বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ভারতে ‘অচ্ছুৎ’ প্রথার প্রচলন কখন থেকে এবং কে-এর প্রবর্তক, সে ইতিহাস অজানা। তবে গোবাছুর পূজার প্রবর্তক সামেরীর শাস্তি হিসেবে হজরত মুসা (আ:) ঘোষণা করেছিলেন যে, সামেরী ‘অচ্ছুৎ’ (অস্পৃশ্য) তাকে মুসলমান ছুতে বা স্পর্শ করতে পারবে না। বর্ণনা অনুযায়ী, সামেরী ভারতে চলে এসেছিল। সে নিজেকে পবিত্র জ্ঞান করে মুসলমানকে অপবিত্র মনে করতে থাকে এবং সেই এ ‘অচ্ছুৎ’ প্রথার প্রবর্তক বলে অনেকে মনে করেন। হজরত মুসা (আ:) সামেরীকে ‘লা মেসাসা’ ‘অচ্ছুৎ’ ঘোষণা করেছিলেন, যার উল্লেখ কোরআনে রয়েছে। এ ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ:
গোবাছুর নির্মাণ ও তাকে পূজা করার নায়ক ছিল সামেরী নামক এক ইসরাইলী ইহুদি। তার আসল নাম নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলেন, তার নাম ছিল মুসা, কেউ বলেন, সে ছিল কিবতী (ফেরাউন বংশীয়)। ইবনে কাসীরের বর্ণনা অনুযায়ী, ইসরাইলী গ্রন্থাবলীতে তার নাম ‘হারুন’ লেখা আছে। জমহুরের মতে, এ ব্যক্তি হজরত মুসা (আ:) এর যুগের মোনাফেক ছিল এবং মোনাফেকদের ন্যায় ধোকাবাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে মুসলমানদের গুমরাহ ও বিভ্রান্ত করার ধান্দায় লিপ্ত থাকত।, কোনো কোনো তফসির গ্রন্থে উল্লেখ আছে, এ প্রতারকের নাম ছিল ‘মুসা’ এবং সে ছিল কাফের। একজন আরব কবি তার সম্পর্কে বলেছেন: ‘ফা মুসাল্লাজি রাব্বাহু ফেরআনু মুসলিমান, ওয়া মুসাল্লাজি রাব্বাহু জিবরিলু কাফেরান।’ অর্থাৎ ফেরাউন যে মুসার লালন করেন তিনি ছিলেন মোমেন মুসলমান, পক্ষান্তরে জিবরিল (আ:) লালিত মুসা ছিল কাফের।
কাব্বিক ভাষায় কবি জিবরাইল (আ:) কে সামেরীর প্রতিপালক বলেছেন এই অর্থে যে, সে ফেরেশতার ঘোড়ার পায়ের নিচের মাটির টুকরা গোবাছুর নির্মাণে ব্যবহার করেছিল। তখনই বাছুরটি গরুর ন্যায় হাম্বা হাম্বা আওয়াজ করতে থাকে। কোরআনে একে ‘খোওয়ারুন’ বলা হয়েছে। বাংলা ভাষায় গরু বেঁধে রাখার স্থানকে বলা হয় ‘খোয়াড়’।
সূরা ত্বা-হা এর তিনটি আয়াতে সামেরী নামের উল্লেখ আছে এবং তার বক্তব্যও রয়েছে। আয়াতগুলো হচ্ছে- ৮৫,৮৭ ও ৯৫। বিভিন্ন স্থানে গোবাছুরের কথাও আছে। হজরত মুসা (আ:) এর অনুপস্থিতিতে সামেরী গোবাছুর নির্মাণ করত: লোকেদের বিভ্রান্ত করে। মুসা (আ:) তওরাত গ্রন্থ নিয়ে ত‚র পর্বত হতে প্রত্যাবর্তন করার পর সামেরীর জালিয়াতির ঘটনা অবগত হন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন সে এ কাজ করতে গেল? সামেরী বলে (কোরআনের ভাষায়) ‘সে বলল; আমি দেখেছিলাম যা তারা দেখেনি। অত:পর আমি সেই দূতের (ফেরেশতা জিবরাইল) পদ চিহ্ন হতে এক মুষ্টি মাটি নিয়েছিলাম এবং আমি তা নিক্ষেপ করেছিলাম। আমার মন আমার জন্য শোভন করেছিল এই রূপ করা।’ মুসা (আ:) বললেন, ‘দূর হও, তোমার জীবদ্দশায়, তোমার জন্য এটাই ছিল যে, তুমি বলবে আমি অস্পৃশ্য এবং তোমার জন্য রইল এক নির্দিষ্টকাল, তোমার বেলায় যার ব্যতিক্রম হবে না এবং তুমি তোমার সেই ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর যার পূজায় তুমি রত ছিলে, আমরা তাকে জ্বালিয়ে দেই। অত:পর তাকে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে নিক্ষেপ করবই।’ (আয়াত ৯৬-৯৭)
সামেরীর গোবাছুর গড়ার প্রতারণার শাস্তি হিসেবে তার প্রতি মুসা (আ:) এর অভিসম্পাদের অংশ হিসেবে ‘লা মেসাসা’ বলা অর্থাৎ ‘অস্পৃশ্য’ (অচ্ছুৎ) আখ্যায়িত করাকে এ প্রথার সূচনা বলা যেতে পারে। তাকে ছোয়া, তার ছোয়া স্পর্শ করাকে মুসা (আ:) নিষেধ করেছেন। কেননা সে গোবাছুর বানিয়ে তার পূজা আরম্ভ করায় মোশরেক কাফের হয়ে যায় এবং ‘আল মোশরিকু নাজাসুন’- মোশরেক অপবিত্র।
মোট কথা, সামেরীর বক্তব্য শুনে মুসা (আ:) কর্তৃক তাকে ‘অচ্ছুৎ’ বা অস্পৃশ্য বলে আখায়িত করা, তার পূজ্য গোবাছুরকে টুকরা টুকরা করে জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করে তার ছাই সাগরে নিক্ষেপের হুঁশিয়ারি ইত্যাদি, গো পূজার অকাট্য প্রমাণ। ঐতিহাসিকগণ বলেন, সামেরী ভারতবর্ষে চলে যায় এবং ‘অচ্ছুৎ’ সম্প্রদায় তারই বংশধর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।