Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দুর্গন্ধ সব মসজিদের অজুখানায়

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

একবার আমি একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় সম্মেলনে অতিথি ছিলাম। ইসলামের ওপর দীর্ঘ বক্তৃতার পর উপস্থিত লোকেরা খুবই প্রভাবিত হলেন। আমি বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস, গৌতম বুদ্ধের জীবন, বৌদ্ধ আদর্শ, বাঙালি বৌদ্ধ পন্ডিত অতীশ দীপঙ্কর প্রভৃতি নিয়ে কথা বলেছিলাম। প্রোগ্রাম শেষে একজন দায়িত্বশীল সরকারি নেতা তার বৈঠকি আলোচনায় আমাকে একটি কথা বলে উপস্থিত গণ্যমান্যদের সামনে বেকায়দায় ফেলে দিয়ে কোণঠাসা করতে চাইলেন।
আমার মনে হলো, তিনি শ্রোতাদের মুগ্ধতা বিনাশ করতে এবং আমার বক্তৃতার মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে যাওয়া দাওয়াতের প্রভাব নষ্ট করে দিতেই তিনি এমন করলেন। তিনি জানতে চাইলেন- হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানদের ধর্মস্থানে একরকম পরিচ্ছন্নতা ও নিরবতা ধরে রাখা হয়। পরিবেশ ও অভ্যন্তর সুবাসিত রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আপনাদের উপাসনালয়ে তেমনটি দেখা যায় না। বাগান, ফুলগাছ, ধূপধুনা ইত্যাদি থাকে না, বরং অধিকাংশ উপাসনালয়েই থাকে পেশাব-পায়খানা ও অজুর জায়গা, যেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এমন কেন?
ইসলামের সব কিছুই আমাদের ভালো লাগে, বিশেষ করে আজ আপনার আলোচনায় আমরা সবাই মুগ্ধ। শুধু এ প্রশ্নটিই আমার মনে জাগছে, তাই সবার সামনে জিজ্ঞাসা করে ফেললাম। আপনি যদি সামান্য বুঝিয়ে বলতেন। বৈঠকে পার্বত্য পরিষদ চেয়ারম্যান, দু’জন এমপি, ডিসি-এসপি ছাড়াও অনেক বৌদ্ধ পন্ডিত, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, এনজিওবিদ ছিলেন।
আমি প্রথমেই শুরু করলাম, আমাদের বর্তমান অবস্থা দিয়ে। বললাম, ইসলাম ধর্মে মানুষের ইবাদত ও সৃষ্টির সেবা সমান গুরুত্ব রাখে। জীবন থেকে ইবাদত আলাদা নয়। এ জন্যই প্রথমত নিজের মন-মস্তিষ্ককে পবিত্র করতে হয় ঈমানের মাধ্যমে। এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের মাধ্যমে। কেবল রাসূল সা. এর নিঃশর্ত আনুগত্যের মাধ্যমে।
এখানে মন-মস্তিষ্ক ও চেতনাকে পবিত্র করতে হয় শিরক থেকে, বিদয়াত থেকে। শিরক অর্থ- আল্লাহর সাথে কোনো অংশী নির্ধারণ করা। বিদয়াত অর্থ রাসূল সা. এর দেখানো পথ থেকে সরে যাওয়া। দ্বিতীয়ত হালাল জীবিকার মাধ্যমে নিজের রক্ত-মাংস তথা গোটা শরীর পবিত্র রাখা। এরপর আসে দৈহিক পবিত্রতা। এ জন্য চাই, অজু-গোসল-ইস্তেঞ্জা।
আমাদের ধর্মে উপাসনালয় বলতে মসজিদকেই বোঝায়। এখানে প্রধানত পাঁচবার নামাজ পড়া হয়। নামাজের জরুরি অনুসঙ্গ হচ্ছে পবিত্রতা। যার সাথে মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজনও যুক্ত। তাই, পেশাব-পায়খানা ও অজুখানা ছাড়া মসজিদ পূর্ণাঙ্গ হয় না। এবার আসুন দেশে দেশে মুসলমান জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার আলোচনায়।
পৃথিবীর বহু দেশ এমন আছে, যেখানে মসজিদ মানে একটি মনোরম আধ্যাত্মিক বিনোদন কেন্দ্র। আপনি বলেছেন, বাগান ও ফুলের কথা। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ইত্যাদি স্থানে এমনও হাজার হাজার মসজিদ আছে, যেখানে প্রবেশ করলেই আপনার মনে স্বস্তির আনন্দ, নাকে সুবাস ও গোটা দেহ-মনে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়বে।
আপনি গাড়ি পার্কিং করতে পারবেন, শিশুদের ডে-কেয়ারে রাখতে পারবেন, একটু বড়রা পার্কে খেলাধুলা করতে পারবে, নারীরা মহিলা মসজিদে ইবাদত করতে পারবে, তরুণ-তরুণীরা অডিও-ভিডিও লাইব্রেরিতে জ্ঞানার্জন করতে পারবে, মসজিদে আপনি জামাতে নামাজ, জিকির, তিলাওয়াত সবই করতে পারবেন। অনেক মসজিদে কমিউনিটি সেন্টারও আছে, প্রোগ্রামের জন্য আদর্শ জায়গা।
বিশ্বের শত শত মসজিদ এমন আছে, যার সার্বক্ষণিক সুরভী হয়তো দুনিয়ার সেরা সৌখিন মানুষটিও নিজের জীবনে বহু পারফিউম ব্যবহার করেও এমন অনুভূতি লাভ করতে পারে না। তবে যে দেশ ও সমাজে মসজিদ নির্মাণ রাষ্ট্রীয়ভাবে হয় না, সাধারণ মানুষ আবশ্যকীয় এ ইবাদত পালনের জন্য ৫-১০ টাকা নিজেরা চাঁদা দিয়ে বহু কষ্টে ক্ষুদ্র জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করে। আর এখানেই আগত নামাজিদের অজু-ইস্তেঞ্জার ব্যবস্থাও করে। সেখানে পরিস্থিতি কিছুটা সমস্যাক্লিষ্ট থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
তা ছাড়া অন্য ধর্মে যেখানেই মানব বসতি সেখানেই বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এমন বিধান নেই। সুতরাং অনেক মানুষের জন্য চিন্তাভাবনা করে বড় জায়গা নিয়ে এক-আধটি মন্দির, গির্জা বা প্যাগোডা নির্মাণ বেশ পরিকল্পনা করে করা যায়। আর যেখানে মানুষের আসা-যাওয়াও বছরে দু’য়েকবার। অল্প সময়ের জন্য, বাড়ি থেকে প্রস্তুতি নিয়ে। অনেকটা আমাদের ঈদের দিনের মতো।
কিন্তু মসজিদের বিষয়টি এমন নয়। ৩৬৫ দিন পাঁচবার সবাই মিলে পবিত্র হয়ে নামাজ আদায়, ছোট্ট একটি স্থানে তাও আবার সারা দেশে কমপক্ষে পাঁচ লাখ ইবাদতখানায়। সুতরাং অন্য উপাসনালয়ের সাথে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমারের মসজিদের তুলনা করার সুযোগ নেই। সবদিক মিলিয়ে চিন্তা করলে দেখা যাবে, এসব দেশেও যত্ম করে তৈরি হাজারও মসজিদ এমন আছে যা আদর্শ ও অনুসরণীয়।



 

Show all comments
  • মোঃ জসীম উদ্দিন ১৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১০:৩২ এএম says : 0
    যেমন প্রশ্ন তেমন জবাব। ধন্যবাদ হুজুরকে। আল্লাহ যেন আপনার নেক হায়াত বৃদ্ধি করে দেন এবং আল্লাহ প্রদত্ত উপকারী এলেম বৃদ্ধি করে দেন। যাতে ইসলাম বিদ্বেষীদের দাতভাঙ্গা জবাব দিতে পারেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Siddiqur Rahman ১৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:৩১ এএম says : 0
    চমৎকার লেখা
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল লতিফ ১৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:৩১ এএম says : 0
    দারুন যুক্তি উপস্থাপিত হয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Tuhin ১৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:৩২ এএম says : 0
    Lekhati pore onek valo laglo
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:১২ পিএম says : 0
    Al-Hamdulliah, MasAllalh you are VERY intelligent because you know the Greatest Book from Allah [SWT] and Hadith of The Greatest Man Ever walked on the land our beloved Prophet [SAW] as a result Allah [SWT] gave you the Hekmah to answer their question in a majestic manner that why Allah [SWT] demand that only muslim scholar must rule the country by the Majestic Law of Allah [SWT].
    Total Reply(0) Reply
  • এনামুল হক ১৩ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:১৩ পিএম says : 0
    খুব সুন্দর জবাব, ধন্যবাদ আপনাকে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন