পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
০৫। ইসলামের পূর্বে আরবদের ব্যবহারিক জীবনে আশুরা উপলক্ষে ঈদ পালন করা হত। বিভিন্ন কারণে আরবরা এই দিনকে ঈদের দিনের মত উদযাপন করত। হুজুর নবী আকরাম (সা.) যখন মদীনায় তাশরীফ আনলেন, তিনি দেখতে পেলেন যে, ইহুদীরা এইদিনে কেবলমাত্র রোজাই রাখে না, বরং ঈদের আনন্দ ও উদযাপন করে। যেমন নিন্মোল্লিখিত হাদীসসমূহ দ্বারা এর প্রমাণ পাওয়া যায়। (ক) ঈমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি:) সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আবু মূসা আশ্য়ারী (রা.) বলেন, আশুরার দিনকে ইহুদীরা ঈদের দিন হিসেবে গণ্য করত। হুজুর নবী আকরাম (সা.) মুসলমানদেরকে হুকুম প্রদান করে বলেছেন, তোমরা অবশ্যই এই দিনে রোজা রাখবে।” [১। সহীহ বুখারী : কিতাবুম সাওম, বাবু সিয়ামে ইয়াওমে আশুরা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭০২, ৭০৫, বর্ণনা সংখ্যা ১৯০১]; (খ) ইমাম মুসলিম (২০৬-২৬১ হি:) ও সহীহ গ্রন্থে হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা.) হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যার ভাষা হচ্ছে এই : ইহুদীরা আশুরার দিনকে সম্মান করত এবং ইহাকে ঈদের দিনের মত উদযাপন করত। সুতরাং হুজুর নবী আকরাম (সা.) (মুসলমানদেরকে) হুকুম দিলেন যে তোমরাও এই দিনে রোজা রাখ। [১। সহীহ মুসলিম : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৯৬, কিতাবুস্্ সিয়াম, বাবু সিয়ামের ইয়াওমে আশুরা, বর্ণনা সংখ্যা ১১৩১; ২। নাসাঈ: আস্সুনানুল কুবরা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৫৯, বর্ণনা সংখ্যা ২৮৪৮; ৩। তাহাভী : শরহে মায়ানেউল আছার, কিতাবুস্্ সাওম, বাবু সাওমে ইয়াওমে আশুরা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৩, বর্ণনা সংখ্যা ৩২১৭;৪। বায়হাকী : আস্্সুনানুল কুবরা, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৮৯, বর্ণনা সংখ্যা ৮১৭৯]; ইমাম তাহাভী (২২৯-৩২১ হি:) এই হাদীসের আলোকে বলেছেন যে, রাসূলে আকরাম (সা.) আশুরার দিন রোজা রাখার হুকুম এজন্য দিয়েছিলেন যে, ইহুদীরা এই দিনে রোজা রাখত। (গ) ইমাম মুসলিম (২০৬-২৬১ হি:) সহীহ গ্রন্থে আবু মূসা আশয়ারী (রা. হতে নিম্নল্লিখিত শব্দাবলী সহযোগে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন : খায়বরবাসীরা আশুরার দিন রোজা রাখত এবং উহাকে ঈদের দিনের মত উদযাপন করত। সেই দিন তারা মহিলাদেরকে অনেক অলঙ্কারাদি পরাত এবং তাদেরকে নানাভাবে সুসজ্জিত করত। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) (মুসলমানদেরকে) বললেন, তোমরাও এই দিনে রোজা পালন কর। [১। সহীহ মুসলিম; কিতাবুস্্ সিয়ামে ইয়াওমে আশুরা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৯৬, বর্ণনা সংখ্যা ১১৩১; ২। আবু নাঈম : আল মুসনাদুল্ মুসতাখরাজু আলা সহীহ ইমাম মুসলীম, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২১২, বর্ণনা সংখ্যা ২৫৭৫; ৩। ইসমাঈলী : মুজামে শুয়ূখে আবি বাকারিল ইসমাঈলী, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৭২২, বর্ণনা সংখ্যা ৩৩৭, ৪। আসকালানী : ফতহুল বারী, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৪৮;] ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি:) এবং ইমাম মুসলিম (২০৬-২৬১ হি:)-এর উপরোল্লিখিত বর্ণনার আলোকে এই বিষয়াদি প্রতিপন্ন হয় যে, (১) আশুরার দিনটি ছিল ইহুদীদের জন্য মুক্তি লাভ ও সফলতা লাভের দিন। তারা সুদূর অতীতকাল হতে আজ পর্যন্ত এই দিনটি খুবই শান সওকতের সাথে উদযাপন করে আসছে। (২) ঈদের দিনটি তাদের নিকট ছিল খুবই মর্যাদাপূর্ণ। তারা এই দিনের সম্মান করত এবং শোকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা স্বরূপ অতিরিক্ত আমল হিসেবে এই দিনে রোজা রাখত। (৩) এই দিনটি শুধু রোজা রাখার ক্ষেত্রেই নির্ধারিত ছিল না। বরং রোজা ছিল একটি অতিরিক্ত আমল, যা এই দিনে পালন করা হত। (৪) এই নিরিখে যদি আজ কেউ ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.) সম্পর্কে আপত্তি উত্থাপন করে বলে যে, রোজা ব্যতীত জশনে মীলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন করা যায়েজ নয়; তাহলে উহা বলা দুরস্ত হবে না এবং এই কথার স্বপক্ষে হাদীসের দ্বারা প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব হবে না। হুজুর নবী আকরাম (সা.) ভালোভাবেই জানতেন যে, আশুরার দিনটি ইহুদীদের নিকট ঈদের দিন। এই জন্য তিনি তাদের ঈদ উদযাপনের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করেননি। বরং তাদের রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন। ইহুদীরা ‘তাজিমান লাহু’ এবং ‘শোকরান লাহু’ বলে তাজীম ও শোকর গুজারীর নিয়তে রোজা রাখার কারণ বর্ণনা করেছে। এতে করে তিনিও এই দিনে রোজা রেখেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও রোজা রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।