পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (৭৭৩-৮৫২ হি:) উপরোল্লিখিত সহীহ হাদীসের আলোকে ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.)-এর ওপর প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করতঃ এই দিনের শরয়ী অবস্থাকে সুস্পষ্টভাবে সাব্যস্ত করেছেন এবং এর দ্বারা মীলাদে মোস্তফা (সা.)-এর দিনটি উদযাপনের বৈধতার ওপর দলিল কায়েম করেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালীন (রহ.)-এর দলিল উদ্ধৃত করে ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি (৮৪৯-৯১১ খ্রি:) লিখেছেন যে, শায়খুল ইসলাম হাফেজুল আছর আবুল ফযল ইবনে হাজারের নিকট মিলাদ শরীফের আমল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি এর জবাব এভাবে দিয়েছেন, আমি মিলাদ শরীফ সম্পর্কে মূল দলিলের সন্ধান লাভ করেছি। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, হুজুর নবীয়ে আকরাম (সা.) মদীনায় তসরীফ আনয়ন কররেন। তিনি দেখলেন, ইহুদীরা আশুরার দিন রোজা রাখছে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কেন রোজা রাখছো? উত্তরে তারা বলল, এই দিন আল্লাহপাক ফেরাউনকে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছেন এবং হযরত মূসা (আ.)-কে মুক্তিদান করেছেন। এজন্য আমরা আল্লাহপাকের দরবারে শোকর আদায়ের লক্ষ্যে এই দিন রোজা পালন করছি। পূর্বোল্লিখিত হাদীস (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম) দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহপাকের দিক হতে কোন ইহসান, এনাম ও উপহার প্রদান করা অথবা কোনও মুসিবত দূরীভূত হয়ে যাওয়ার উপর কোনও নির্দিষ্ট দিনে আল্লাহপাকের শোকর আদায় করা এবং প্রতি বছর এই দিনের স্মরণকে তাজা রাখা, খুবই মোনাসেব বা উত্তম কাজ।
একথা সুবিদিত যে আল্লাহপাকের শোকর নামাজ, সেজদাহ, রোজা, সাদাকা এবং কোরআন তিলাওয়াত এবং অন্যান্য এবাদতের দ্বারা আদায় করা যায়। আর হুজুর নবীয়ে রহমত (সা.)-এর বেলাদত হতে বৃহত্তর আল্লাহপাকের নেয়ামত সমূহের মধ্যে আর কিছু হতে পারে কি? যেহেতু পারে না, সেহেতু সেদিন অবশ্যই শোকর আদায় করা অপরিহার্য। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালীন (৭৭৩-৮৫২ হি:) মীলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের বুনিয়াদ হিসেবে ঐ সকল হাদীসকে গ্রহণ করেছেন যা সহীহাইন কিতাবে ঐকমত্য সহকারে সংকলিত হয়েছে। এই সকল আহাদিসে হুযুর নবীয়ে আকরাম (সা.) হযরত মূসা (আ.) এবং তাঁর কওম বনী ইসরাঈলের প্রাপ্ত বড় নেয়ামত এবং বিজয়ের উপর শোকর গুজারী প্রকাশ করা এবং সেই দিনকে ঈদের ঈদের দিনের মত উদযাপন করার তাকিদও সতর্কতা প্রদশন করেছেন এবং এই আমলকে নিজেদের জন্য সুন্নাতের উপকরণ সাব্যস্ত করেছেন।
রাসূলে মুয়াজ্জাম হুযুর নবীয়ে আকরাম (সা.) যেই দিনে এই পৃথিবীতে আগমন করেছেন সেই দিন হতে বড় নেয়ামতের কোনও বস্তু হতে পারে কি? তবে এমন কি কারণ থাকতে পারে যে, ইয়াওমে মীলাদে মোস্তফা’ অর্থাৎ রাসূলুল্লাহর মীলাদের দিনকে আনন্দসহ ঈদের দিনের মত উদযাপন করা যাবে না? হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (৭৭৩-৮৫২ হি:)-এর প্রমাণ প্রতিষ্ঠার সমর্থন ও যথার্থতা ইমাম সুয়ূতি (৮৪৯-৯১১ হি:) আল হাভী লিল ফাতাওয়া (পৃষ্ঠা ২০৫, ২০৬)-এর মধ্যে উপস্থাপন করেছেন এবং পথনির্দেশ করেছেন যে, আশুরার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে হাফেজ আসকালানী যে প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, আশুরার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে হাফেজ আসকালানী যে প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন তা যদিও পূর্ববর্তীকালের হযরত মূসা (আ.)-এর কামিয়াবীর নির্দিষ্ট দিন আশুরা সম্পর্কে ছিল, কিন্তু সারা বছর শুধু সেই দিনের রোজার এই ফজিলত হাসিল হয়েছে যে, এই নেয়ামতের শোকর প্রতি বছর সেদিনে আদায় করা যাবে। এতে প্রমাণিত হয় যে, যদিও সেই ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি ঘটেনা, কিন্তু সে দিনের বরকতের পুনরাবৃত্তি অবশ্যই ঘটে। যার প্রমাণ রয়েছে এই যে, প্রত্যেক সোমবার দিন আবু লাহাবের উপর মীলাদুন্নবী (সা.)-এর বরকতে আজাব কম হওয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটে। মাহে রমজানুল মোবারকের রোজাসমূহ ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার দিন রোজা রাখা মুসলমানদের উপর ফরজ ছিল। [(১) তাহাভী : শরহে মায়ানিউল আছার, বাবে ছাওমে ইয়াওমে আশুরা, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১২৯-১৩২)। (২) আইনী : ওমদাতুলকারী শারহে, সহীহিল বুখারী : খন্ড-১১, পৃষ্ঠা-১২১] আর যখন মাহে রমজানুল মোবারকের রোজা ফরজ হল, তখন আশুরার দিনের রোজার ওজুব বকা অপরিহার্যতা মনসুখ বা রহিত হয়ে গেছে। [(১) ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি:) সহীহ গ্রন্থে বর্ণা করেছেন যে, সাইয়্যেদাহ আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেছেন যে, রাসূলে আকরাম (সা.) আশুরার রোজা রাখার হুকুম করতেন। তদুপরী যখন মাহে রমজানের রোজা ফরজ হয়ে গেছে, তাই যে চায় সে আশুরার রোজা রাখতে পারে এবং যে চায় তা নাও রাখতে পারে। [(১) সহীহ বুখারী : কিতাবুস সাওম, বাবুসসিয়ামে ইয়াওমে আশুরা, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৭০৪, বর্ণনা সংখ্যা ১৮৯৭, ১৮৯৮] কোন কোন ব্যক্তির মনে এই সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে যে, আশুরার দিনের ওজুব বা অপরিহার্যতা তো রহিত হয়ে গেছে, তাই, এর আর কোন ফযিলত অবশিষ্ট নেই।
এই সন্দেহের প্রথম জবাব হচ্ছে এই যে, রমজানুল মোবারকের রোজার ফরজিয়তের পর এখন আর কোন রোজার ফরজিয়ত বা অপরিহার্যতা নেই। কিন্তু এতে আশুরার দিন রোজা রাখা হালাল হওয়া সম্পর্কে কোন পার্থক্যই আসে না। কারণ এই রোজার হুকুম রহিত হওয়ার পরও রাসূলুল্লাহ (সা.) একথা বলেননি যে, আমরা তোমাদের চেয়ে মূসা (আ.)-এর বেশী হকদার নই? যেভাবে তিনি রোজা রাখার সময় আমরা তোমাদের চেয়ে হযরত মূসা (আ.)-এর অধিক হকদার বলেছেন অথচ হযরত মূসা (আ.)-এর ঘটনা অতীত হয়ে গিয়েছিল বহুকাল পূর্বেই।
আশুরার রোজার ওজুব বা অপরিহার্যতা রহিত হওয়ার পরও হাদীসসমূহে সে দিনের রোজার ফাযায়েল বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সেদিনের রোজার যে ফযিলত পূর্বে ছিল, তা আজও অব্যাহত আছে এবং থাকবে। কারণ ফাযায়েল কখনো মনসুখ হয় না। হতে পারে না। এ জন্য আশুরার রোজা মনসুখ হওয়ার ব্যাপারটা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালীন (রহ.)-এর প্রমাণ প্রতিষ্ঠার উপর কোন প্রভাবই ফেলতে পারে না। যদি তর্কের খাতিরে তা মেনে নেয়া যায় যে এই রোজার ফযিলতও মনসুখ হয়ে গেছে। তারপরও এর দ্বারা জশনে মীলাদ উদযাপনের ওপর প্রতিষ্ঠিত দলিলের মধ্যে কোনরকম প্রভাব পড়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। কেননা হযরত মূসা (আ.)-এর জন্য সবচেয়ে বেশী খুশি হবে তারাই যারা হযরত মূসা (আ.)-এর উম্মত হওয়ার দাবীদার। কিন্তুু হুজুর কারীম (সা.) এই দিনের রোজার দ্বারা উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার দৃষ্টি এদিকে আকর্ষণ করতে চেয়েছেন বলে ধারণা করা যায় যে, যখন এখন পর্যন্ত মানুষ একজন নবীর বিজয়ের ওপর শোকর আদায় করছে, তখন তোমাদেরও উচিত আমার জন্মদিনের ওপর শরীয়ত সম্মতভাবে অধিক শোকর গুজারী ও আনন্দ প্রকাশ করা। কিন্তু তার প্রজ্ঞাপূর্ণ স্বাভাবিক চিন্তা সরাসরি একথা বলতে সময়োচিত বলে বিবেচনা করেনি যে, ‘আমার মীলাদের দিনও তোমরা রোজা রাখ।’ বরং তিনি সর্বদা প্রত্যেক সোমবারই রোজা রাখতেন। এর কারণ, ঐ সময় পর্যন্ত প্রকাশ করেননি যতক্ষণ পর্যন্ত এ সম্পর্কে কেউ তাকে প্রশ্ন না করেছে। কারোও জিজ্ঞাসা করা ছাড়া এর কারণ বয়ান না করাও তার স্বাভাবিক চিন্তার মুখ্য বিষয় ছিল বলেই তিনি এমনটি করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।