদ এবং আমার মায়ের স্বপ্ন, যা তিনি আমাকে প্রসব করার সময় দেখেছেন যে তার থেকে একটি ‘নূর’ বের হল আর তা সিরিয়ার প্রাসাদগুলোকে আলোকিত করল।’ (মুসনাদে আহমাদ: হাদীস নং ১৬৫৩৮)।
উপরোক্ত বিষয়গুলো স্পষ্টতই আলোকপাত করেছে যে, রাসূল (সা.)-এর আগমনের বিভিন্ন প্রস্তুতি আদম আ. এর আগমনের পূর্ব থেকে চলে আসছে। সবশেষে আল্লাহ তায়ালা বহুল প্রত্যাশিত ও আকাক্সিক্ষত শেষ যামানার নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে আমুল ফীলের রবিউল আউয়াল মাসে ধরার বুকে প্রেরণ করেন। যা জগতবাসীর জন্য অশেষ রহমত ও অনুগ্রহের কারণ। রবিউল আউয়াল মাসের কত তারিখ রাসূল (সা.)-এর আগমন, এ নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক মত রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, তিনি ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার জন্মগ্রহণ করেছেন। মোটকথা, তিনি আমুল ফীলের রবিউল আউয়াল মাসের সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন। যা আদম আ. এর নবুয়ত প্রাপ্তির প্রায় ছয় হাজার একশত তের বছর পর। বিশ্বব্যাপী ১২ রবিউল আউয়াল ‘ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.)’ পালন করা হয়।



 

Show all comments
  • মোঃ আব্দুল কাদির ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৭ এএম says : 0
    ধরার বুকে এলেন পিয়ারা নবী ঈদে মিলাদুন্নবী আজ মিলাদুন্নবী
    Total Reply(1) Reply
    • সাইফ ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:৩৩ এএম says : 4
      বাহ বাহ খুব সুন্দর লিখেছেন।
  • Monir ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ২:২৮ এএম says : 0
    খুব ভালো লাগলো
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mosharraf ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ২:২৯ এএম says : 0
    সুন্দর লিখেছেন
    Total Reply(0) Reply
  • Ameen Munshi ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৩০ এএম says : 0
    রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ। আল কোরআন
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফ ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:৫৭ এএম says : 0
    জনাব ফজলুর রহমান সাহেব কে ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক ধন্যবাদ এবং আল্লাহ আপনাদের এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুন। সবাইকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ আল্লাহ তায়ালা এই পবিত্র বরকত ময় মাশের উসিলায় আমাদের সকলকে হিদায়েত প্রধান করুন এবং আমাদের ঈমানকে রক্ষা করুন, আমাদের দেশকে ও দেশের মানুষকে রক্ষা করুন সকল বিপদ আপদ থেকে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ অাত‌িকুল হক ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ৫:৫৭ পিএম says : 0
    সকল ঈদ‌ের স‌েরা য‌ে ঈদ! ঈদ‌ে ম‌িলাদুন্নবী(সাঃ)
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন