Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বাপেক্ষা নিঃস্ব ও দরিদ্র

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

যদি আল্লাহ কোনো বিকল্প উপায় দান না করেন তবে আল্লাহর স্বাভাবিক আইনে কোনো বান্দার ঋণ বা হক আল্লাহ নিজে ক্ষমা করবেন না। তখন দুনিয়াতে অবহেলা বিশ্বাসঘাতকতা বা জুলুম করে যারা অন্যের পাওনা বা হক নষ্ট করল, আখেরাতে তাদের উপায় কী হবে, ভাবলে অন্তর কেঁপে ওঠে।
মনে রাখতে হবে, দেনা-পাওনা বা হক শুধু নগদ অর্থকড়ি, সম্পদ বা জমি-জমাতেই সীমাবদ্ধ নয়। অপরের জীবন ও সম্মানের সাথেও জড়িত। আমরা যদি অন্যায়ভাবে কারও শারীরিক, মানসিক বা মান-সম্মানের ক্ষতি করি অথবা তার প্রাপ্য নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হই তবুও কিন্তু আমরা ঋণী ও হক বিনষ্টকারী হয়ে আল্লাহর আদালতে হাজির হব এবং ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত ব্যক্তিগণ আমাদের কাছ থেকে এর বদলা আদায় করে নেবেন আমাদের নেক আমল গ্রহণ বা তাদের বদ আমল প্রদানের মাধ্যমে। সুতরাং এ-জাতীয় বিষয়গুলোও দুনিয়াতেই মিটমাট করে নেয়া উচিত।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত অপর হাদীসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কি জানো নিঃস্ব-দরিদ্র কে? সাহাবাগণ বললেন, আমাদের মাঝে যার কোনো টাকা-পয়সা নেই, সহায়-সম্বল নেই।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রকৃত নিঃস্ব-দরিদ্র হবে তারা যারা কিয়ামতের দিন প্রচুর নামায, রোযা, যাকাত নিয়ে হাজির হবে অথচ দুনিয়াতে একে গালি দিয়েছে, ওকে মিথ্যা দোষারোপ করেছে, অমুকের সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করেছে, অমুকের রক্ত ঝরিয়েছে, অমুককে মারধর করেছে, এদের সকলকে তার নেক আমল দিয়ে দাবি-দাওয়া, অন্যায়-অত্যাচার শোধ করা হবে। যদি দেখা যায় সকলের দাবি-দাওয়া সমাধানের আগেই তার সব নেকী শেষ হয়ে গেছে তবে এ ক্ষেত্রে মজলুম-বঞ্চিতদের পাপরাশি তার আমলনামায় দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। -সহীহ মুসলিম
হাদীসটিতে নগদ অর্থ-সম্পদের বাইরেও মানুষের নিরাপত্তা ও সম্মানের হক বিনষ্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ অবৈধ ও অন্যায়ভাবে মানুষের যেকোনো ক্ষতিসাধন করলেই বা মানসিক-শারীরিকভাবে যেকোনো কষ্ট দিলেই হক নষ্টকারী পাপী হিসাবে গণ্য হতে হবে। আর দুনিয়াতেই এর মীমাংসা সমাধান বা ক্ষমার ব্যবস্থা না করতে পারলে আখেরাতে এর ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতেই হবে। হায়! আমরা যদি আসলেই চিন্তা করে দেখতাম, জীবনের নানা বাঁকে কতভাবেই না কতজনের হক আমাদের দ্বারা নষ্ট হয়ে যায়।
ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কতজনের কাছেই না আমরা ঋণী হয়ে পড়ি। অথচ আমাদের পথপ্রদর্শক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ বিষয়ে কত ভাষায় ও কতভাবেই না উপদেশ ও ভয় প্রদর্শন করে গেছেন। আমরা কি তাঁর এসব বাণীকে সত্যিই গ্রহণ করতে পেরেছি? আমরা কি তাঁর এইসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে আদৌ অনুসরণ করতে পেরেছি? এগুলো কি তাঁর সারাজীবনের সুন্নত নয়?
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সারাটি জীবনে অন্যায়ভাবে মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মানের সামান্যতম ক্ষতি করেননি। এরচেয়ে বড় সুন্নত আর কী হতে পারে? কিন্তু আমরা শুধু তাঁর লেবাসি সুন্নতেই সীমাবদ্ধ থাকি। যখন অধিক আত্মতৃপ্তিতে ভুগি আর অন্যকেও শুধুমাত্র বাহ্যিক সুন্নত দিয়েই মূল্যায়ন করি তখন এরচেয়ে ভনিতা আর কী হতে পারে? এ আমাদের দুর্ভাগ্য বটে।



 

Show all comments
  • Ameen Munshi ১২ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৫ এএম says : 0
    Beautiful write up
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ১২ নভেম্বর, ২০১৮, ২:০২ এএম says : 0
    লেখাটিতে জান্নাতকামী মুসলিমদের জন্য গুরুতর শিক্ষা রয়েছে। ধন্যবাদ লেখককে
    Total Reply(0) Reply
  • রাকিব ১২ নভেম্বর, ২০১৮, ২:০৭ এএম says : 0
    হে আল্লাহ, বান্দার হক আদায়ের তৌফিক দাও।
    Total Reply(0) Reply
  • Bashir ১২ নভেম্বর, ২০১৮, ২:০৮ এএম says : 0
    লেখাটিতে জালিম শাসকদের জন্য কঠিন শিক্ষা রয়েছে। কিন্তু কয়জন শিক্ষা গ্রহণ করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • কবির ১২ নভেম্বর, ২০১৮, ২:১৮ এএম says : 0
    আজকে যারা দুর্বলদের ওপর জুলুম করছেন তারাই সেদিন সবচেয়ে নি:স্ব হবেন। অতএব জালেমরা সাবধান!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Zakir Hossain ১২ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৪৫ এএম says : 0
    জীবন ঘনিষ্ঠ লেখা, চিরন্তন সত্য, হে আল্লাহ আমাদের সবাইকে মেনে চলার তৌফিক দান করুন, আমীন
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar ১২ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:০৫ এএম says : 0
    নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রকৃত নিঃস্ব-দরিদ্র হবে তারা যারা কিয়ামতের দিন প্রচুর নামায, রোযা, যাকাত নিয়ে হাজির হবে অথচ দুনিয়াতে একে গালি দিয়েছে, ওকে মিথ্যা দোষারোপ করেছে, অমুকের সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করেছে, অমুকের রক্ত ঝরিয়েছে, অমুককে মারধর করেছে, এদের সকলকে তার নেক আমল দিয়ে দাবি-দাওয়া, অন্যায়-অত্যাচার শোধ করা হবে। যদি দেখা যায় সকলের দাবি-দাওয়া সমাধানের আগেই তার সব নেকী শেষ হয়ে গেছে তবে এ ক্ষেত্রে মজলুম-বঞ্চিতদের পাপরাশি তার আমলনামায় দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। -সহীহ মুসলিম
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন